নারীবাদী উক্তি , নারীবাদী বই ও কবিতা। ফেমিনিজম কাকে বলে এর জনক কে? নারীবাদী লেখা সাহিত্য, সমালোচনা, নারীবাদী তত্ত্ব সংগঠন ইত্যাদি।
( পোস্টের লেখা এবং ছবি আলাদা আলাদা । লেখার সাথে ছবি না মিলাতে অনুরোধ করছি। যদিও ছবি গুলো নারীবাদী টপিক নিয়েই!!)
A critique of Feminism
বর্তমানে সবচেয়ে বহুল আলোচিত মতাদর্শগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ফেমিনিজম। ফেমিনিজমের সাধারণ ডেফিনিশন হলো- নারী ও পুরুষের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার অর্জন ও পুরুষতন্ত্র সম্পূর্ণ নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে যে সোশিও-পলিটিকাল মুভমেন্ট কাজ করে তাকে ফেমিনিজম বলে। এইখানে সাধারণভাবে বর্তমান মেইন্সট্রিমে যে ফেমিনিজমের প্রচারণা করা হয় সেটার ব্যাপারে লিখবো। কিছুদিন পরপরই ফেমিনিজম নিয়ে কোনো একটা ইস্যু চলেই আসে তাই একবারে পুরো বিষয়টা ব্যাখ্যা করবো। ফেমিনিজম নিয়ে শর্টে আলোচনা করলে অনেককিছু বাদ পরে যায় তাই কম্প্রিহেনসিভ ক্রিটিসিজম করার জন্য পোস্টটা একটু বড় করা হয়েছে।
Problem of Complexity:-
লিবারাল ফেমিনিজম সমতার নীতিকে অ্যাবসোলিউট অলঙ্ঘনীয় হিসেবে বিশ্বাস করে অর্থাৎ প্রত্যেক ক্ষেত্রে সমানভাবেই অধিকার দিতে হবে, এই নীতিকেই দাবি করে। তাহলে প্রথমত ইকুয়ালিটি কেন সর্বক্ষেত্রে অ্যাবসোলিউট কিছু না বা অলঙ্ঘনীয় না সেটা প্রমাণ করা প্রয়োজন।
দার্শনিক John R. Lucas এর ''Against Equality'' ও “Against Equality Again”-এ এবং Nicholas Rescher এর Distributive Justice. A Constructive Critique of the Utilitarian Theory of Distribution- এ সমতার কনসেপ্টের বিরুদ্ধে Problem of Complexity ব্যাখ্যা করা হয়। নৈতিকতা- ভালো-খারাপ- অধিকার নির্ধারণ অনেকগুলো ভ্যালু এবং নীতি বিবেচনা করে করা হয়, ভালো-খারাপ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইকুয়ালিটি একমাত্র কনসেপ্ট না। ইকুয়ালিটি কোনো অ্যাবসোলিউট বিষয় না, কোনো এথিকাল থিওরি স্রেফ একটা কনসেপ্ট দিয়ে তৈরি করলে সেটা সমস্যাজনক।
প্রিন্সিপাল অফ মেরিট, প্রিন্সিপাল অফ কোয়ালিফিকেশান ইত্যাদি নীতি অনেক সময়ই প্রিন্সিপাল অফ ইকুয়ালিটির চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়।অনেক এথিকাল থিওরিতেই সমানাধিকারের কথা বলা হয়, ইকুয়ালিটিকে মোরাল ভ্যালু গণ্য করা হয় কিন্তু অন্যান্য মোরাল ভ্যালুর জন্য অনেক সময় বিভিন্ন ফ্যাক্টর বিচার করে ইকুয়ালিটির বিপরীতে কাজ করা হয় যাতে ইকুইটি নিশ্চিত করা যায়।
সবাইকে সবকিছু সমানভাবে দেয়া হচ্ছে ইকুয়ালিটি এবং যে যেটা পাওয়ার 'যোগ্য' তাকে সেটা দেয়া হচ্ছে জাস্টিস।এমন কোনো ফ্যাক্ট নেই যে, সবাই শারীরিক পার্থক্য, লিঙ্গভেদে সবসময়ই সমানভাবে সবকিছু পাওয়ার যোগ্য হবে। যোগ্যতা আর সক্ষমতার পার্থক্যের জন্য অসমানভাবে কিছু ক্ষেত্রে আচরণ করা যায় আবার অন্য কোনো ভ্যালু রক্ষার জন্য সমতার লঙ্ঘন করা যায়।
যেমন- একজন অপরাধীকে যখন জেলে দেয়া হয় তখন সমাজের সাধারন মানুষের সাথে তার ইকুয়ালিটি লঙ্ঘন হয় কিন্তু সমাজে সেইফটি ও ভিক্টিমের রিটালিয়েশানের ভ্যালু রক্ষা হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী মানুষকে বিভিন্ন কাজে নিয়োগ দেয়া হয় না, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে এয়ার ফোরসে নেয়া হয় না, এতে করে ইকুয়ালিটি লঙ্ঘন হয় কিন্তু মেরিট বা যোগ্যতার নীতি ঠিক থাকে। লিঙ্গের ভিত্তিতে ইনইকুয়াল কিন্তু স্বাভাবিক আচরণের উদাহরণ বর্তমানেই অনেক আছে। বর্তমানে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৮-৬০ বছর বয়সী পুরুষদের ইউক্রেন ত্যাগের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, এডাল্ট পুরুষ সবাইকে বাধ্যতামূলক যুদ্ধ করতে বলা হয়েছে। পুরুষের শারীরিক ক্ষমতা এবং দেশ,নারী-শিশুদের রক্ষা করার সামাজিক দায়িত্ব থাকার কারণে এই আইন করা হয়েছে। এখানে ইকুয়ালিটি লঙ্ঘন হয়েছে কিন্তু পুরুষের সুরক্ষা প্রদান করার নৈতিক দায়বদ্ধতা, রাষ্ট্রীয় সিকিউরিটির ভ্যালু- রক্ষা হয়েছে। এখানে, নারীদের জন্য যুদ্ধ বাধ্যতামূলক করা হয়নি, সমানাধিকার-ইকুয়ালিটি নিশ্চিত হয়নি কিন্তু মেইন্সট্রিমের কোনো নারীবাদী নেই যে এই আইনের বিরোধিতা করেছে।
সমতা সবসময় সবার জন্য, এমনকি নারীদের জন্যও জাস্টিস দিতে পারবে এমন কোনো প্রমাণ নেই। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে নৈতিকতা কমপ্লেক্স ফ্যাক্টরের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় এবং অন্যান্য নীতির কারণে সমতার নীতির লঙ্ঘন করা যেতে পারে, তাই সমতা অ্যাবসোলিউট কিছু না যেমনটা ফেমিনিজম দাবি করে।
Problem of Equality:-
লিবারাল ফেমিনিজমের একটা মূল কনসেপ্ট হচ্ছে-ইকুয়ালিটি, নারী ও পুরুষকে সর্বক্ষেত্রে সমানভাবে দেখা এবং সমান অধিকার দেয়া। কনসেপ্টটা প্রথমে শুনতে বেশ ভালো লাগলেও একটু চিন্তা করলেই কিছু বড় সমস্যা বের হয়ে আসে।
প্রথমত, নারী এবং পুরুষ সমান না, নারী এবং পুরুষের মধ্যে বায়োলজিকাল অনেক পার্থক্য আছে। নারী-পুরুষ উভয়েরই ক্ষেত্র অনুসারে বায়োলজিকাল অ্যাডভানটেজ আছে, এখানে নারী বা পুরুষ কাউকেই মানুষ হিসেবে ছোট করা হচ্ছে না, স্রেফ সায়েন্টিফিক ফ্যাক্টের ভিত্তিতে পার্থক্য বলা হচ্ছে।
যেমন-
হরমোনাল পার্থক্যের কারণে গড়ে পুরুষের শারীরিক ক্ষমতা নারীর চেয়ে বেশি, এইজন্যই এথলেটদের মধ্যে পুরুষ এবং নারী আলাদা করা হয় যাতে পুরুষরা এক্সট্রা অ্যাডভানটেজ না পায়।(Circulating Testosterone as the Hormonal Basis of Sex Differences in Athletic Performance, David J Handelsman )[1]
Glasgow Caledonian University-এর Pamela Andrews এবং Teesside University-এর Mark A Chen এর গবেষণায় ৪৭৮ জন নারী ও পুরুষ দৌড়বিদের উপর গবেষণা করা হলো পুরুষের টোটাল এবং যৌথ মানসিক শক্তি, আত্মবিশ্বাস ও কাজের প্রতি পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নারীর চেয়ে বেশি।পরিস্থিতি মোকাবেলার ধরণও তাদের ভিন্ন পুরুষ পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছে আরও বেশি করে কাজে লেগে থেকে (task orientated coping) কিন্তু বেশিরভাগ নারীরা কাজ থেকে দূরে থেকে বা একেবারে ছেড়ে দিয়ে (disengagement and resignation coping) পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছে বা উত্তোরণের চেষ্টা করেছে।(Gender Differences in Mental Toughness and Coping with Injury in Runners, Journal of Athletic Enhancement)[2]
Nature-এর গবেষণায় ৮০,৯২৮ জন পার্টিসিপেন্ট নিয়ে Progressive Raven's Matrices ব্যাবহার করে রিসার্চ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, নারীদের গড় আইকিউ পুরুষদের চেয়ে ৪.৬ পয়েন্ট কম (Is there a sex difference in IQ scores?, Nature)[3]
পোস্ট মনোপজ বাদে নারীদের মনে রাখার ক্ষমতা সাধারণ ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে বেশি(Who has the better memory, men or women? NAMS)[4]
স্ট্রেস বাড়লে টেস্টোস্টেরন হরমোনের কারণে পুরুষের বেপরোয়া বা রিস্কি সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রবণতা নারীদের চেয়ে বেশি.(Cortisol boosts risky decision-making behavior in men but not in women, psychoneuroendocrinology)[5]
পুরুষের নিজের যৌন ইচ্ছার উপর নিয়ন্ত্রণ নারীর চেয়ে কম।(Is There a Gender Difference in Strength of Sex Drive? Roy F. Baumeister)[6]
গড়ে পুরুষের চেয়ে নারীদের করুণা-মমত্ববোধের পরিমাণ বেশি। অক্সিটোসিনের কারণে নারীদের স্নেহের আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে(Girls exhibit greater empathy than boys, Nature)[7]
নারীদের হিমোগ্লোবিন কম থাকায় হাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতা পুরুষের চেয়ে বেশি।বেশি গরম ও বেশি ঠাণ্ডায় পুরুষদের তুলনায় নারীদের নেগেটিভ প্রভাব বেশি পরে।[8]
স্টেসে থাকা নারীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির পরিমাণ স্ট্রেসে থাকা পুরুষের চেয়ে বেশি।[9]
অতিরিক্ত পরিশ্রম অনেক ক্ষেত্রে নারীর বন্ধ্যা হওয়ার কারণ হয়।[10]
প্রায় ৯০% নারী Premenstrual syndrome (PMS) এ ভোগে, যার ফলে সামাজিক পারফর্মেন্সে কমতি আসে।[11]
এগুলোসহ অসংখ্যা পার্থক্য আছে নারী এবং পুরুষের মাঝে যেটা এভিডেন্স দ্বারা প্রমাণিত। প্রত্যেকটা ফ্যাক্টের জন্য আলাদা রিসার্চ পেপারগুলো রেফারেন্সে দিয়ে রাখছি এবং লিঙ্ক কমেন্টে দিচ্ছি।অনেকগুলো রেফারেন্স ডা শামসুল আরেফিন শাক্তি ভাইয়ের লেখা থেকে নেয়া।
এখানে মূল পয়েন্ট হচ্ছে নারী-পুরুষ যদি শারীরিক-মানসিক সবক্ষেত্রে সমান না হয় তাহলে তাদের কেন সমানভাবে ট্রিট করা লাগবে সবক্ষেত্রে।
কমন সেন্স লজিক থেকেই, দুইটা অসমান সাবজেক্টকে আমরা কখনোই সবক্ষেত্রে সমানভাবে দেখি না বা সবসময় সমান আচরণ করি না, তাহলে কেন অসমান হওয়ার পরও সবক্ষেত্রে নারী ও পুরুষকে সমান অধিকার দিতে হবে, কোনো এক্সসেপশান রাখা যাবে না। ইকুয়ালিটির কনসেপ্টটা যে ধ্রুব সত্য সেটার প্রমাণ কি, ইকুয়ালিটি যে সবসময় ইকুইটি বা জাস্টিস আনে সেটারই বা প্রমাণ কি।
আমরা অনেক সময় ইনইকুয়াল আচরণকে বৈধতা দেই বিভিন্ন বড় ফ্যাক্টর বিবেচনা করে যেমন- বয়স,এক্সপেরিয়েন্স, দক্ষতা, শারীরিক ক্ষমতা ইত্যাদি। একইভাবে লিঙ্গও সেরকম ফ্যাক্টর হতে পারে কারণ লিঙ্গভেদে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অনেক বড় পার্থক্য থাকে। ইকুয়ালিটির লঙ্ঘন করা সবসময় খারাপ কিছু না, অনেক ক্ষেত্রেই করা হয়ে থাকে। সমতার নীতি তাই ধ্রুব সত্য হিসেবে ভাবার কারণ নেই।
Levelling down objection:-
ফেমিনিজম শুধুমাত্র ইকুয়ালিটিতে ফোকাস করে, ইকুয়ালিটিকে ফেমিনিজম জাস্টিস অর্জনের একমাত্র বিষয় বলে মনে করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, থিওরিটিকালি কোনো সমাজে সম্পূর্ণ ইকুয়ালিটি থাকার পরও সেই সমাজটা জাস্টিসবিহীন হতে পারে, সমতা এবং ন্যায়বিচার তাই আলাদা বিষয়। এটা সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা যায় Derek Parfit এর ‘Levelling down objection’ থেকে। সমতা অনেক ক্ষেত্রে একটা বড় অংশের মানুষের প্রতি অন্যায় করার মাধ্যমেও অর্জন করা সম্ভব। অধিকারের লেভেল আপ করার বদলে বাকি সবার অধিকার কেড়ে নেয়ার মাধ্যমেও সমতা অর্জন সম্ভব, সেক্ষেত্রে সমতা হয় কিন্তু ন্যায় হয় না।
Derek Parfit এর ভাষায়, '' আমরা অন্ধদের সমতা প্রদান করার জন্য চোখে দেখতে পাওয়া সবার চোখ উপড়ে ফেলতে পারি। স্রেফ সমতাভিত্তিক বিচারে এই সমাজ বর্তমান সমাজ থেকে বেশি ন্যায্য কারণ এখানে অসমতার পরিমাণ কম। আবার এই সমাজের কোনো ধনী ব্যাক্তি যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিজের সম্পদ হারিয়ে সমাজের অন্যদের মতো দরিদ্র হয়ে যায় তাহলে আমাদের খুশি হওয়া উচিত কারণ সমাজে সমতা আরও বাড়ছে।কিন্তু আমরা এইসব অবস্থাকে খারাপ বলেই মনে করি কারণ সমতা মানেই ন্যায় না, শুধুমাত্র অসমতা মানেই অন্যায় না।''
এখানে মূল পয়েন্ট হচ্ছে, সমতা নেগেটিভ ভাবেও অর্জন করা সম্ভব এবং শুধুমাত্র সমতাভিত্তিক নৈতিকতায় এটাকে বৈধতা দেয়া হয়।ফেমিনিজম নারী এবং পুরুষের সমতার কথা বলে অর্থাৎ ফেমিনিজম কোনো সমাজে শুধু পুরুষের সমান অধিকার দাবি করে।সমস্যা হলো অনেক ক্ষেত্রে সমাজে পুরুষরাই অনেক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বা তারা যেসব 'অধিকার' ভোগ করে সেগুলো আসলে ক্ষতি বয়ে আনে, ফেমিনিজম সেক্ষেত্রে ''পুরুষের সমান অধিকার'' স্ট্যান্ডার্ড গ্রহণ করার জন্য অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়, ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষের সমান হতে গিয়ে নারীর জন্য ক্ষতি নিয়ে আসে। আরও বড় সমস্যা হলো- ফেমিনিজমের ইকুয়ালিটিভিত্তিক নৈতিক মানদণ্ড গ্রহণ করলে কিন্তু অ্যাবসার্ড থিওরিটিকাল ফলাফল আসে, যেমন- যে সমাজে স্রেফ পুরুষরা যথেষ্ট শিক্ষার অধিকার পায় সেই সমাজ থেকে যে সমাজে নারী-পুরুষ উভয়ই যথেষ্ট শিক্ষার অধিকার পায় না সেই সমাজ ভালো কারণ এখানে ইনইকুয়ালিটি কম।
Leveling Down Objection কিছু বাস্তব উদাহরণ থেকেই ভালোভাবে বোঝা যায়-
১৯২৯ সাল, তখন আমেরিকায় নারীদের ধূমপান করা ট্যাবু ছিল। তখন অ্যামেরিকান টোবাকো অ্যাসোশিয়েশনের প্রধান জর্জ হিল, এডওয়ার্ড বার্নেইসের মাধ্যমে নতুন ক্যাম্পেইন শুরু করলো। অ্যাড ক্যাম্পেইন শুরু হল- টর্চেস অফ ফ্রিডম, মুক্তির মশাল।
বার্নেইস সিগারেটকে উপস্থাপন করলেন নারীর মুক্তি এবং পুরুষের সমান হবার প্রতীক হিসেবে।পুরুষরা যদি রাস্তায় বুক ফুলিয়ে সিগারেট টানতে পারে, নারীরা কেন পারবে না? এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের তৈরি ট্যাবু ছাড়া আর কিছুই না, নারীর ধূমপান করতে না দেয়া স্রেফ সেক্সিজম, তাই পাবলিক প্লেইসে নারীর ধূমপান এক ধরনের বৈপ্লবিক কাজ। এতে নিছক সিগারেট ফোকা হচ্ছে না, বরং এটা হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।তাই নারীর হাতে ধরা সিগারেট আসলে তার মুক্তির মশাল।
তখন ফেমিনিজম নারীদের ''পুরুষের মতো ধূমপানের অধিকার'' অর্জনের ক্যাম্পেইন করলো। ১৯২৯ সালের ইস্টার সানডে-র দিন দশ জন সুসজ্জিত তরুনীকে জ্বলন্ত সিগারেট হাতে গর্বিত ভঙ্গিতে নিউইয়র্কের ফিফথ অ্যাভেনিউতে মার্চ করতে দেখা গেল। এদের বলা হলো মুক্তির মশাল হাতে মুক্ত নারী।
বিষয়টা এমন ছিল, নারীদের ক্যান্সার হবে হোক কিন্তু তারপরও পুরুষের সমানই হতে হবে, সেক্সিজম ক্যান্সার থেকেও খারাপ। নারীদের ক্যান্সার হলেও সমস্যা নাই, পুরুষতন্ত্র নির্মূল হলেই হলো। পুরুষের সমান অধিকার অর্জন করার লক্ষ্যে এটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হলো যে পুরুষের এই অধিকার পুরুষকে স্রেফ ক্ষতিগ্রস্থ করছিল।( The Cigarette Century. New York: Basic Books, Brandt, Allan M.)
ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট অনেক ক্ষেত্রে ক্যাপিটালিজমের সমর্থনে লাভজনক প্রজেক্ট হিসেবে কাজ করে এসেছে। পুঁজিবাদী পশ্চিম ও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যখন স্নায়ুযুদ্ধ চলে তখন পশ্চিমে পুঁজিবাদের প্রোমোশনে ফেমিনিজম কাজে লাগে। তখন বিখ্যাত পোস্টার বানানো হয়েছিল "We Can Do It!", ১৯৪৩ সালে বানিয়েছিলেন J. Howard Miller নারী কর্মীদের উৎসাহ ধরে রাখার জন্য। আরেকটা বিখ্যাত ক্যারেক্টার তৈরি করা হয়েছিল যার নাম Rosie the Riveter, আমেরিকায় অস্ত্র ও সামরিক ফ্যাক্টরি এবং অন্যান্য কারখানায় কর্মরত নারীদের গ্লোরিফাই করে একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছিল।
অর্থাৎ, তখন থেকেই পুঁজিবাদী সিস্টেমের বিরোধিতার পরিবর্তে পুঁজিবাদী সিস্টেমের মধ্যে স্বল্প বেতনে কাজ করাকে নারীমুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়, যা এখনও চলছে। যেসব নারীরা অর্থাভাবের জন্য বাধ্য হয়ে কাজ করে সেটার কনটেক্সট সম্পূর্ণ আলাদা। গৃহিণী নারীদের আগাছার মতো মনে করা, বিয়েকে পুরুষের দাসত্ব মনে করা, মাতৃত্বের গ্লোরিফিকেশানের বিরোধিতা করা, কর্পোরেশনের শোষনমুলক দাসত্বকে ''নারীমুক্তি'' বলে প্রচার করা সবকিছুই ক্যাপিটালিজমকে লাভ দেয়, এই ন্যারেটিভ দাঁড়ায় যে ক্যাপিটালিজমের মাধ্যমেই নারীমুক্তি হচ্ছে।
পুরুষের মতো তখন নারীরাও ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেমে শোষিত হয় কিন্তু তারপরও ফেমিনিজমের সমর্থন থাকে কারণ এক্ষেত্রে পুরুষের মতো সমানভাবে কাজ করা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে ফেমিনিজমের কিছু বলার নাই কারণ এখানে নারী ও পুরুষ সমানভাবে শোষিত হচ্ছে, ''নারী-পুরুষের সমতা'' অর্জন হচ্ছে।
Cambridge University-এর gender studies-এর প্রোফেসর Nancy Fraser লেখেন—
পুরুষ জীবিকা উপার্জন করবে, নারী ঘর সামলাবে— এই পরিবার কাঠামো (male breadwinner-female homemaker family) ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত পুঁজিবাদের কেন্দ্রবিন্দু। নারীবাদের নামে আমরা এই কাঠামোটার সমালোচনা করেছিলাম। এই সমালোচনা এখন কাজে লাগাচ্ছে কর্পোরেট বেসরকারী পুঁজিবাদ (flexible capitalism)। কেননা বেসরকারি পুঁজিবাদ নির্ভরই করে নারীর শ্রমের উপর, বিশেষ করে সেবা ও শিল্প খাতে নারীর কমমূল্যের শ্রমের উপর।
এই শ্রম কেবল তরুণী অবিবাহিতারা দেয় তা না, বরং বিবাহিতা ও মায়েরাও দিচ্ছে। কেবল কট্টর নারীবাদীরাই দেয় তা না, বরং সব জাতির মেয়েরাই দিয়ে চলেছে। সারা দুনিয়াতেই যেহেতু মেয়েরা শ্রমবাজারে বানের মত আসছে, আগের সেই পরিবার কাঠামো বদলে হয়েছে, ‘দুই রোজগেরে’ পরিবার (two-earner family), নারীবাদের কারণে।(How feminism became capitalism's handmaiden - and how to reclaim it, Nancy Fraser) এই ব্যাপারে বিস্তারিত বইও লিখেন-Feminism, Capitalism, and the Cunning of History নামে।
অর্থাৎ, ফেমিনিজম নারী ও পুরুষের সমতা অর্জন করছে ধনী ও দরিদ্রের অসমতা তৈরি করা সিস্টেমকে সহায়তা করে। মার্ক্সিস্ট ফেমিনিস্টরা পুঁজিবাদের বিরোধিতা করলেও দিনশেষে তারা মূলধারার মুভমেন্ট হয়ে উঠতে পারে না, পশ্চিমা লিবারাল ফেমিনিস্টরাই তাদের বিরোধিতা করে। সেটা করাই স্বাভাবিক কারণ ফেমিনিজমের মূল স্ট্যান্ডার্ডই পুরুষের সমতা, পুরুষ যদি ''কর্মের অধিকার'' নিয়ে কর্পোরেট সিস্টেমে শোষিত হয়ে থাকে, সমতা অর্জনের জন্য নারীরাও সেভাবে যাওয়া উচিত।এভাবে ''পুরুষের সমান অধিকার'' অর্জনকে স্ট্যান্ডার্ড বানিয়ে ফেমিনিজম কাজ করতে গিয়ে যেসব ''অধিকার'' পুরুষকে ক্ষতিগ্রস্থ করছিল সেগুলোকেও নারীদের সাথে নিয়ে আসে। লেভেল আপ করার বদলে লেভেল ডাউন করার মাধ্যমে সমতা অর্জন হয় কিন্তু ন্যায় অর্জন হয় না।
Dilemma of Rights:-
একটা বিষয় বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ-''নারীবাদ'' এবং ''নারী অধিকার'' সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।আমি নারী অধিকার সমর্থন করি তার মানেই আমি নারীবাদী না, ''নারী অধিকার'' একটা মোরাল ভ্যালু যা বিভিন্ন নৈতিকতার মানদণ্ড বিভিন্নভাবে ডিফাইন করে।''অধিকার'' এর ধারণা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিতর্কিত হয়ে আসছে, লিবারালিজমের অধিকারের সংজ্ঞা একরকম,ইসলামে অধিকারের সংজ্ঞা আরেকরকম,ইউটিলিটারিয়ানিজমে অধিকারকে একভাবে ডিফাইন করা হয়, ডিওন্টোলজিতে আরেকভাবে ডিফাইন করা হয়, কোনটাই এক জিনিস না, এখানে প্রত্যেকটা দর্শনই ''নারী অধিকার'' প্রদান করে বলে দাবি করবে কিন্তু প্রত্যেকের নারী অধিকারের সংজ্ঞা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
নারীবাদ যখন নারী অধিকারের কথা বলে তখন বোঝা দরকার নারীবাদ কোন নৈতিক স্ট্যান্ডার্ডের নারী অধিকারের কথা বলে, যেহেতু বিভিন্ন দর্শন নারী অধিকারকে বিভিন্নভাবে ডিফাইন করে।
নারীবাদ একটা বিশেষ দর্শনের নারী অধিকারকে সমর্থন করে, একটা নির্দিষ্ট নৈতিক মানদণ্ডকে সত্য মনে করে।মেইন্সট্রিম ফেমিনিস্টরা মুলত পশ্চিমা লিবারালিজমের দর্শনকে গ্রহণ করে নারী অধিকারকে ডিফাইন করে। লিবারালিজমে একজন মানুষের মূল অধিকার ''স্বাধীনতা'', যতক্ষণ কেউ অন্য কারোর ক্ষতি না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ যা ইচ্ছা করতে পারে, এটাই তার অধিকারের সংজ্ঞা, একে বলে হার্ম প্রিন্সিপাল।নারী অধিকার এভাবেই ডিফাইন করা হয় যে, নারী নিজের উপর সার্বভৌম, এখান থেকেই ''আমার শরীর আমার সিদ্ধান্ত(my body my rules)''-এর বিখ্যাত দাবি আসে।হার্ম প্রিন্সিপালের সমস্যার ব্যাপারে আলাদাভাবে বিস্তারিত লিখেছি আগেই, সেটা চেক করতে পারেন।[12] এখানে স্রেফ কিছু ধারণা দেই।
প্রথমত, নারীর নিজের শরীর নিয়ে যা ইচ্ছা করার পূর্ণ অধিকার আছে যতক্ষণ না অন্য কারোর ক্ষতি হচ্ছে, এই দাবির প্রেমিজটাই ভুল। নারী নিজের শরীরকে নিজে সৃষ্টি করে নাই, নিজের শরীর সৃষ্টির জন্য কোনো এফোর্টও দেয় নাই, এটা তার অর্জন না স্রেফ জন্মসূত্রে পাওয়া ব্যাপার, স্রস্টা তৈরি করে জন্মের সাথে দিয়ে দিয়েছে। যেটা একজন মানুষ সৃষ্টি করে নাই, সৃষ্টি করার জন্য কোনো এফোর্টও দেয় নাই, যেটা তার অর্জন না সেটার উপর তার অথোরিটি নাই, সেটা নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করার অধিকার মানুষের থাকতে পারে না। মানুষের শরীরের উপর সম্পূর্ণ অথোরিটি আছে সৃষ্টিকর্তার, নারীর তাই ইচ্ছাস্বাধীনভাবে চলা যাবে না, সৃষ্টিকর্তা যেই নিয়মে চলতে বলেছে সেই নিয়মে চলতে হবে। এখন কেউ
স্রস্টার অস্তিত্বকে ডিনাই না করলে ফেমিনিজম,লিবারালিজম সত্য হওয়া সম্ভব না। আবার কেউ যদি স্রস্টার অস্তিত্বকে ডিনাই করে তাহলেও সমস্যা থাকে। তখন তার শরীর Random-ভাবে পাওয়া, একটা Random-ভাবে পাওয়া কোনকিছুর উপর পূর্ণ অথোরিটি মানুষ কিভাবে রাখে।যেমন- রাস্তায় Random-ভাবে কোনো মৃত মানুষের টাকা খুঁজে পেলে সেটার উপর আমার অথোরিটি চলে আসে না।
দ্বিতীয়ত- অধিকারের এই সংজ্ঞা সম্পূর্ণ প্রমাণহীন, কেন অধিকারের এত সংজ্ঞা থাকার পরও এই সংজ্ঞাটাই মেনে নিতে হবে, কেন এই সংজ্ঞাটাই ঠিক এর কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয় না। ''যতক্ষণ কেউ অন্য কারোর ক্ষতি না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ যা ইচ্ছা করতে পারে''- এই ধারণাটা পশ্চিমা সংস্কৃতি বাদে পৃথিবীর বেশিরভাগ সংস্কৃতিই মানে না, প্রমাণ কি যে শুধু লিবারালিজমই ঠিক বাকি সব ভুল। ধর্মভিত্তিক নৈতিকতা প্রচার করতে গেলে প্রশ্ন করা হয় তোমার ধর্মই ঠিক প্রমাণ কর কিন্তু লিবারাল নৈতিকতার ক্ষেত্রে এই দাবি কমই করা হয় যে লিবারালিজম সত্য সেটা প্রমাণ কর। কোনোরকম প্রমাণ ছাড়াই লিবারাল ফেমিনিজমকে সঠিক বলে ধরে নেয়ার কোনো অর্থ নেই।
Anti Religion and Anti Culture beliefs:-
আগেই ব্যাখ্যা করেছি, ফেমিনিজমের নারী অধিকারের সংজ্ঞাটা পশ্চিমা লিবারালিজম অনুসারে নির্ধারিত হয়।ফেমিনিজমের ''নারী অধিকার'' এর ধারণা, সমতার ধারণা পৃথিবীর বেশিরভাগ ধর্ম এবং সংস্কৃতির সাথেই সাংঘর্ষিক।ফেমিনিজমের মতো মতাদর্শ সত্তাগতভাবে সংস্কৃতি এবং ধর্ম বিদ্বেষী হওয়াটাই বেশ স্বাভাবিক।
ফেমিনিজম “পুরুষতন্ত্র তত্ত্ব” (Patriarchal Thesis)-এ বিশ্বাস করে, এই থিসিসের উপর ভিত্তি করে আন্দোলনের লক্ষ্য ঠিক করে।পুরুষতন্ত্র তত্ত্ব হল এই বিশ্বাস যে – সভ্যতার শুরু থেকেই পুরুষরা এমন এক বৈষম্যমূলক সামাজিক কাঠামো গড়ে তুলেছে এবং টিকিয়ে রেখেছে যার উদ্দেশ্য হল নারীকে অধীনস্ত করা, শোষণ করা, নির্যাতন করা এবং তাদের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখা।ধর্মের নেতৃত্ব দেয়া পুরুষ নবীদেরও ফেমিনিজম এই সিস্টেমের থেকে আলাদাভাবে দেয় না।
ফেমিনিজমের অধিকারের সংজ্ঞা-বডিলি অটোনমি- অন্যের ক্ষতি না করে নারীর নিজের শরীর নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করার অধিকার, সম্পূর্ণ ধর্মীয় মেটাফিজিক্সের সাথে সাংঘর্ষিক কারণ ধর্ম সৃষ্টিকর্তার ধারণা আনে, স্রস্টার নিয়ম অনুসারে নারী চলবে কারণ তার সবকিছু স্রস্টার তৈরি, আগেই ব্যাখ্যা করেছি।স্রস্টার অস্তিত্ব থাকলে ইন্ডিভিজুয়ালিজমের ধারণা সত্য হওয়া সম্ভব না, তাই ধর্মকে মেনে নিলে ফেমিনিজমই আর থাকে না।ফেমিনিস্ট লেন্স থেকে যদি দেখা হয় তাহলে, মেজর ধর্মগুলোর নবীরা প্রায় সবাই ছিল পুরুষ।ফেমিনিজম ধর্মকে স্রস্টাপ্রদত্ত কিছু মনে করে না তখন ধর্ম ফেমিনিজম অনুসারে হয়ে দাঁড়ায় কিছু পুরুষের চাপিয়ে দেয়া নিয়ম, যা ফেমিনিস্টদের মতে পুরুষতন্ত্রেরই নামান্তর।
ফেমিনিজমে যে অ্যাবসোলিউট ইকুয়ালিটির কথা বলা হয়, সেটা ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক। সব আব্রাহামিক ধর্মেই নারী এবং পুরুষের প্রতি অনেকসময় আলাদা আচরণ করা হয়।
যেমন-
ইসলামের ক্ষেত্রে বিধান আছে নারীরা ইসলামিক খিলাফতে রাস্ট্রপ্রধান হতে পারবে না।‘সকল ওলামায়ে কেরাম এব্যপারে একমত যে, কোনো নারীর জন্য ‘রাষ্ট্র প্রধান’ হওয়া জায়েয নয়’।[মারাতিবুল ইজমা, ইবনে হাযাম- ১২৬ পৃষ্ঠা]
ইসলামিক উত্তরাধিকার বন্টনের ক্ষেত্রে চারক্ষেত্রে পুরুষ নারীর দ্বিগুন পাবে, এগারো ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সমান পাবে এবং ষোলোক্ষেত্রে নারী পুরুষের চেয়ে বেশি পাবে।[সূরা নিসাঃ১১]
-পুরুষের উপর স্ত্রীর যৌনচাহিদা পূরণের সাথে ভরণপোষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, কিন্তু স্ত্রীর উপর যৌনচাহিদা পূরণের দায়িত্ব আছে, স্বামীর ভরণপোষনের দায়িত্ব নেই, ইচ্ছাধীন ব্যাপার।[সূরা নিসাঃ৩৪]
- ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারলে পুরুষের একসাথে চার বিয়ে জায়েজ,কিন্তু নারীর একসাথে একের অধিক বিয়ে হারাম।[সূরা নিসাঃ৩]
-মুসলিম নারীদের জন্য অমুসলিম পুরুষদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ,তবে মুসলিম পুরুষরা চাইলে আহলে কিতাবদের নারীদের বিয়ে করতে পারবে।[সূরা মুমতাহিনা, আয়াত ১০]
- মুসলিম নারীর জন্য হিজাব পরিধান করা ফরজ এবং পুরুষের সতর ঢাকা ও দৃষ্টি হেফাজত করা ফরজ।[সূরা নূরঃ৩১]
-মুসলিম নারীর পুরুষদের নামাজে ইমাম হওয়া হারাম।[আল মুহাল্লা ২/১৬৭]
-স্বর্ণ ও রেশমি বস্ত্র পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ কিন্তু মুসলিম নারীদের জন্য বৈধ।(সিলসিলা সহীহা হা-১৮৬৫/৩০৩০)
-ইসলামে সন্তানের প্রতি মাতার অধিকার পিতার চেয়ে বেশি।আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কছে এলো এবং সে প্রশ্ন করল,ইয়া রাসুলাল্লাহ! মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাপেক্ষা যোগ্য কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বললঃ এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা।(সহিহ মুসলিম,৬২৬৯)
-কন্যার লালনপালন জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কন্যা সন্তানের লালনপালনের যে পরিমাণ ফযীলতের কথা বলেছেন, পুত্র সন্তান লালনপালনের ক্ষেত্রে সে পরিমাণ বলেননি। আনাস রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যে ব্যক্তি দুইজন কন্যা সন্তানকে লালনপালন ও দেখাশুনা করল ।সে এবং আমি জান্নাতে এরূপ একসাথে প্রবেশ করব যেরূপ এ দুটি আঙুল। তিনি নিজের দুই আঙুল মিলিয়ে দেখালেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯১৪)
যে ব্যক্তিকে কন্যা সন্তান লালনপালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সাথে তা সম্পাদন করেছে সেই কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে আড় হবে। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯১৩)
বোনদের ভালোভাবে লালনপালনের জন্য বেহেশতের সুযোগ দেয়া হয়েছে, ভাইদের ক্ষেত্রে বলা হয়নি।আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান বা তিনটি বোন আছে এবং সে তাদের সাথে মমতাপূর্ণ ব্যবহার করে, সে বেহেশতে প্রবেশ করবে (আদাবুল মুফরাত ৭৯)
নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলে-সন্তান এবং মেয়ে-সন্তান, উভয়কেই সমানভাবে ট্রিট করতে বলেছেন। তবে, দু'জনের মধ্যে যদি কাউকে বেশি করে ট্রিট করতে হয়, যদি কোন একজনকে বেশি প্রায়োরিটি দিতে হয়, তাহলে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কন্যা সন্তানকেই তা দিতে বলেছেন। মানে, আপনার ছেলে এবং মেয়ে, দুজনের মধ্যে কোন একজনকে যদি আপনি একটু বেশি ভালোবাসতে চান, তাহলে নবিজী বলেছেন সেই বেশিটা যেন কন্যা সন্তানের জন্যই হয়।(আস-সুনান আল কুবরা, হাদিস নম্বর ১১০৯২)
এইরকম বহু নিয়ম আছে, যেখানে ইসলামে নারী ও পুরুষের মধ্যে ইকুয়ালিটি নেই, নারীবাদী-পুরুষবাদী অনেকেরই এটা ভালো লাগবে না, কারণ ইসলাম ন্যায়বিচার দেয় ইকুয়ালিটি না।
ফেমিনিজম সবক্ষেত্রে পুরুষতন্ত্রকে নারীর প্রতি নির্যাতনমূলক মনে করে এবং নির্মূলকরণ করতে চায়। কিন্তু বর্তমানে আমাদের এবং বেশিরভাগ ধর্ম ও কালচারেই পরিবার ব্যাবস্থা পুরুষতান্ত্রিক, শুধু বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজে মাতৃতান্ত্রিক।বংশপরিচয় নির্ধারিত হয় পিতৃপরিচয় দ্বারাই, পারিবারিক কাঠামোর প্রধান থাকে পিতা, তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মাতার মতামতকেও বিবেচনা করা হয়। এই পুরুষতন্ত্র এবং ফেমিনিজমের ''পুরুষতন্ত্র(Patriarchy)'' এক না। পারিবারিক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ফর্মে পুরুষতন্ত্রের অস্তিত্ব আছে, যেটা ফেমিনিজম যে টক্সিক পুরুষতন্ত্রের ধারনায় বিশ্বাস করে সেরকম না, এটা নারীর প্রতি নির্যাতনমূলক কিছু না।পুরুষতান্ত্রিক পরিবার ব্যাবস্থা খুবই স্বাভাবিক এবং ন্যাচারাল বিষয়, যা বহু সমাজ ব্যাবস্থাই স্বাভাবিকভাবে চলে আসছে।
অধিকারের সংজ্ঞা দেখলে, ফেমিনিজম অনুসারে সেক্সুয়াল অটোনমি নারীর অধিকার। নারী স্বাধীনভাবে অন্য কারোর ক্ষতি না করে যার সাথে ইচ্ছা যৌন সম্পর্ক করার অধিকার রাখে কারণ তার নিজ শরীরের উপর পূর্ণ স্বাধীনতা আছে, এজন্য পশ্চিমে সেক্সুয়াল রেভোলিউশানের সময় বহু মেইন্সট্রিম ফেমিনিস্ট সমর্থন করেছিল। এইরকম অবাধ যৌন স্বাধীনতা প্রাচ্যের সাধারন কালচারের সাথে, এমনকি আগেকার পশ্চিমের কালচারের সাথেও সাংঘর্ষিক।
ফেমিনিজম অনুসারে নারী সম্পূর্ণ পোশাকের স্বাধীনতা রাখে, সে যদি নগ্ন বা অর্ধনগ্ন হয়েও বের হতে চায় সেটাও তার অধিকার। এটা ঐতিহাসিকভাবে গ্রহণ করে আসা শালীনতার ধারণাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে, যা প্রায় সব মেজর ধর্মেই আছে।
ফেমিনিজম অনুসারে নারীর সংজ্ঞাটাও ভিন্ন। বর্তমানের ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট ট্র্যান্স ইনক্লুসিভ অর্থাৎ কোনো বায়োলজিকালি পুরুষ যদি মনে করে সে নারী তাহলেও তাকে নারী হিসেবে গণ্য করা হবে।আমেরিকার বৃহত্তম ফেমিনিস্ট অরগানাইজেশান National Organization for Women (NOW) এবং League of Women Voters (LWV) এলজিবিটিকিউ রাইটসকে একটা মূল ফেমিনিস্ট ইস্যু মনে করে। NOW এর প্রেসিডেন্ট টেরি'ও নেইল বলে, ট্রান্স নারীরাও নারী, ট্রান্স নারীদের অধিকার রক্ষা করা ফেমিনিস্টদের দায়িত্ব। এখানে জেন্ডার স্রেফ একটা সোশ্যাল কন্সট্রাক্ট, কেউ চাইলেই পুরুষ থেকে নারী, নারী থেকে পুরুষ হতে পারে। একজন নারী চাইলে লেসবিয়ান হতে পারে, নারীর সাথেও যৌন সম্পর্ক রাখতে পারে, এটাও লিবারাল ফেমিনিজম অনুসারে নারী অধিকার।
এইধরনের দাবিগুলো সরাসরি পৃথিবীর বেশিরভাগ সমাজের মতে ''অসভ্যতা'' কিন্তু লিবারাল সমাজে স্বাধীনতা। পৃথিবীর বেশিরভাগ সমাজ যে সমতার লঙ্ঘন করে সেই সমতা ফেমিনিস্ট সমাজে অলঙ্ঘনীয়। প্রশ্ন হলো, কেন পৃথিবীর বেশিরভাগ ধর্ম ও সমাজের সাথে সাঙ্ঘরশিক হওয়ার পরও ফেমিনিজম মেনে নিতে হবে? প্রমাণ কি যে ফেমিনিজম যে ভালো-খারাপের ধারণা দেয় সেটাই সত্য, প্রমাণ কি যে লিবারালিজম নারী অধিকারের যে সংজ্ঞা দেয় সেটাই সত্য? কেন পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষকে নিজেদের সব বিশ্বাস ফেলে ফেমিনিজম গ্রহণ করা লাগবে?
প্রথমদিকের নারীবাদীরা তাত্ত্বিকরা মনে করতেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল নারী অধিকার খর্ব করার পেছনে ভূমিকা রাখে না; বরং ধর্মই হলো ''নারীবিদ্বেষী বিশ্বাস ও আচার-আচরণের'' মূল উৎস। নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেত্রীদের একজন, সুসান বি অ্যানথনি বলেছিল-.
ঊনবিংশ শতাব্দীর আরেক উল্লেখযোগ্য নারীবাদী হেলেন এইচ গার্ডনার। নারীর বিরুদ্ধে খ্রিষ্টধর্মের ‘অপরাধ’ আর নিপীড়ন’ নিয়ে অনেকে লেখাজোখা ছিলেন হেলেনের। সে লিখেছিল–
‘এই ধর্ম আর কিতাব (বাইবেল) নারীর কাছে দাবি করে সবকিছু। বিনিময়ে দেয় না কিছুই। এরা নারীর সমর্থন আর ভালোবাসা চায়, বিনিময় দেয় অত্যাচার, নিগ্রহ আর অবজ্ঞা …খ্রিষ্টধর্মীয় দেশগুলোতে নারীর বিরুদ্ধে যত অত্যাচার আর নিগ্রহ হয়েছে, সেগুলোর বৈধতা দিয়েছে বাইবেল আর টিকিয়ে রেখেছে গির্জার বেদি’।( Gardener, Helen Hamilton. Men, Women, and Gods. S.I., Forgotten Books, 2017.)
গার্ডনারের ঘৃণা শুধু খ্রিষ্টধর্মের প্রতি ছিল না। Men, Women And Gods বইতে সে লিখেছিল–
'‘ধর্মগুলো যদিও অতিপ্রাকৃত উৎস থেকে আসার কথা বলে, কিন্তু আমি মনে করি এই দাবিগুলোকে যাচাই করা উচিত মানবীয় বুদ্ধির আলোকে। আমাদের সর্বোচ্চ নীতিবোধ যদি ধর্মের কোনো বিধানকে মেনে নিতে অস্বীকার করে তাহলে সেই বিধান বাদ দিতে হবে। কারণ, ধর্মের একমাত্র ভালো জিনিস হলো নৈতিকতা। আর নৈতিকতার সাথে বিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই। নৈতিকতার সম্পর্ক দুনিয়াতে সঠিক কাজ করার সাথে, আর বিশ্বাসের সম্পর্ক পরকালের অজ্ঞাত বিষয় নিয়ে। একটা হলো সময়ের চাহিদা আরেকটা চিরন্তনের স্বপ্ন। নৈতিকতার ভিত্তি হলো সর্বজনীন বিবর্তন। বিশ্বাসের ভিত্তি হলো ‘ওয়াহি’। আর আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত ‘ওয়াহি’ এসেছে তার কোনোটাই নারীর পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না। মুসা কিংবা কনফুশিয়াস, মুহাম্মাদ কিংবা পল, ইব্রাহিম কিংবা ব্রিঘাম ইয়াংএসে আমাদের সামনে দাবি করে তার ধর্মমত ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে। ঈশ্বর এদের কোনো একজনের সাথে বা সবার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে এই ধর্মগুলো দিয়েছে কি না, তার কোনো মূল্য আমাদের কাছে নেই। যদি তাদের ধর্মমত আমাদের নৈতিকতা, সুচিন্তা, উন্নত আদর্শ এবং বিশুদ্ধ জীবনবোধের সাথে খাপ না খায় তাহলে আমাদের ওপর এসব ধর্মের কোনো কর্তৃত্ব নেই। তাদের মধ্যে কে আছে এই পরীক্ষায় পাশ করার মতো? আজ পর্যন্ত যত ‘ওয়াহি’ এসেছে, তার কোনটা ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে দাবি করতে পারে, “আমি তোমাদের সর্বোত্তম বিকাশের সমকক্ষ, আমি আজও তোমাদের সর্বোন্নত চিন্তার পথ দেখাতে সক্ষম, আমার মধ্যে এমন কোন শিক্ষা নেই, যা তোমাদের ন্যায়বিচারের বোধের সাথে সাংঘর্ষিক?”একটাও না’'(Gardener, Helen Hamilton. Men, Women, and Gods. S.I., Forgotten Books, 2017.)
এর পরের প্রতি প্রজন্মে নারীবাদের ধর্মবিদ্বেষ আরও বেড়েছে। নারীবাদের সেকেন্ড ওয়েভের শুরু ফরাসী দার্শনিক সিমন দি ব্যুভয়ার হাত ধরে। ধর্মের প্রতি তার বিরোধিতা সিমন প্রকাশ করেছিল এভাবে–
‘পুরুষের বড় সুবিধা হলো পুরুষের লেখা নিয়মগুলোকেই ঈশ্বর বৈধতা দিয়েছে। আর পুরুষ যেহেতু নারীর ওপর কর্তৃত্ব করে তাই সার্বভৌম সত্তাও যে ধর্মমতে পুরুষকেই কর্তৃত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে, এটা বিশেষ সৌভাগ্যই বলতে হবে। ইহুদী, মোহাম্মাদান, খ্রিষ্টধর্মসহ অন্যান্য সব ধর্মে ঐশ্বরিক অধিকার বলে পুরুষই কর্তা। নিপীড়িত নারীর বিদ্রোহের যেকোনো চেতনা দমন করার জন্য স্রষ্টার ভীতি বরাবরই পুরুষের পক্ষে আছে।’(Beauvoir, Simone de, and H.M. Parshley. The Second Sex. South Yarra, Vic., Louis Braille Productions, 1989.)
সেকেন্ড ওয়েভের আরেক বিখ্যাত নারীবাদী, গ্লোরিয়া স্টাইন্যাম ধর্মের ব্যাপারে বলেছিল–
‘(ধর্ম) অবিশ্বাস্য মাত্রার জোচ্চুরি। ব্যাপারটা চিন্তা করে দেখুন। মৃত্যুর পরের পুরস্কারের আশায় বর্তমানে একটা বিশ্বাসকে আঁকড়ে থাকা! গ্রাহক ধরে রাখার জন্য কর্পোরেশানগুলো নানা পুরস্কারের অফার দেয়, কিন্তু তারাও মরণোত্তর পুরস্কার দেয়ার বুদ্ধি বের করতে পারেনি’। (Gloria Steinem. Freedom From Religion Foundation.Accessed September 12, 2017.)
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে স্টাইনেমকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘আজকের নারীবাদের সবচেয়ে বড় সংকট কী’? জবাবে স্টেইনেম বলেছিল –
‘আজকের নারীবাদীরা ধর্মের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সোচ্চার না। আধ্যাত্মিক হওয়া এক জিনিস, ধর্ম আরেক জিনিস। ধর্ম হলো আকাশের রাজনীতি। আমার মনে হয় নারীবাদীদের ধর্মের বিরুদ্ধে আরও কথা বলা দরকার। কারণ, আমাদের নীরবতা ধর্মকে আরও শক্তিশালী করে’।(Calloway-Hanauer, Jamie. “Is Religion the ‘Biggest Problem’ Facing Feminism Today?” Sojourners, May 6, 2015.)
নারীবাদের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের এ ধর্মবিদ্বেষ আরও তীব্র হয় তৃতীয় পর্যায়ে এসে।
উইমেন, জেন্ডার এবং সেক্সুয়ালিটির প্রফেসর সুসান শ’র মতে, বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর (যেমন, গির্জা, সিনাগগ, মসজিদ) অবস্থার আলোকে বলা যায়, ‘পুরুষতন্ত্রই পৃথিবীর কর্তৃত্বশালী ধর্ম।’ আর ‘ধর্মগুলো লিঙ্গের (gender) যে ধারণা দেয় তাতে সমস্যা আছে। এই সমস্যা পুরো পৃথিবীর সমস্যা। তাই আমাদের এমন এক সংস্কার দরকার (তা বিপ্লবও হতে পারে), যা পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতার বেদিগুলো ভেঙে বিশ্বজুড়ে অন্তর্ভুক্তি, সাম্য, ন্যায়বিচার, শান্তি এবং ভালোবাসার এক পবিত্র আশ্রম গড়ে তুলবে।’ (Shaw, Susan M. “Is Patriarchy The Religion of the Planet?’. The Huffington Post, October 1, 2015)
র্যাডিকাল লেসবিয়ান নারীবাদী দার্শনিক ম্যারি ড্যালির মতে, ধর্ম প্রকৃতিগতভাবেই নারীকে নিগৃহীত করে।ড্যালির বক্তব্য অনুযায়ী–
‘ইংরেজি সিন (পাপ) শব্দটি এসেছে ইন্দো-ইউরোপীয় “এস/es” ধাতুমূল থেকে। এস/es অর্থ অস্তিত্বমান হওয়া (to be)। সিন শব্দের এই উৎস আবিষ্কার করার পর আমি বুঝতে পারলাম, বর্তমান পৃথিবীর ধর্ম হলো পুরুষতন্ত্র। আর পুরুষতন্ত্রের জাঁতাকলে আটকা পড়া মানুষের জন্য অস্তিত্বমান হবার পূর্ণাঙ্গ অর্থ হলো পাপ করা (to sin)’।( Daly, Mary. Sin Big. The New Yorker, June 19, 2017.)
নারীবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো এ ধরনের কথাবার্তা দিয়ে ভর্তি। এগুলো সব একসাথে করতে গেলে কয়েক ভলিউমেও হয়তো ফুরাবে না।
ড্যানিয়েল হাকিকাতজুর ''The Modernist Menace To Islam'' বইয়ের অনুবাদ ''সংশয়বাদী'' থেকে এই অংশে অনেকগুলো রেফারেন্স নেয়া হয়েছে।
Family Destruction:-
ফেমিনিজম বহু আগে থেকেই পরিবার ব্যাবস্থার সরাসরি বিরোধী এবং পরিবারের ধ্বংসকে ফেমিনিজমের একটা লক্ষ্য মনে করে। বিষয়টা মেইন্সট্রিম ফেমিনিস্ট যারা ফেমিনিজমের মুভমেন্টে লিড দিয়েছে তাদের লেখা থেকেই স্পষ্টঃ-
American Women's Movement এর একজন মূল অ্যাক্টিভিস্ট Robin Morgan লিখেছিল,"We can't destroy the inequities between men and women until we destroy marriage.'' (From Sisterhood Is Powerful (ed), 1970, p. 537)
বিখ্যাত আমেরিকান ফেমিনিস্ট Linda Gordon লিখেছিল, "The nuclear family must be destroyed, and people must find better ways of living together.... Whatever its ultimate meaning, the break-up of families now is an objectively revolutionary process.''("Functions of the Family," WOMEN: A Journal of Liberation, Fall, 1969)
Phyllis Chesler সেকেন্ড ওয়েভ ফেমিনিজমের একজন লিডিং এক্টিভিস্ট লিখেছিল, "most mother-women give up whatever ghost of a unique and human self they may have when they 'marry' and raise children."(Women and Madness, p. 294)
Barbara Findlen লিখেছিল, "Feminists have long criticized marriage as a place of oppression, danger, and drudgery for women.''(Ms magazine, May-June, 1995)
Helen Sullinger মেনিফেস্টো রিলিজ করেছিল, "Male society has sold us the idea of marriage.... Now we know it is the institution that has failed us and we must work to destroy it...."
Suzanne Venker তার বই The Flipside of Feminism এ ব্যাখ্যা করে, ''The desire to eliminate the full-time homemaker has been feminists’ goal all along. The need for a second income was never the goal.''
বর্তমানের ফেমিনিস্ট Sophie Lewis এই ব্যাপারে বিস্তারিত বই লিখে, Full Surrogacy Now: Feminism Against Family, Abolish the Family: A Manifesto for Care and Liberation নামে যেখানে ব্যাখ্যা করে ফেমিনিজম কেন পরিবার বিরোধী ধারনা এবং কেন ফেমিনিস্টদের পরিবার ধ্বংসের জন্য কাজ করা উচিত।
এইরকম অসংখ্যা অ্যান্টি ফ্যামিলি লেখা পাওয়া যাবে মেইন্সট্রিম ফেমিনিস্টদের লেখায়।
পরিবার ব্যাবস্থার ধ্বংস চাওয়ার কারণটা সরাসরি ফেমিনিজমের কনসেপ্টের সাথেই জড়িত। পরিবার ব্যাবস্থা টিকেই থাকে একজনের জন্য অন্যজনের স্যাক্রিফাইস করার মাধ্যমে, পরিবারে দায়বদ্ধতা থাকে সবার, যা মানুষের স্বাধীনতাকে বাই ডিফল্ট কমিয়ে আনে। কিন্তু ফেমিনিজম নারীর অ্যাবসোলিউট স্বাধীনতাকে সবসময় প্রাইয়োরিটি দেয়। এরপরে ফেমিনিজমের ''পুরুষতন্ত্র তত্ত্ব(Patriarchal Thesis)'' এর বিশ্বাসের জন্য, আদি সমাজ থেকে পরিবার ব্যাবস্থার তৈরিকে দেখা হয় নারীদের নির্যাতন করার জন্য পুরুষতন্ত্রের বানানো কাঠামো হিসেবে।
বেশিরভাগ সমাজে সাধারণত পিতাকেন্দ্রিক পরিবার ব্যাবস্থা থাকে, তাই বাই ডিফল্ট ফেমিনিজম এর বিরোধিতা করে।কিন্তু বাস্তবে এই পিতৃতন্ত্র মোটেও ফেমিনিজম যেভাবে নারীর অত্যাচারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ''পুরুষতন্ত্র''-এর ব্যাখ্যা দেয় সেরকম না। প্রশ্ন হলো, হাজার হাজার বছর ধরে স্রেফ নারীদের অত্যাচার করার জন্য সব কালচারে ''পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো'' তৈরি কেন করবে পুরুষরা যেখানে তার সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষগুলো, তার মা,বোন,স্ত্রী নির্যাতিত হতে থাকবে, বিলিয়ন বিলিয়ন পুরুষকে স্রেফ একটা তত্ত্বের ভিত্তিতে এত স্যাডিস্ট ভাবা পয়েন্টলেস।
ট্রাডিশনাল পরিবার সমাজের বেসিক স্ট্রাকচার তৈরি করে এবং বহু রিসার্চ প্রমাণ করে স্থিতিশীল পরিবার মানুষের সুখ অর্জনের একটা মূল সোর্স। বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট Jonathan Haidt তার The Happiness Hypothesis: Finding Modern Truth in Ancient Wisdom বইয়ে ব্যাখ্যা করেন, পরিবার ও পরিবারের মানুষের ভালোবাসা মানুষের সুখ অর্জনের প্রাইমারি বিষয়। Authentic Happiness বইয়ে পেনসিলভ্যানিয়া ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের প্রোফেসর Martin E. P. Seligman, Ph.D বলেন: বহু রিসার্চ দেখিয়েছে যে, একটা ভালো চাকরি পাবার চেয়ে বিয়ে করা-টা বেশি সুখ নিশ্চিত করে। এই ব্যাপারে অজস্র প্রমাণ আছে ট্র্যাডিশনাল পরিবার মানুষের বেসিক সুখের জন্য অপরিহার্য। তাই ফেমিনিজম যখন পরিবারের ধ্বংস চায় তখন ফেমিনিজম মানুষের মৌলিক সুখেরও ধ্বংস নিয়ে আসে।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আছে সেগুলো পরের অংশে লিখেছি, লিঙ্ক কমেন্টে দেয়া আছে। পরের অংশে বাস্তবিক ক্ষেত্রে আরও বড় সমস্যাগুলো নিয়ে লেখা হয়েছে, সময় থাকলে পড়ে দেখবেন।
References:
7.
8.
9.
Perceived Stress and Severity of Perimenstrual Symptoms
Irritable bowel syndrome: epidemiology, diagnosis and treatment: an update for health-care practitioners
Stress-induced alterations in estradiol sensitivity increase risk for obesity in women
Women in Male-Dominated Jobs Have More Stress, Time
10.
11.
- Ishrak Ahmed