'মুসলিম ফেমিনিস্ট' = মডার্নিস্ট
মানহাজের দিক থেকে ‘মুসলিম’ ফেমিনিস্ট-রা মডার্নিস্ট। কেউ বুঝে, বেশির ভাগ না বুঝে।
.
প্রথমে “ব্যক্তিস্বাধীনতা”,“ইন্ডিভিযুয়ালিসম”, “অধিকার”, “সমতা”র মতো ধারণাগুলোকে এবং নারীবাদের বেশ কিছু মৌলিক প্রস্তাবকে তারা গ্রহণ করে নেয় সত্য হিসেবে। অর্থাৎ তারা পথ চলা শুরু করে মডার্নিটির প্যারাডাইমকে সঠিক মনে করে।
.
তারপর এর ভেতরে বসাতে চায় ইসলামকে। তারা ইসলামের ‘সংস্কার’ চায় মডার্নিটির ছাঁচে।
.
একারণে ঘুরেফিরে তাদের মধ্যে কয়েকটা মডার্নিস্ট অবস্থান দেখবেন।
.
ক) তারা হাদীস শাস্ত্রকে অস্বীকার করবে।
.
কেউ সরাসরি অস্বীকার করবে, কেউ উলুমুল হাদীসকে 'অনির্ভরযোগ্য' বলবে, কেউবা তৈরি করে নেবে হাদীস গ্রহণবর্জনের মনমতো মাপকাঠি। ঘুরেফিরে মূল অবস্থান একই–নারীবাদ এবং মডার্নিটির লেন্সে যে হাদীসগুলো হাদীস অগ্রহণযোগ্য সেটা নাকচ করার একটা বৈধতা তৈরি করা।
.
খ) তারা ইসলামের ইলমী তুরাস বা সিলসিলাকে অস্বীকার করবে।
.
ফকীহ, মুহাদ্দিসিন, মুফাসসিরিন, সবার ক্ষেত্রে সত্য হলেও, বিশেষভাবে মুফাসসিরিনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ মুফাসসিরিনের কাছ থেকে আসা কুরআনের ব্যাখ্যা ধরে রাখলে বিভিন্ন আয়াতকে ইচ্ছেমতো ব্যাখ্যা করা যাবে না। একারণেই, ‘মুসলিম আলিমরা পুরষতান্ত্রিক ছিলেন’, ‘মুসলিম আলিমরা পুরুষতন্ত্রের লেন্সে কুরআনকে দেখেছেন, “পুরুষতন্ত্রের কাঠামোর ভেতর ফিকহ গড়ে উঠেছে’, এ জাতীয় কথাবার্তা দেখবেন।
.
গ) তারা সালাফুস সালিহিনের অবস্থানকে অগ্রাহ্য করবে।
.
হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে কিছু ঘটনাকে নিজেদের পক্ষে দলীল হিসেবে টানার চেষ্টা তারা করবে (“খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা সিইও ছিলেন!”)। কিন্তু এটা অপুরটুনিস্টিক। একশোটা বিপরীত দৃষ্টান্ত বাদ দিয়ে নারীবাদের ফ্রেইমওয়ার্কের ভেতরে ব্যাখ্যা করা যায় এমন একটা অবস্থান খুঁজে খুঁজে বের করবে তারা। আর তখনও সেই ঘটনাকে উপস্থাপন করবে খুব ‘উদারভাবে’ কাটছাঁট করে। অন্যদিকে কুরআন-সুন্নাহ এবং দৈনন্দিন জীবনের আহকাম, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে ব্যাপারে সালাফুস সালিহিনের অবস্থানকে উপেক্ষা করবে ঢালাওভাবে।
.
ঘ) কুরআন-সুন্নাহর বক্তব্যকে হিস্টোরিসাইয (Historicize) করবে।
.
যেমন - কুরআনের আয়াত, হাদীসের বক্তব্য একটি নির্দিষ্ট স্থান-কাল-পাত্রের (ষষ্ঠ শতাব্দীর আরব মরুচারী বেদুইন সমাজ) ফলাফল ছিল। যার অর্থ হল, আধুনিক একবিংশ শতাব্দীতে এগুলো আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করা যাবে না। যেহেতু স্থান-কাল-পাত্র বদলে গেছে। কুরআন-সুন্নাহর আক্ষরিক অনুসরণের মনোভাবের কারণে মূল শিক্ষা হারিয়ে গেছে। এখন মনোযোগ দিতে হবে অন্তর্নিহিত স্পিরিট পুনর্জীবিত করার দিকে – এ জাতীয় কথাবার্তা।
.
ঙ) নারীবাদের আলোকে কুরআন (ও সুন্নাহকে) ব্যাখ্যা করা অথবা কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে নারীবাদী চিন্তা আরোপ করে (back projecting)।
.
আর নারীবাদ মডার্নিটির প্যারাডাইমের অংশ।
.
.
এসব কারণে, ‘মুসলিম ফেমিনিস্ট’রা তাই হাজির হয় বিচিত্র সব তাফসীর ও ব্যাখ্যা নিয়ে। যা অধিকাংশ মুসলিম (আলিম ও আওয়াম) প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিক্রিয়ায় বাড়তে থাকে ‘মুসলিম ফেমিনিস্ট’-দের ভেতরকার তিক্ততা। একসময় তা পরিণত হয় রাগ এবং অনেক সময় ঘৃণায়। এ ঘৃণার লক্ষ্যবস্তু হয় আলিমগণ (কারন ‘তারা পুরুষতান্ত্রিক’), ইসলামী ইলমের ধারা এবং ঢালাওভাবে মুসলিম উম্মাহ। এই তিক্ততা এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার ছাপ দেখা যায় তাদের লেখা কিংবা বক্তব্যে।
.
কিন্তু সমস্যাটা আসলে বাইরে না। সমস্যাটা তাদের চিন্তার জগতে। দুটো সাংঘর্ষিক অবস্থানকে একইসাথে ধারণ করতে গিয়েই এতো ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। ইসলাম অথবা নারীবাদ - সমাধান চাইলে বেছে নিতে হবে যেকোন একটাকে। নিজেদের ধারণাগুলোকে মাপতে হবে ওয়াহির মানদণ্ডে, উল্টোটা না।
- Asif Adnan
আর্কিমিডিসের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে –
Give me a lever long enough and a fulcrum on which to place it, and I shall move the world.
আমাকে দাঁড়ানোর মতো জায়গা আর একটা লম্বা লাঠি দাও, আমি পুরো পৃথিবী নড়িয়ে দেব।
.
আর্কিমিডিস পদার্থবিজ্ঞানের লেভারেজের (leverage)-এর কথা বলছিলেন। একটা লম্বা লাঠি বা লিভার ব্যবহার করে অনেক ভারী জিনিসও কম শক্তি খরচ করে উঠানো যায়। তবে শুধু লিভার থাকলেই হয় না, দাড়ানোর মত জায়গাও লাগে। হাতে যথেষ্ট লম্বা লিভার দেয়া হলেও দাড়ানোর জায়গা ছাড়া আর্কিমিডিস তেমন কিছুই নাড়াতে পারবেন না।
.
এই দাড়ানোর জায়গা কিংবা, কেন্দ্রের গুরুত্বের ব্যাপারটা অন্যান্য আরও অনেক ক্ষেত্রে সত্য। আমরা যখন কোন কিছু বিচার করি তখন সেটা কোন না কোন বিন্দুতে দাঁড়িয়েই করি।
.
মনে করুন, আপনি কোন জিনিসের ভালোমন্দ হিসেব করার চেষ্টা করছেন। প্রথমেই আপনার প্রয়োজন হবে ভালোমন্দের একটা মানদণ্ডের। আপনি বিচার করবেন সেই মানদণ্ড অনুযায়ী। একটা বিন্দুতে আগে আপনাকে দাড়াতে হবে। হাওয়ার ওপর আপনি বিচার করতে পারবেন না।
.
পাহাড় বেশি সুন্দর নাকি সমুদ্র- এই ধরনের প্রশ্নের উত্তরও নির্ভর করবে সৌন্দর্যের ব্যাপারে আপনার ধারণা আর ব্যক্তিগত রুচির ওপর। নান্দনিকতা নিয়ে আলোচনায় একটা নির্দিষ্ট জায়গাতে দাড়িয়েই আপনি উত্তর ঠিক করবেন।
.
কাজেই শুধু পৃথিবীকে নড়ানোর জন্য না, বরং যে কোন ধরনের বিচার, বিশ্লেষণ, তুলনা- সমালোচনার জন্যেও আগে দাড়ানোর একটা জায়গা লাগে। মানুষ কোন জায়গায় দাড়াচ্ছে সেটাই তার চূড়ান্ত অবস্থানকে ঠিক করে দেবে।
.
এজন্যই নির্মোহ বিশ্লেষণ বা নিরপেক্ষ পর্যালোচনা বলে আসলে কিছু হয় না। এগুলো পশ্চিমা অ্যাকাডেমিয়ার ছেলেভুলানো বুলি। প্রত্যেক বিশ্লেষণ, প্রত্যেক পর্যালোচনা কোন না কোন মানদন্ডের সাপেক্ষে হয়। কোন কোন পূর্ববিশ্বাসের ওপরই গড়ে ওঠে।
.
প্রত্যেক সমালোচনার ভিত্তি তৈরি হয় ‘ভালো’ এবং ‘কাঙ্ক্ষিত’-এর কোন না কোন সংজ্ঞার ওপর। সবাই কোন না কোন জায়গাতে দাড়িয়েই কথা বলে। কেউ এটা সরাসরি স্বীকার করে, কেউ গোপন করার চেষ্টা করে। পার্থক্য এতোটুকুই।
.
মডার্নিটির তৈরি করা বিভিন্ন বাদ-মতবাদের মোকাবেলা করার সময় এই ব্যাপারটা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। মানবাধিকার, নারী অধিকার, সাম্য, স্বাধীনতা-সহ যতো বিষয়ে ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন বা আপত্তি, সেগুলোও একটা নির্দিষ্ট জায়গাতে দাঁড়িয়ে তোলা হয়।
.
যেমন - পশ্চিমা বিশ্ব যখন মানবাধিকারের কথা তুলে ইসলামী শরীয়াহ নিয়ে আপত্তি তোলে, তখন মানবাধিকারের এই আলাপ শুন্য থেকে আসে না। মানবাধিকার নিয়ে যেকোন আলাপে যাবার আগে বেশ কিছু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে।
.
মানুষ কী? তার পরিচয় ও উৎস কী?
অধিকারের উৎস কী? অধিকার কোথা থেকে আসে? আর কে সেটা ঠিক করে?
.
এই প্রশ্নগুলোর নির্দিষ্ট কিছু উত্তর ধরে নিয়েই পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামী শরীয়াহর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে। প্রশ্নটা সে ছুড়ে দেয় একটা নির্দিষ্ট আকীদাহ ও দ্বীনের জায়গাতে দাঁড়িয়ে। এই ব্যাপারটা না বুঝে আমরা যখন 'ইসলামেও মানবাধিকার আছে', প্রমানে ব্যস্ত হয়ে যাই, তখন আমরা আসলে ওদের জায়গাটাকে নিজের অজান্তেই মজবুত করি।
.
পশ্চিমের তৈরি অন্য যেকোন অধিকারের আলোচনার ক্ষেত্রে এই একই কথা প্রযোজ্য। সেটা এলজিটিভির অধিকার হোক কিংবা নারী অধিকার। এধরনের সব আলোচনা গড়ে ওঠে নির্দিষ্ট কিছু আকীদাহর ভিত্তিতে।
.
যেমন ধরুন - ইসলামী শরীয়াহতে কি নারীকে যথাযথ অধিকার দেয়া হয়েছে?— আপাতভাবে ছোট মনে হলেও আসলে বিশাল একটা কাঠামোর ওপর এই প্রশ্নটা তৈরি হয়েছে। যেখানে মানবপ্রকৃতি, ব্যক্তি, ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং অধিকারের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কিছু বিশ্বাস আছে। আছে ‘যথাযথ অধিকার’-এর ব্যাপারেও একটা নির্দিষ্ট পশ্চিমা ধারণা।
.
এই ধরনের প্রশ্ন বা আলাপগুলো হিমশৈলের মত। খালি চোখে দেখা যায় ১০%। বাকি ৯০%; আলাপের পেছনে মূল আকীদাহগত ভিত্তি, থাকে চোখের আড়ালে।
.
এই প্রশ্নগুলো তৈরি হয় মডার্নিটির আকীদাহগত রুকনগুলো মেনে নিয়ে। এবং ইসলামের সত্যতাকে অস্বীকার করে। কারণ ইসলামকে আল্লাহর দ্বীন এবং আল্লাহকে স্রষ্টা, বিধানদাতা ও আনুগত্যের চূড়ান্ত মালিক হিসেবে মেনে নেয়া হলে আল্লাহ যা ঠিক করে দিয়েছেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার, সমালচনার কিংবা সেটা মাপজোক করার সুযোগ থাকে না।
.
কাজেই যখনই কেউ মানবাধিকার, নারী অধিকার, কিংবা সংখ্যালঘুর অধিকারের মাপকাঠিতে ইসলামকে মাপতে যায় তখন সে ইসলামের বাইরে দাঁড়িয়ে কাজটা করে। মুসলিম মডার্নিস্টরা যে কাজটা করতে চায়, ১৪০০ বছরের ইলমী গবেষণাকে অগ্রাহ্য করে নিজস্ব ব্যাখ্যা তৈরি করা–সেটাও করতে হয় ইসলামের বাইরে দাঁড়িয়ে।
.
মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকীহগণ ইসলামের পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যা করেছেন। আরব বেদুঈনদের চিন্তা, আরবের গোত্রীয় সমাজ দ্বারা ইসলামী শরীয়াহ বিধানগুলো প্রভাবিত হয়েছে। কুরআনের সাম্য, স্বাধীনতা, অধিকারের মূল মেসেজ এভাবে হারিয়ে গেছে। তাই নতুন করে কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যাকে খুঁজে বের করতে হবে। শরীয়াহকে নতুন করে ভাবতে ও ব্যাখ্যা করতে হবে...
.
সেই ব্যাখ্যা কোথা থেকে এসেছে? “আধুনিক সভ্যতা” বা মডার্নিটি থেকে। পশ্চিম থেকে।
.
নতুন যে ব্যাখ্যা বা ‘হারিয়ে যাওয়া সঠিক ব্যাখ্যা’ – এটা কোন মাপকাঠিতে সঠিক?
মডার্নিটির মাপকাঠিতে।
.
কাজেই মডার্নিস্টদের পুরো প্রকল্পই হল পশ্চিমের কাছ থেকে পাওয়া মাপকাঠিতে, পশ্চিমের ঠিক করে দেয়া প্যারামিটারের মধ্যে ইসলামকে নতুন করে ব্যাখ্যা করা। আর এটা করতে হলে হাদীস, ফিকহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস এবং ফকীহদের বক্তব্য অস্বীকার করা আবশ্যক।
.
এই ব্যাপারটা একবার বুঝতে পারলে বিভিন্ন ধরনের মডার্নিস্টদের চিনতে অসুবিধা হবে না। সেটা হাদীস অস্বীকারকারী হোক, ফেমিনিস্ট হোক কিংবা জুব্বা পড়ে কিংবা স্কলার-শাইখ কিংবা হাক্কানী খেতাব লাগিয়ে সেক্যুলার কল্যাণরাষ্ট্রের দিকে আহ্বানকারী হোক।
.
একইসাথে তাদের মোকাবেলা করার কাজটাও সহজ হয়ে যাবে। তাদের সেনসেশানাল বিভিন্ন দাবি আর অদ্ভূত সব বক্তব্য বাদ দিয়ে আপনি তখন তাদের মূল অবস্থানটা দেখতে পাবেন। যে ভিত্তির ওপর তারা দাঁড়িয়ে আছে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে পারবেন।
- Asif Adnan
হিজাবি হোক আর জিন্সি হোক সব নারীবাদের শেষ গন্তব্যই দ্বীন বিকৃতি, দ্বীনের অপব্যাখ্যা ও দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। জিন্সি নারীবাদ শুরুতেই দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসলেও হিজাবি নারীবাদ বেছে নেয় দীর্ঘ পথ। শুরুতে সে সমকালীন সমাজে নারীদের প্রতি নানা অবিচার ও জুলুমের কথা টেনে এর জন্য ধার্মিক সমাজের নানা বয়ান ও ব্যখ্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এক্ষেত্রে সে দাদার জামা নাতির গায়ে পরিয়ে দেয়। গ্রাম্য সালিশি মজমার আলাপকে ফতোয়া বলে চিহ্নিত করে সেক্যুলারদের সুরে সুর মিলিয়ে সমাজের ধার্মিক অংশকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কারো ব্যক্তিগত বেইনসাফি ও অপরাধকে ধার্মিক অংশের সমন্বিত অপরাধ বলে ঘোষণা দেয়।
ক্রমে তার সুর ও স্বর চড়ে যায়। আলেমদের নানা ফতোয়া ও বক্তব্য নিয়ে তার ক্রমাগত আপত্তি প্রকাশ পায়। সে বেছে নেয় দ্বীনের মুতাওয়ারাস ফাহম থেকে বিচ্ছিন্নতার পথ। অন্যসব বিভ্রান্ত ফিরকার মত সেও ঘোষণা করে সালাফের বুঝ ও ব্যখ্যাই শেষ কথা নয়, বরং সময় এসেছে তাদের ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সংযোজন ও বিয়োজনের। দ্বীনের বিধিবিধান ব্যখ্যার মুতাওয়ারাস ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হিজাবি নারীবাদ ঘোষণা করে নিজের কতৃত্বের। সে দেখাতে চায়, সালাফরা ইসলামকে ঠিকভাবে বুঝেননি, কোরআন হাদিসের গভীরে যেতে পারেননি, তারা আচ্ছন্ন হয়েছিলেন পুরুষতান্ত্রিকতায়। হিজাবি নারীবাদ ঘোষণা করে, কোরআন হাদিসে নারীর প্রতি কোনো বৈষম্য নেই, এই বৈষম্য সৃষ্টি করেছে মুফাসসিররা। মুফাসসির ও মুহাদ্দিসরা ছিলেন মিসোজিনিস্ট, তারা বেছে নিয়েছিলেন পুরুষসুলভ বেইনসাফি।
কিন্তু হিজাবি নারীবাদের এই প্রকল্প শীঘ্রই মুখ থুবড়ে পড়ে। সে আবিষ্কার করে, সালাফের ব্যাখ্যা বাদ দিলেও কোরআন হাদিসের বহু নুসুস রয়ে যায়, যা তার মনমত নয়। যৌনতানির্ভর ব্যাখ্যা বলে মুফাসসিরদের বক্তব্য বাদ দেয়া গেলেও, 'তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর' এই আয়াতকে তো অস্বীকার করা যায় না। হিজাবি নারীবাদ টের পায় সালাফরা আসলে নতুন কিছু বলেননি, তারা ইসলামের মূল স্রোতটিকেই স্পষ্ট করেছেন মাত্র।
ফলে শুরু হয় একের পর এক হাদিস অস্বীকারের ধাপ, আয়াতের অর্থ বিকৃতি ও চুড়ান্তধাপে ধর্মকেই অস্বীকার। জিন্সি নারীবাদ এক ধাপে পুরো পথ অতিক্রম করলেও হিজাবি নারীবাদ সে পথ অতিক্রম করে ধাপে ধাপে ভীরু পদক্ষেপে। যদি আল্লাহ কাউকে হিদায়াত না দেন, তাহলে শুধু মোল্লাতন্ত্রের উপর রাগ ঝেড়ে হিজাবি নারীবাদ বেশিদিন টিকতে পারে না, ধর্মের মূল ভিত্তিতে তাকে আঘাত করতে হবেই।
দিনশেষে, ধার্মিক নারীবাদ বলতে কিছু নাই, যেভাবে ধার্মিক মুরতাদ বলতেও কিছু নেই।
- imaran Raihan
ফারাজানা মাহবুবার পোস্ট বেশ মনোযোগে পড়েছি। লাইন বাই লাইন, ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড পড়েছি। শব্দের সূত্র ধরে তার মনোজগতে ভিড় করা কল্পনা-ভাবনাগুলোকে পরখ করার চেষ্টা করেছি। মোটামুটি চেনাজানা বা বোঝাপড়া হয়ে গেছে। আমার বিশ্বাস, তাকে যদি আমি নারীপুরুষ সম্পর্কীয় কিছু প্রশ্ন করি তাহলে সে এমন উত্তরই দেবে যে উত্তরগুলো আমি এখন ভাবছি। চুলোয় থাকা পাতিলের সব ভাত তো আর টিপ দিতে হয় না। একটা ভাতে টিপ দিলেই বোঝা যায়, পাতিলের সব ভাত সিদ্ধ হয়েছে কি না। সুতরাং ফামাকে বুঝতে তার একটা পোস্টই যথেষ্ট।
যাক, তার পোস্টটা পড়া শেষে একটু ঝুঁকে বেশ কয়েকবার 'আলহামদুলিল্লাহ' পড়েছি। প্রশ্ন জাগতে পারে, এমন বিকৃত লেখা পড়ে শুকরিয়া আদায়ের কী অর্থ? হ্যাঁ, অর্থ আছে। বলছি।
আসলে শুকরিয়া আদায় করেছি নিজের অবস্থানের জন্য; তার লেখার বিষয়, নতুনত্ব বা গুণগত দিক চিন্তা করে নয়। আল্লাহ যে আমাকে এখনো, ঠিক এই মুহূর্ত পর্যন্ত দ্বীনের সঠিক বোঝ এবং মেজাজে দ্বীনের উপর অবিচল রেখেছেন সেজন্য আমি নতশিরে শুকরিয়া আদায় করেছি। হেদায়াত পাওয়া যেমন বড় নেয়ামত, ঠিক তেমনি হেদায়েতের উপর অবিচল থাকতে পারা আরো বড় নেয়ামত। এমন নেয়ামত ভোগ করেও যদি শুকরিয়া আদায় করতে না পারি তাহলে আমি তো বড়ই কৃপণ হয়ে যাব। এমন কৃপণদের থেকে নেয়ামতের ধন হারিয়ে যায়, যাবে। সেই ভয়ে আমি এখনো অন্তরে জারি রেখেছি 'আলহামদুলিল্লাহ'। এটা জারিই থাক। সাথে এই দুয়াটাও চলুক,
❞رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوبَنَا بَعۡدَ إِذۡ هَدَیۡتَنَا وَهَبۡ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحۡمَةًۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡوَهَّابُ
হে আমাদের রব! সরল পথ দেয়ার পর আপনি আমাদের অন্তরসমূহকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবেন না। আর আপনার কাছ থেকে আমাদেরকে করুণা দান করুন, নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা।’ (ইমরান-৮)❞
ফারজানা মাহবুবার যে রোগ পেয়ে বসেছে সেই একই রোগে ইবলিশ এখন রাজীম বা অভিশপ্ত। ইবলিশ সাহেব থেকে আমরা যেভাবে পানাহ চাই, ঠিক এভাবেই ফামাদের থেকে পানাহ চাওয়া জরুরি। অন্যথায় মনস্তাত্ত্বিক এই রোগে আপনি বা আমি আক্রান্ত হয়ে যেতে পারি। খুব খেয়াল করলে দেখবেন, ইবলিশের দর্শন, চিন্তা, ব্যক্তিগত বোঝাপড়া এবং যুক্তির সাথে ফারজানাদের বোঝাপড়া এবং একগুয়েমি মিলে যায়। একটুও ব্যতিক্রম পাবেন না। প্রবৃত্তির আনুগত্য এবং মডার্নিজমের ধারণা দিয়ে তারা যেভাবে ইসলামের ধারা, প্রতিষ্ঠিত ব্যাখ্যা এবং সালফুস সালেহীনদের ধুইয়ে দিচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে, তারা এমন একটা দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেই দ্বীনের সঠিক ব্যাখাকার হবেন এই যুগের ফারজানারা। সাড়ে চৌদ্দশত বছরের সিলসিলা ভেঙে চুরমার করে নতুন এক ধর্মের আবির্ভাব ঘটাতেই যেন তারা মরিয়া। কুরআন-সুন্নাহর শাশ্বত ব্যাখ্যা পরিবর্তন করে প্রবৃত্তির চাওয়ার সাথে মিল রেখে নতুন একটা ব্যাখা দাঁড় করিয়ে পশ্চিমা চিন্তাকে পবিত্র বানিয়ে ওয়েস্টার্নদের কাছে একদম কুল কোনো একটা ধর্ম প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলনে তাদের যুক্ত থাকার সন্দেহ উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এমন সন্দেহ করাটাই এখন সমীচীন।
ফারাজানাদের কাছাকাছি যারা আছেন তাদের উচিত তাকে খুব করে বোঝানো। তার এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ চিন্তাধারা থেকে মুক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা প্রয়োজন। যদি ঠি না-ই হয় তাহলে তার সঙ্গ ছাড়া তাদের নিজেদের জন্য বাধ্যতামূলক করে নেওয়া উচিত। এমন চিন্তাভাবনার মানুষের সাথে সখ্যতা রেখে আপনি কখনোই দ্বীনের প্রকৃত মেজাজে উপর থাকতে পারবেন না।
তার প্রতিটি কথার সুন্দর সুন্দর জবাব দেওয়া সম্ভব। আশাকরি জ্ঞানীগুণীরা এগিয়ে আসবেন। জাতিকে সচেতন করবেন।
- Nazrun Islam