বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন! টিপ বনাম হিজাব এবং আমাদের সুশীল সমাজ ও মিডিয়া

 ভারতে কর্ণাটকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হিজাব নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে বিগত এক দেড় মাসে বাংলাদেশেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্তৃক হিজাব নিয়ে কটুক্তি ও হয়রানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক মাসে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ হিজাব বিদ্বেষের ঘটনা ঘটেছে। এখানে আরো একটি চিন্তার বিষয় হল, এই ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে হিন্দু শিক্ষক ও শিক্ষিকা কর্তৃক।

এমনকি টিপকাণ্ডের আড়ালে হিজাব বিদ্বেষের ঘটনাটিও ঘটিয়েছে একজন হিন্দু নারী। এসব ঘটনা থেকে সুস্পষ্ট যে, ভারতে হি ন্দু ত্ব বা দী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের হাওয়া বাংলাদেশেও লাগছে। এবং ভারতে মুসলিম নিগৃহের এটিই অনিবার্য ফলাফল।

বাংলাদেশে বাঙ্গালী ধর্মের নামে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি ও তার কর্মী তৈরির ভিত্তি নির্মিত হয়েছে ইংরেজদের শাসনামলে। বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মুসলিমরা যখন নানামুখী প্রতিরোধ আন্দোলনে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়েই কতিপয় হিন্দু বৃটিশ তোষণে হি ন্দু ত্ব বাদী রাম রাজ্য প্রতিষ্ঠার ভীত নির্মাণে অগ্রসর হচ্ছিল।


১৮০১ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগ চালু করা হয়। এই বিভাগের প্রধান ছিল পাদরী উইলিয়াম কেরি। আর এর পণ্ডিত হিসেবে নিয়োগ পায় মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রামনাথ বিদ্যাবাচস্পীতি, শ্রীপতি মুখোপাধ্যায়, আনন্দচন্দ্র, কাশীনাথ, রামবসু সহ প্রমুখ হিন্দু সাহিত্যিকরা। এই বিভাগকে ব্যবহার করে তারা একের পর এক পত্রিকা প্রকাশ করে তারা হিন্দু জাতীয়তাবাদী ও সাংস্কৃতিক কর্মী তৈরি করতে থাকে। আবার বৃটিশ তোষণে মুসলিমদের উপর জমিদারির একচ্ছত্র অধিকারও তারা লাভ করে।

কলকাতা কেন্দ্রিক এই হিন্দু ত্ব বাদী বুদ্ধিজীবিতা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিই বাংলার মুসলিম সংস্কৃতির বিরুদ্ধে "বাঙ্গালী" নাম ধারণ করে একটি আন্দোলনে পরিণত হয়। এজন্য বাংলাদেশের কথিত বুদ্ধিজীবি শ্রেণি, তাদের সাহিত্য, মিডিয়া এক্টিভিটি ও রাজনীতি সবকিছুই পরিচালিত হয় বৃটিশ তোষণে নির্মিত কলকাতা কেন্দ্রিক সেই হিন্দ ত্ব বাদী চেতনা থেকেই। এরা কখনোই সাহিত্য, মিডিয়া, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করেনা, বরং এরা বাঙ্গালীর মোড়কে মুসলিমদের উপর হিন্দু য়ানী কালচার চাপিয়ে দেয়ার আন্দোলনে লিপ্ত। এরা কখনোই সাহিত্য, সংস্কৃতি, মিডিয়া ও রাজনীতিতে বাংলাদেশের গণমানুষের চিন্তা ও মূল্যবোধের নিরপেক্ষ প্রতিনিধিত্ব করে না; বরং এরা হিন্দুয়ানি ও পশ্চিমা কালচারের মিশেল এক সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা করতে চরম সাম্প্রদায়িক এক গোষ্ঠীর স্থান দখল করে আছে।

এজন্য দেখা যায়, এরা টিপকাণ্ডের হুলস্থুল তুলে পিছনের হিজাব বিদ্বেষকে ছাপিয়ে যায়। হিজাবের প্রতি সহিংসতায় প্রতিবাদ তো দূরের কথা, এই সহিংসতার বৈধতা নির্মাণই এদের প্রধান দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। হিজাবের অধিকার চেয়ে মানবন্ধন করলে এরা প্রতিক্রিয়ায় ফেটে পড়ে। কিন্তু যখন হিজাব পরিধান করার কারণে কোন বোন হেনস্থার শিকার হয়, তখন তাদের প্রতিক্রিয়ার অঙ্গগুলো পঙ্গুত্ব বরণ করে নেয়।

ইসলাম ধর্ম অবমাননায় এদের সহিষ্ণুতার মানদণ্ড দাঁড়ায় না, কিন্তু অবমাননার অপরাধে কেউ গ্রেপ্তার কিংবা প্রতিরোধের শিকার হলে এদের হিন্দুয়ানী চেতনার মানদণ্ড জেগে উঠে। প্রগতিশীলতা, সাম্প্রদায়িকতা, নিরপেক্ষতা ও বাঙ্গালীর নামে এরা দেশে ইসলামফোবিয়া ছড়িয়ে যাচ্ছে।

পবিত্র রমজান মাসে ভারতেও বৃদ্ধি পেয়েছে মুসলিমদের উপর হি ন্দু ত্ব বাদী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের মাত্রা। কর্ণাটকে হিজাবের পক্ষে অবস্থান নেয়া মুসলিম ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। মুসলিমদের ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে। মসজিদের মিনারে উড়ানো হচ্ছে গেরুয়া পতাকা।


মনে রাখবেন, ভারতে হি ন্দু ত্ব বাদী সন্ত্রাসীদের হাওয়া এই দেশেও লাগছে এবং লাগবে। আমরা নিশ্চিন্তে আরামে বাস করব এই চিন্তার কোন সুযোগ নেই। কারণ এদেশেও তৈরি হয়েছে হি ন্দু ত্ব বাদী চিন্তা ও সংস্কৃতির মিশনারী প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া ও রাজনৈতিক দল। যারা মুসলিমদের ঘরে জন্ম নিয়েও মুসলিমদের অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। যারা মুসলিম পরিচয়ের চেয়েও কলকাতা কেন্দ্রিক পরিচয়ের প্রতি বেশি আন্তরিক ও আগ্রহী।
- Iftekhar Sifat
Next Post Previous Post