সতীদাহ প্রথা প্রথম বন্ধ করেছিলেন শাহজাহান। (হিন্দু লেখিকার রেফারেন্স আছে, মনে পড়ছে না, পরে জানাবো ইনশাআল্লাহ)। শাহজাহান আইন করে বন্ধ করেন: কেবল স্বেচ্ছায় সতীদাহ হতে চাইলে, পারবে। জোর করে কাউকে সতীদাহ করা যাবে না। হিন্দু সেনাপতি ও রাজরাজড়া নির্ভর মোগল আমলে এর চেয়ে বেশি সম্ভব ছিল না। কেননা, এসব এলিট হিন্দু পরিবারের নারীরাই নিজ পতিভক্তি প্রমাণে এলিটত্ব বজায় রাখতে সতীদাহ হবার ইচ্ছে ব্যক্ত করতো। যেটা হরেদরে বন্ধ করে দেয়াটা পলিটিক্যালি কারেক্ট না। তুলনা করুন, আধুনিক সভ্যতার স্বেচ্ছামৃত্যু কনসেপ্ট ও কিউট সুইসাইড ক্যাপসুলটার ছবিটা। যে মরতে চায়, তাকে মরতে দাও। বাদশাহ আওরঙ্গজেব রহ. এর সময় এই আইনকে আরও নিয়মকানুন ও শর্তের বেড়াজালে আরেকটু 'অসম্ভবপ্রায়' করে ফেলা হয়। তবে সত্য কথা হল, সেসময় যাতায়াত ও পুলিশিং এখনকার মতো ছিল না বলে প্রত্যন্ত এলাকায় এই আইন 'হয়তো' শতভাগ বাস্তবায়ন হতো না। এবং এটাই স্বাভাবিক। বৃটিশ এসে আইন করে বন্ধ করার পরও নানা স্থানে হয়েছে। যে কারণে আলাপটা পাড়লাম তা শুরু হচ্ছে এখন।
নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি প্রাচ্যের খারাপ, নারীকে প্রাচ্য ঘরে আটকে রাখে (?), নারীকে জ্যান্ত পোড়ায়, নারীকে মানুষ মনে করে না, বহুবিবাহ করে, বিধবা নারীর প্রতি অমানবিক আচরণ করে, বাল্যকালে নারীকে বিয়ে করে, নারীকে শিক্ষিত হতে দেয় না, হারেমে যৌন-নির্যাতন করে, দাসী বানায়। নারীর প্রতি আচরণ যেহেতু সভ্যতার একটা প্যারামিটার এবং তাতে প্রাচ্য যেহেতু পশ্চিমের মতো না, অতএব প্রাচ্য বর্বর-অসভ্য-ইতর। সুতরাং তাদেরকে সভ্য করতে উপনিবেশ প্রয়োজন। প্রচুর লেখালেখি হয়েছে এভাবে ইউরোপে। ইউরোপের জনগণের সমর্থন, পার্লামেন্টের সমর্থন এবং উপনিবেশের নেটিভদের সমর্থন তৈরি করা হয়েছে এভাবে। এটা হচ্ছে নারীর প্রাচ্যবাদী বয়ান। এই ভুল বর্ণবাদী ইউরোসেন্ট্রিক বয়ান প্রাচ্যের সভ্যতা, সংস্কৃতি, সমাজকে বর্বর ও অসভ্য করে চিত্রিত করেছে ইউরোপমানসে। যা পরবর্তী গবেষকদের গবেষণায় বার বার ভুল প্রমাণ হয়েছে। তুর্কী হারেম ঘুরে ফ্রেঞ্চ লেডী রিপোর্ট করেছেন: ফরাসি নারীদের চেয়ে তুর্কী নারীরা আরও বেশি স্বাধীন।
১৮০০ সালের দিকেও ইউরোপীয় পুরুষ ঝগড়াটে বউকে মুখে বেড়ি পরিয়ে বাজারে হাঁটিয়েছে। বউ বিক্রি করার রেওয়াজ ছিল ইংল্যান্ডে। কেবল ব্যবসার স্বার্থে প্রাচ্য সম্পর্কে ভুল-শুদ্ধ মিলিয়ে এমন কাহিনী ফাঁদা হয়েছে। নব্য-উপনিবেশবাদীরাও একই বয়ানে প্রাচ্যে আগ্রাসনের বৈধতা খুঁজছে। বলা হচ্ছে, ইসলাম নারীকে যথেষ্ট অধিকার দেয়নি, আফগানে নারীদের কী হবে, নারীরা কি পারবে স্কুলে যেতে ব্লা ব্লা। ঘুরেফিরে একই আলাপ। প্রথম আলোর মত পত্রিকাগুলো লিখছে। বিন রশিদেরা বলছে। সুর মিলিয়ে ফামা-গং বরকতময় তিন প্রজন্মের ব্যাখ্যাকে অস্বীকার করছে, অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রথম যুগের ঘটনা থেকে বেঁকিয়ে-পেঁচিয়ে মনচাহি ব্যাখ্যা বের করছে। ফিকহ-হাদিসের শিক্ষিকাকে বানিয়ে দিচ্ছে 'ফিমেল জজ-ব্যারিস্টার'। যেহেতু আমরা পরকীয়া মেনে নিইনা, নারীকে বন্ধুর বাসায় রাতে থাকতে দিই না, ভার্সিটির মেয়েদের সন্ধ্যার পর হলে ফিরতে বলি, নারীরা বাচ্চাকাচ্চার জন্য ক্যারিয়ার বিসর্জন দিচ্ছে, ১৬-১৭ তে নারীদের বিয়ে দিচ্ছি। অতএব আমরা সভ্য হয়ে উঠতে পারিনি, তালব্যনি স্টাইলে চলছি, শিক্ষিত হয়েও নারী বেকার। পশ্চিম থেকে আমাদের কপি-পেস্ট হতে হবে।
নারীবাদ একটা উপনিবেশী এজেন্ডা। সামরিক-অর্থনৈতিকভাবে উপবিনেশ টিকিয়ে রাখা, প্রাচ্য থেকে পশ্চিমে সম্পদের ফ্লো বজায় রাখার বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত। ইসলামিক ফেমিনিস্ট থেকে নিয়ে কাঠসেক্যুলার নারীবাদী, প্রত্যেকে এই কলোনিয়াল পার্পাস সার্ভ করে।
সিআইএ বলেছে: মিডল ইস্টে আধিপত্য বজায় রাখতে নারীবাদকে ব্যবহার করা হবে। আমেরিকার শক্তিশালী পলিসি থিংকট্যাঙ্ক র্যান্ড বার বার রিসার্চ করে করে এর নির্দেশনা বাতলাচ্ছে। কীভাবে সেই পুরনো প্রাচ্যবাদী বয়ান এখনও সাম্রাজ্যবাদী পলিসি হিসেবে কাজ করে, সেটাই দেখিয়েছেন তরুণ আলিম ও গবেষক হাসসান বিন সাবিত। প্রতিটি মুসলিম নারীকে জানতে হবে তাদেরকে নিয়ে চলা ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত। অন্য মুসলিম বোনদেরকে জানাতে হবে। দালালদের থেকে সতর্ক করতে হবে। পুরুষদের আরও গায়রতওয়ালা ও প্যাট্রিয়ার্ক হতে হবে। পুরুষরা বুক টান করে নারীদের আগলাবে, এটাই প্রাচ্যের কালচার। Protect ur women and children, even if u need to die for.
- শামসুল আরেফিন শক্তি