// দীর্ঘ দুই বৎসর পর আজি হইতে পুনরায় পূর্বের ন্যায় স্কুল শুরু হইল। পাঁচ কেজি ওজনের জ্ঞানের বস্তা স্কন্ধে লইয়া পুত্রত্রয় জ্ঞান অর্জনের নিমিত্তে গৃহ হইতে প্রস্থান করিল। আহা, দিনভর কলকাকলিতে মুখর গৃহখানা নিস্তব্ধ হইয়া রহিল। উহাদের অনুপস্থিতিতে ঘরগুলো খাঁ খাঁ করিতে লাগিল যেন। কী করিয়া জানিবে তাহারা, বিগত দুই বৎসর তাহাদের সহিত আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময় অতিবাহিত হইয়াছিল। চিরজীবন উহা সুখকর স্মৃতি হইয়া হৃদয়পটে অঙ্কিত রহিবে। //
সিহিন্তা ওর হোয়াটস অ্যাপে এই কথাগুলো লিখে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল। ব্যাপারটা আমাকে বেশ টাচ করেছিল।
আমরা তো বাচ্চা-কাচ্চাকে যত তাড়াতাড়ি স্কুলে দিয়ে বাচ্চা পালার কাজটা স্কুলকে দিয়ে থার্ড পার্টি আউটসোর্সিং করাতে চাই।
কিন্তু বাচ্চাদের সাথে থাকাটা আসলে কতটা এনজয় করার ব্যাপার সেটা ওর এই লেখাটা না পড়লে বুঝতে পারতাম না।
হায়াতকে নিয়ে এখন সিহিন্তার দিন-রাত যায়।
স্কুলের কাজটা ও ছেড়ে দিয়েছিল হায়াত পেটে আসার কয়েক মাসের মধ্যেই। স্বাভাবিক। মাদারহুড - পার্ট টাইম তো নইই - ২৪/৭+ এর কমিটমেন্ট।
হায়াত যখন রাতে কাঁদে, সিহিন্তা ওকে কোলে নিয়ে বসে থাকে - যাতে আমি ঘুমাতে পারি। একই সাথে মাতৃত্ব আর স্ত্রীত্ব।
তারপরেও সিহিন্তা সারাদিন হায়াতের সাথে খেলে, হাসে, কোলে নিয়ে আদর করে। এটা আসলে দুনিয়াতে জান্নাতের একটা সুখ - নিজের ছোট্ট বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে থাকা - বারাকাল্লাহু ফিকি বলা, কোলে নিয়ে আদর করা।
কিন্তু এখন মাতৃত্বকে একটা গিল্টের ব্যাপার বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
দুটোর বেশি তিনটা বাচ্চা নিলে তাকে ডাক্তাররা কথা শোনায় - ইয়েস ডাক্তাররা যাদের কাজ - রোগীকে সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে সাহায্য করা।
কিন্তু ডাক্তাররা এখন সে সমাজের অংশ যে সমাজ একজন নারীকে বলে দেবে সে কয়টা সন্তান নিতে পারবে। এই ডাক্তাররাই অল্প বয়সে কেউ মা হলে তাকে কথা শোনায় - এবরশন করে ফেলে টাকার বিনিময়ে।
খেয়াল করুন - সেক্স দোষের না, বিয়ে দোষের, মা হওয়াটা দোষের।
এখন এর সাথে যুক্ত হচ্ছে বাংলায় সেকুল্যাঙ্গাররা - ব্র্যাক - আড়ং - টাগা।
এরা বলছে - বাচ্চা নিব কি নিব না - আমার চয়েস।
এবং এই চয়েস যে এপ্লাই করবে তাকে নাকি গিল্টি বলা যাবে না - এপ্রিশিয়েট করতে হবে।
এই যে আমার খুশি - আমি বাচ্চা নিব, নাইলে নিব না - এটা মৌলিকভাবে একটা কুফরি কথা। আমি যদি নিজেকে মুসলিম বলি - আমার চয়েস নাই - আল্লাহর চয়েস আমার চয়েস।
আল্লাহ দায়িত্ব দিয়েছেন মানুষকে পরিবার গঠন করার - বিয়ে করার, বাচ্চা নেওয়ার, তাদেরকে বড় করার।
এইটা আধুনিক মানুষেরা কেন করতে চাইছে না?
কারণ তার চিল করতে ভাল্লাগে। দায়িত্ব পালন করতে ভালো লাগে না।
বাচ্চা নিলে কষ্ট করতে হয়। চিল করা যায় না।
ইউরোপ-জাপান যে ডেমোগ্রাফিক উইন্টারের সম্মুখীন হচ্ছে - কারণ একটাই মানুষ তার প্রবৃত্তিকে প্রাধান্য দিচ্ছে, দায়িত্বকে অগ্রাহ্য করছে।
আর এই প্রবৃত্তির দাসত্বকে গ্লোরিফাই করছে কাফেররা, ব্র্যাক সেইসব কাফেরদের মুখপাত্র মাত্র।
যারা আজকে মাতৃত্বকে মাই চয়েস বলছে, বাচ্চা না নেওয়াকে স্রোতের বিরুদ্ধে সাতার কাটা ভেবে গর্বিত হচ্ছে - এরা যখন বোঝে তখন মা হওয়ার বয়সটা চলে গেছে।
এক শাহবাগী মহিলার কথা আমি ফার্স্ট হ্যান্ড জানি যার ব্যক্তিগত জীবনে এই আফসোস আছে। এখন সে নিজের ইগো খেয়ে পাবলিকলি সত্য কথাটা বলতে পারে না। কিন্তু এখন আর তার কুত্তা ভালো লাগে না। একটা মানুষের মুখে 'মা' ডাক শুনতে ইচ্ছা করে।
বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়।
যে গাছে ফুল-ফল হয় না, তাকে আমরা আগাছা বলি।
আল্লাহ যদি কাউকে সন্তান না দেন - এটা আল্লাহর ইচ্ছা, আল্লাহর পরীক্ষা। আল্লাহ এই বোনদের পরীক্ষা সহজ করুন।
কিন্তু যাকে আল্লাহ মা হওয়ার সামর্থ্য দিয়েছেন কিন্তু সে সেটা রিফিউজ করছে প্রবৃত্তি আর শয়তানের দাসত্ব করতে গিয়ে - ইটস সো স্যাড অ্যা থিং টু ডু।
১/ নারী হন। মা হন। আগাছা না।
২/ যারা কুফর দুনিয়া দর্শন প্রমোট করে - ব্র্যাক, আড়ং - আরো যারা আছে - এদের অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করুন।
- Md Sharif Abu Hayat
মাতৃত্ব আর পিতৃত্বের যেই অনুভূতি ও কামনা সেটা বর্তমান প্রজম্মের ভিতর হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় অধিকাংশ তরুণ তরুণীর চিন্তা এমন থাকে যে, বিয়ের পর কিসের বাচ্ছা। ৪/৫ বছর একটু চীল করব, লাইফটা ইনজয় করব। তারপর বেবি নেয়ার চিন্তা।
কেউ ফিটনেস নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে, কেউ ক্যারিয়ারের পিছনে অন্ধের মত ছুটে, কেউ লাইফ ইনজয় করতে গিয়ে আবার কেউ বাচ্চা প্রতিপালনের ঝামেলা এড়াতে গিয়ে সন্তান নেয়াকে সমস্যাকর মনে করছে।
আসলে আমাদের প্রজন্মটা বেড়ে উঠছে একটা দায়িত্বহীন, স্বার্থপর ও বাস্তবতাহীন ফ্যান্টাসির জগতের মধ্য দিয়ে। এরা চুটিয়ে প্রেম করতে মরিয়া, কিন্তু বিবাহ কররে প্রস্তুত না। কারণ প্রেমে নেই কোন দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা। কিন্তু বিয়ের মাঝে প্রেম-ভালবাসার সাথে আরো অনেক বাস্তবতা ও দায়িত্ব কাঁধে চলে আসে।
কিছুদিন আগে একটা ছবি নজরে এসেছিল, যেখানে সন্তানকে নারীর জন্য বন্দিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করছে।যেন মাতৃত্ব নারীর জন্য একটি অভিশাপ। মাতৃত্ব যেন তার স্বাধীনতার জন্য চরম শত্রু।এখনকার মেয়েদের মধ্যে ফিটনেস ধরে রাখার আরেক ভূত দেখা যায়। ফিটনেসকে বাজারী পণ্য হিসেবে বহাল রাখতে মাতৃত্বের প্রতি চরম অবজ্ঞার আচরণ তারা করছে। আরেক ভূত হল ক্যারিয়ার, চাকুরি। নিজের পুঁজিবাদী ক্যারিয়ারের দাসী জীবন বজায় রাখতেও কেউ কেউ মাতৃত্বকে ঘৃণাভরে দেখতে শিখছে। এই আচরণগুলো মানব সভ্যতার জন্য চরম হুমকির ব্যাপার।
আজকের এই ছবিটি দেখুন। আড়ং থেকে কিভাবে মাতৃত্বের বিষয়টাকে কেবল একটা চয়েজের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করছে। সন্তান ছাড়া জীবনকে এরা ফ্রী লাইফ তথা স্বাধীন জীবন হিসেবে উপস্থাপন করছে। তারমানে সন্তান ও মাতৃত্বের জীবন কি বন্দিত্ব? তারা তো এটাই বলতে চাচ্ছে। এভাবে নারীর মাতৃত্বের প্রতি নেতিবাচকতা ছড়িয়ে এরা কি নারীকে মূল্যায়ন করছে নাকি নারীর চরম অবমূল্যায়ন করছে? নারী দিবস উপলক্ষে আড়ংয়ের প্রতিবাদ্য ভিডিওটিতে প্রতিটি শ্লোগানই বিষাক্ত, যা মুসলিম নারীদের লাইফস্টাইলের প্রতি সরাসরি বিষোদগার ছাড়া কিছুই না।
এই মানুষগুলো চিন্তা করে না, তাদের পিতা মাতা যদি মাতৃত্ব ও পিতৃত্বের প্রতি এমন অভজ্ঞাভাব রাখত তবে তারা কিভাবে দুনিয়ার মুখ দেখত, কিভাবে জীবনের এই পর্যায়ে এসে তারা দাঁড়াতে পারত।
ইসলামি শরীয়ায় মাতৃত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ বিষয়। এই সংক্রান্ত আয়াত ও হাদীসগুলো লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, মাতৃত্ব আর পিতৃত্বের মাঝে কত ফজিলত, আবেগ, ভালবাসা ও সম্মানকে ঢেলে দিয়েছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। এমনকি ইসলামী শরীয়ার মৌলিক মাকাসিদের সাথে মাতৃত্ব ও পিতৃত্বের সম্পর্ক সুগভীর। এই সম্পর্ক ও অনুভূতি আল্লাহর দেয়া নেয়ামত। একে ঘৃণা নয়, অনুভব করুন। ছড়িয়ে দিন প্রতি হৃদয়ে হৃদয়ে আপনার ভিতরের জমানো সেই পবিত্র অনুভবের ছোঁয়া। মহৎ করে তুলুন স্বর্গীয় এই আবেগকে।
আর যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্ব মুসলিম লাইফস্টাইলের বিরুদ্ধে নিয়মিত ঘৃণা ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং সেই জায়গায় পশ্চিমা লাইফস্টাইল রিপ্লেস করার সংগ্রাম করছে তাদের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়া ও সচেতন করা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। তাদের সার্বিকভাবে বয়কট করুন।
- Iftekhar Sifat