ইংরেজদের আগ্রাসনের সময়ে কিছু আলেম ফতোয়া দিয়েছিলেন যে ইংরেজি ভাষা হারাম। ৩০০ বছর পরে এসেও কিছু মুসলিম আলেমদের অপমান করতে আলেমদের মতামত কে কটাক্ষ করতে এখনো সেই ফতোয়ার কথা বলে আক্রমণ করে।
আজকে এই পোস্টে দুই জন ইসলামিক লেখক ইমরান রাইহান এবং ইফতেখার সিফাত ভাই এর এই বিষয়ে ২টি লেখা পাবেন। পড়লে আশা করি অনেক কিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ্।
আলেমদের ফতোয়া - ইংরেজী ভাষা হারাম?
১। কিছু মানুষ দেখবেন খুব হৈ চৈ করে। জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা না করায় মুসলমানদের অধঃপতন, এই মুখস্থ বুলি আউড়ে তারা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। মাদরাসার মোল্লারা জ্ঞান বিজ্ঞান না শিখে কিতাবাদি নিয়ে বসে আছে বলে তাদের বেশ গাত্রদাহ। একটু খেয়াল করলে দেখবেন এইসকল লোকজন না জ্ঞান বিজ্ঞান শিখেছে, না মাদরাসায় বসে ইলম শিখেছে। দুকুল হারানো এমন লোকদের কথায় বেশি গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই।
২। ইংরেজি শেখা হারাম এই ফতোয়া দেয়ায় এ অঞ্চলের আলেমরা এখনো পিছিয়ে আছে, এই মুখস্থ বুলি আউড়ে স্মার্ট সাজেন অনেকে। এই ফতোয়ার রেফারেন্স কী জিজ্ঞেস করলে অনেকের মুখে তালা লেগে যাবে। কোন প্রেক্ষাপটে এই ফতোয়া, কতদিন আলেমদের এই অবস্থান ছিল, বর্তমান অবস্থান কী, ইংরেজি শেখা সবার জন্য শতভাগ জরুরি কিনা, জেনারেল ঘরানায় শতকরা কতজন খুব ভালো ইংরেজি জানেন, এখন শতকরা কতজন ভালো আলেম ইংরেজি জানেন, ইংরেজি না জানার কারণে আলেমদের ইলমি কাজে বড় কোনো শূন্যতা এসেছে কিনা, ইউরোপ আমেরিকায় দ্বীন প্রচারের জন্য ইংরেজি জানা দরকার, সেখানে আলেমরা পিছিয়ে আছেন কিনা, এই পয়েন্টগুলো ধরে আলোচনা করেন, দেখবেন হজরতজি আর সামনে এগুতে পারছে না। কারণ সহজ, তোতা পাখি শুধু মুখস্থ কথাই বলে বেড়ায়, আগে পরে কিছু বলতে পারে না।
৩। অনেককে দেখবেন ফতোয়ার উপর খুব বিরক্ত। কথায় কথায় ফতোয়ার উপর রাগ তার। এমন হলে বুঝবেন ভদ্রলোক এমন কিছু করেছেন বা করতে চাচ্ছেন যেখানে ফতোয়ার কারণে আগাতে পারছেন না। এবার সেটা নজরুলের মত হিন্দু মেয়ে বিয়ে হোক কিংবা অন্য কোনো ইস্যু। ফতোয়ার কারণে বিভেদ আর বিশৃঙ্খলা বলে যারা উদার সাজেন তারাও কিন্তু সময় পেলে অন্যের উপর হালুয়াখোর-রুটিখোর ধরনের ট্যাগ মারতে ভুলেন না। ফতোয়া সবাইই দেয়, কেউ দেয় ফিকহ অনুসারে, কেউ দেয় নিজের নফসের খাহেশাত মেটাতে।
৪। নতুন কিছু শুনলেই সংস্কারধর্মী কাজ ভেবে লাফানোর কিছু নেই। প্রতিটা বিদআত নতুন কাজ ও সংস্কারের সুরত ধরেই আসে। চিন্তার বিপর্যয়গুলোও খুব লোভনীয়, চকচকে মোড়কেই আমদানি হয়।
৫। ইংরেজি শেখার বিষয়টি নির্ভর করবে প্রত্যেকের অবস্থান অনুযায়ী। যেমন, ইউরোপ আমেরিকায় দাওয়াতের কাজ করেন এমন আলেমরা সবাই ভালো ইংরেজি পারেন৷ আধুনিক বিষয় নিয়ে কাজ করেন এমন মুফতিরাও ভালো ইংরেজি পারেন। ইসলামি বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন তাদের বড় অংশও ইংরেজি পারেন। কিন্তু তারা কথায় কথায় ইংরেজি শব্দ বলে স্মার্ট সাজার ভান করে খিচুড়ি ভাষার জন্ম দেন না। হ্যা, যারা গ্রামে গঞ্জে মসজিদ মাদরাসা নিয়ে আছেন তারা ইংরেজি জানেন না। জানার দরকারও নেই তাদের। কিন্তু অনেকে ওয়াজ মাহফিলে ঘুরে ঘুরে ইংরেজি না জানা হুজুরকে খ্যাত প্রমান করতে ব্যস্ত৷ তাদের এসব বক্তব্যের কারণে গ্রামবাসির কাছে সেসব হুজুররা হয়ে উঠেন গেঁয়ো, মূর্খ। আড়ালে চলে যায় তাদের অবিশ্বাস্য খেদমত ও অবদানের কথা। এই বিশ্রী প্রবনতার বিরুদ্ধে নিন্দা জানাই।
- ইমরান রাইহান
কেনো মুসলিমরা ইংরেজদের ভাষা থেকে দূরে ছিলো?
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় উলামায়ে কেরাম ইংরেজি ভাষা শিক্ষা হারাম হওয়ার ফতোয়া দিয়েছিলেন। বর্তমানে আধুনিক শিক্ষায় প্রভাবিত অনেক মুসলিম আজকের যুগে এসে উলামায়ে কেরামের সেই ফতোয়াকে কেন্দ্র করে তিরস্কার করেন। উলামায়ে কেরাম নাকি জাতিকে এই ফতোয়ার কারণে অনেক বছর পিছিয়ে দিয়েছেন।
এই ধরণের তিরস্কার মূলত সেই উপনিবেশিক মানসিকতারই ফসল। যারা বর্তমান সময়ে এসে ১০০ বছরেরও আগের ফতোয়াকে কেন্দ্র করে উলামাদের তিরস্কার করছেন তারা মূলত তখনকার সময়ের অবস্থাকে বিবেচনায় নেন না। তখনকার সময়ের পৃথিবীতে ইংরেজী বর্তমান সময়ের মত মান রাখত না।
আর সবচেয়ে বড় কথা হল, তখনকার পরিস্থিতিতে ইংরেজি ভাষা কেবলই একটা ভাষা ছিল না, ছিল একটা সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধারক। যা তখনকার সময়ে ইংরেজি শিক্ষা লাভকারীদের অবস্থা দেখলেই স্পষ্ট। ইংরেজি শিক্ষিত লোকগুলো বৃটিশ শাসনের গুণগান গায়ত, তাদের গোলামির সাফাই গায়ত এবং ভারত উপমহাদেশে সেই বৃটিশ সিস্টেমেরই প্রতিষ্ঠা চায়ত। পরবর্তী বাস্তবতা থেকেও আমরা দেখতে পাই, এই শিক্ষিত লোকগুলোর কারণেই উপমহাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার নানা প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে।
সকল ভাষাই আল্লাহর সৃষ্টি। কোন ভাষা শিক্ষাতে ইসলামের কোন সাধারণ নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু নির্দিষ্ট কোন ভাষা শিক্ষা যখন কেবল ভাষার ভিতরেই সীমাবদ্ধ না থেকে উপনিবেশিক রূপ লাভ করে তখন সেটা আগ্রাসনের অস্ত্র হয়ে যায়। উলামায়ে কেরাম সেই প্রেক্ষাপটেই এই ফতোয়া দিয়েছিলেন। বর্তমান সময়েও আমরা মিডিয়া ও নানা সিস্টেমের কারণে বাংলা ভাষার উপর ইংরেজি ভাষার আগ্রাসন দেখতে পাই। আমাদের প্রজন্ম তাদের নিত্যদিনের কথা বলার অনেক শব্দেরই বাংলা জানেই না। মানে ইংরেজি শব্দটাই এর স্থান দখল করে নিয়েছে।
সুতরাং উলামায়ে কেরামের ফতোয়ার তিরস্কার এবং সেটাকে উম্মাহর পশ্চাতপদতার জন্য দায়ী করার আগে বিবেচনা করেন তাদের ফতোয়ার প্রেক্ষাপট। মনে রাখবেন তাদের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ফলেই আজও এখানে আমাদের সভ্যতা ও ঐতিহ্য কিছুটা হলেও বজায় আছে। নতুবা আমরা হারিয়ে যেতাম সাদা চামড়ার অসভ্যতায়।
- Iftekhar Sifat
৫২ সালের উর্দু ভাষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ভালো হলে আলেমদের ইংরেজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কেনো ভালো না?
১। নামধারি মুসলিম কিংবা মুনাফিক কিংবা নাস্তিক গুলো জানে না ভাষার ইতিহাস, না জানে আলেমদের ফতোয়ার ধরন এর ব্যাখ্যা আর না জানে ইংরেজদের ইতিহাস।
২। আলেমরা যদি ভাষা সম্পর্কে না জানতেন না বুঝতেন তারা যদি মূর্খের মতই ইংরেজি ভাষা হারাম ফতোয়া দিতেন তাহলে ৮০০ বছর ধরে ভারতে মুসলিম শাসন আমলে বাংলা, তামিল, গুজরাটি, মারাঠি, বিহারি, উর্দু, হিন্দি এসব ভাষা কে কেন হারাম বলেননি?
আলেমদের খা দায় কাজ নাই হুদায় এমনে এমনে একটা ভাষা কে হারাম বলে দিবে??
৩। ইংরেজরা ইংরেজি ভাষা কে আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে, আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে ঠেলে তাদের দাস বানাতে ইংরেজি ভাষা কে ব্যবহার করতো আর এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েই ইংরেজি ভাষা থেকে দূরে থাকার জন্য আলেমরা নির্দেশ দিয়েছিলো।
৪। ব্রিটিশদের ইংরেজি ভাষায় সমস্যা না থাকলে পাকিস্তানের উর্দু ভাষায় কি সমস্যা ছিলো।
ইংরেজি ভাষা হারাম বলায় আলেমরা খারাপ(!) তাহলে ৫২ সালে বাঙ্গালিরা যে উর্দু ভাষা কে হারাম বলে ফতয়া দিয়ে একদম রাস্তা নেমে পরলো সেটা কি??
ইংরেজদের দালালি করতে খুব মজা লাগে?? খোঁজ নিয়ে দেখ তোদের বাপ দাদারা কাফের ইংরেজদের বীর্যের অবৈধ সন্তান কিনা। নাহলে ৩০০ বছর পরে এসেও ব্রিটিশদের দালালি কেন করিস?
পাকিস্তান যেমন বাঙালি কে পিছিয়ে রাখতে উর্দু ভাষার চলন করতে চেয়েছিলো ঠিক একই কারনে ব্রিটিশরাও ভারতের আম জনতার ভাষা কে বাদ দিয়ে ইংরেজি ভাষার চলন করেছিলো।
৫২ সালের বাঙ্গালিদের উর্দুর প্রতি প্রতিবাদ যদি ভালো হয় তাহলে আলেমদের ইংরেজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কেনো ভাল হবে না?
একই কেসের ২ রকম রায় কেনো?? ভণ্ড কাফেরের দল তোরা।
- মীর সাকিব