হিন্দুদের পূজায় মুসলমানদের যাওয়া যাবে কি নাকি হারাম?
যারা পূজার অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন/যেতে চাচ্ছেন...ঃ হিন্দুদের পূজায় মুসলমানদের যাওয়া হারাম?
যারা পূজার অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন/যেতে চাচ্ছেন...
.আজ থেকে পনেরো শত বছর আগেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে গেছেন এই বলে যে, ‘‘শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তিপূজা করবে এবং কিছু লোক মূর্তিপূজারীদের
.
উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সাবধান করে বলে গেছেন, ‘তোমরা মুশরিকদের (যারা মূর্তি বা অন্য কিছুকে আল্লাহর সাথে শরিক করে) উৎসবের দিনগুলোতে তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। কারণ তখন তাদের উপর আল্লাহর গজব অবতীর্ণ হতে থাকে।’ [বায়হাকি, সুনানুল কুবরা: ১৮২৮৮]
.
সাবধান প্রিয় ভাই-বোনেরা, হিন্দুদের পূজায় গিয়ে নিজের ইমানকে সংশয়ে ফেলবেন না। আল্লাহ তা’আলার ক্রোধের শিকার হওয়া থেকে বেঁচে থাকুন। শির্কের গুনাহ আল্লাহ্ ক্ষমা করেন না। একজন মুসলিম কীভাবে শির্কের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন উপভোগ করতে পারে?
.
যে নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সারাজীবন মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, যে জন্য এত নির্যাতিত হয়েছেন, তাঁর উম্মত হয়ে কীভাবে আমরা সেই পূজায় গিয়ে আনন্দ করতে পারি?
.
বিধর্মীদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে ইমামগণ বিভিন্ন ফতোয়া প্রদান করেছেন।
.
হানাফি ফক্বিহ ইমাম আবু হাফস আল কাবির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি পঞ্চাশ বছর আল্লাহর ইবাদত করে, অতঃপর সে যদি মুশরিকদের উৎসবের সময় সেই দিনকে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক কোন মুশরিককে কিছু উপহার দেয়, তবে সে কুফরি করেছে এবং নিজের সমস্ত আমল ধ্বংস করেছে।’ [হাসকাফি, দুররুল মুখতার: ৬/৭৪৫]
.
ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তির স্ত্রী খ্রিস্টান হয়, তবুও তাকে খ্রিস্টানদের উৎসবে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দিয়ো না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা গুনাহের সাথে কোনো ধরণের সমঝোতা করতে নিষেধ করে দিয়েছেন।’ [ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনি: ৯/৩৬৪]
.
(নোট: শর্তসাপেক্ষে ইহুদি-খ্রিস্টান
.
ভালোভাবে জেনে রাখুন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ বাক্যটি কুফরি। এই ধরণের কথা বলা ইসলামের মূলনীতি, চেতনা ও আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক। ধর্ম যার, উৎসবও তার। অতএব, পূজায় অংশ নেওয়া যাবে না, পূজা দেখতে যাওয়া যাবে না এবং পূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা যাবে না।
.
আমরা কাউকে তার নিজ ধর্ম পালনে বাধা দেবো না, আবার নিজেদের বাদে অন্যদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশও নেবো না। হিন্দু সম্প্রদায় বা কোনো অমুসলিমের সাথে সদাচরণ করা, তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ানো, তাদের সাথে লেনদেন করা—এগুলো ইসলাম বৈধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু কোনোভাবেই ধর্মীয় ব্যাপারে তাদের সাথে মেশা যাবে না।
.
#সহিহ_আকিদা
#বিশুদ্ধ_ঈমান (দশম পর্ব)
পূর্বের সকল পর্বের লিংক কমেন্টে পাবেন। ইনশাআল্লাহ, আকিদার এই সিরিজটি আবারো চলমান থাকবে। আল্লাহর রহমতে, আজ ১০ টি পর্ব সম্পন্ন হলো।
কাফেরদের মূর্তি দেব দেবী কে গালি দেওয়া বা না দেওয়া
মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে বিধর্মীদের মূর্তিগুলোকে গালি দিতে নিষেধ করেছেন। এই নিষেধাজ্ঞার কারণ হল, যেন শত্রুতা কিংবা অজ্ঞতাবশত তারাও আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে গালিগালাজ শুরু না করে। এই বিধান এখনো পর্যন্ত বহাল আছে। তবে এখানে মুসলিমদের কাছে একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া জরুরী। অধিকাংশ সাধারণ মুসলিম এবং অনেক আলেমও এই জায়গাটাতে ভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন।
গালি দ্বারা এখানে আক্ষরিক অর্থেই গালিগালাজ উদ্দেশ্য। কিন্তু তাদের এই মূর্তিগুলোকে ভ্রান্ত ইলাহ বলা, তাদের পূজা করাকে কুফুর- শিরক বলা এবং একজন মুমিন হিসেবে এটা জানানো যে, আমি এই কর্মগুলোকে ঘৃণা করি- এই ধরণের কাজগুলো কখনোই গালির অন্তর্ভুক্ত নয়। কেউ যদি এগুলোকে গালির অন্তর্ভুক্ত করে, তাহলে সে যেন এই দাবি করে বসল যে, পবিত্র কুরআনে বৈপরীত্য আছে। অথচ মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনকে যেকোন প্রকার বৈপরীত্য থেকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন।
প্রশ্ন হতে পারে, সে কীভাবে বৈপরীত্যের দাবি করে বসল এর মাধ্যমে? কারণ পবিত্র কুরআনে বারবার এই মুর্তিগুলোকে বাতিল বলা হয়েছে, এদের পূজা করাকে কুফুর ও শিরক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এর প্রতি ঘৃণাবোধকে ঈমানের আলামত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সুতরাং যেই কুরআনে এই বিষয়গুলো বহুবার এসেছে, সেই কুরআনই যখন গালি দিতে নিষেধ করছে। তখন বুঝতে হবে এই বিষয়গুলো গালির অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এখানে আক্ষরিক অর্থেই গালি উদ্দেশ্য। বিধর্মীদের খারাপ লাগে এমন যেকোন কর্মই এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অতি অসম্প্রদায়িকতা দেখাতে গিয়ে আমরা এমন ভাব প্রকাশ করি, যেন এগুলোও গালির অন্তর্ভুক্ত। ব্যক্তিগতভাবে কেউ ইন্টারফেইথে বিশ্বাস না রাখলেও এই ধরণের ভাব প্রকাশ করা নিশ্চিতভাবেই আন্তধর্মীয় বিশ্বাসের বাহ্যিক চরিত্রকে ধারণ করে। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ডায়ালগে কখনোই এমন নতজানু ও কৈফিয়তবাদী আচরণ ছিল না। তাঁর ডায়ালগ ছিল আপোষহীন দাওয়াতের।
কিন্তু আমাদের দায়ী আর খতিবদের ডায়ালগ আজ আপোষে জর্জরিত। তারা সুস্পষ্ট করে বলে দিতে পারে না যে, "এগুলো বাতিল ইলাহ। এগুলোর পূজা করা কুফুর শিরক। তোমরা পূজা করে মহা অন্যায় করছো। মুসলিম হিসেবে এই কর্মগুলোকে আমরা ঘৃণা করি, শ্রদ্ধা নয়। আমরা এসব আয়োজনে কাউকে শুভেচ্ছা জানাতে পারি না" এই কথাগুলো বলার দ্বারা কখনোই তাদের ধর্ম পালনের অধিকারকে নাকোচ করা হয় না।
মূর্তি ভাঙ্গা বিধানগতভাবে একটি আপেক্ষিক বিষয়। কখনো তা বৈধ আবার কখনো তা অবৈধ হতে পারে। কিন্তু বর্তমান দেশের বাস্তবতায় আমরা মুসলিমদেরকে কখনোই প্রতিমা ভাঙ্গার প্রতি উৎসাহিত করি না। একই সাথে প্রতিমা পাহারা দেয়ার প্রতিও তাদেরকে আমরা উৎসাহিত করতে পারি না। একটি সেকুলার রাষ্ট্র হিসেবে এই দায়িত্ব সেকুলার প্রশাসনের। যেখানে পূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো, পূজার অনুষ্ঠানে গমন সহ সংশ্লিষ্ট আরো বিষয় সুস্পষ্ট হারাম। সেখানে মিম্বার থেকে কীভাবে সাধারণ মুসলিমদেরকে মণ্ডপ পাহারা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হতে পারে এবং সেটাকে ঈমানী দায়িত্ব হিসেবেও আখ্যায়িত করতে পারে!
আমাদের রাসূল, আমাদের খলীফারা, আমাদের সালাফরা এবং আমাদের ইমামদের থেকে এমন নজীর আজ পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারবে না। এই দায়িত্ব পালনের জন্য সেকুলার পুলিশ আছে। মুসলমানদের কাঁধে এই দায়িত্ব কেউ চাপিয়ে দিতে পারে না। মূর্তি ভাঙ্গার কর্মগুলো তো হিন্দুদেরও হতে পারে। আপনার পাহারা দেয়া অবস্থায় যদি মূর্তি ভাঙ্গা পড়ে, তখন সেটার দায় তো আরো বেশি করে আপনার উপর আসবে। আমরা মুসলিমরা আজ অতি কৈফিয়তবাদী হয়ে গেছে। আকল, বিবেক, মানবতার দোহাই দিতে গিয়ে আমরা নুসুসকে ছেড়ে বসেছি। আমাদের ডায়ালগে শুধু কৈফিয়ত আর কৈফিয়ত। নেই আপোষহীন দাওয়াতের উপস্থিতি। নেই মুসলিমদের পক্ষে মজবুত অবস্থান।
- Iftekhar Sifat