হিন্দুদের পূজায় মুসলমানদের যাওয়া যাবে কি নাকি হারাম?

যারা পূজার অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন/যেতে চাচ্ছেন...ঃ  হিন্দুদের পূজায় মুসলমানদের যাওয়া হারাম? 



 যারা পূজার অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন/যেতে চাচ্ছেন...

.
আজ থেকে পনেরো শত বছর আগেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে গেছেন এই বলে যে, ‘‘শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তিপূজা করবে এবং কিছু লোক মূর্তিপূজারীদের সাথে মিশে যাবে।’’ [ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৯৫২]
.
উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সাবধান করে বলে গেছেন, ‘তোমরা মুশরিকদের (যারা মূর্তি বা অন্য কিছুকে আল্লাহর সাথে শরিক করে) উৎসবের দিনগুলোতে তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। কারণ তখন তাদের উপর আল্লাহর গজব অবতীর্ণ হতে থাকে।’ [বায়হাকি, সুনানুল কুবরা: ১৮২৮৮]
.
সাবধান প্রিয় ভাই-বোনেরা, হিন্দুদের পূজায় গিয়ে নিজের ইমানকে সংশয়ে ফেলবেন না। আল্লাহ তা’আলার ক্রোধের শিকার হওয়া থেকে বেঁচে থাকুন। শির্কের গুনাহ আল্লাহ্ ক্ষমা করেন না। একজন মুসলিম কীভাবে শির্কের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন উপভোগ করতে পারে?
.
যে নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সারাজীবন মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, যে জন্য এত নির্যাতিত হয়েছেন, তাঁর উম্মত হয়ে কীভাবে আমরা সেই পূজায় গিয়ে আনন্দ করতে পারি?
.
বিধর্মীদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে ইমামগণ বিভিন্ন ফতোয়া প্রদান করেছেন। 
.
হানাফি ফক্বিহ ইমাম আবু হাফস আল কাবির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি পঞ্চাশ বছর আল্লাহর ইবাদত করে, অতঃপর সে যদি মুশরিকদের উৎসবের সময় সেই দিনকে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক কোন মুশরিককে কিছু উপহার দেয়, তবে সে কুফরি করেছে এবং নিজের সমস্ত আমল ধ্বংস করেছে।’ [হাসকাফি, দুররুল মুখতার: ৬/৭৪৫]
.
ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তির স্ত্রী খ্রিস্টান হয়, তবুও তাকে খ্রিস্টানদের উৎসবে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দিয়ো না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা গুনাহের সাথে কোনো ধরণের সমঝোতা করতে নিষেধ করে দিয়েছেন।’ [ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনি: ৯/৩৬৪]
.
(নোট: শর্তসাপেক্ষে ইহুদি-খ্রিস্টান তথা আহলে কিতাব নারীদের বিবাহ করা ইসলামে বৈধ। তবে কোনো আহলে কিতাব পুরুষের সাথে মুসলিম নারীর বিবাহ বৈধ নয়)
.
ভালোভাবে জেনে রাখুন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ বাক্যটি কুফরি। এই ধরণের কথা বলা ইসলামের মূলনীতি, চেতনা ও আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক। ধর্ম যার, উৎসবও তার। অতএব, পূজায় অংশ নেওয়া যাবে না, পূজা দেখতে যাওয়া যাবে না এবং পূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা যাবে না।
.
আমরা কাউকে তার নিজ ধর্ম পালনে বাধা দেবো না, আবার নিজেদের বাদে অন্যদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশও নেবো না। হিন্দু সম্প্রদায় বা কোনো অমুসলিমের সাথে সদাচরণ করা, তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ানো, তাদের সাথে লেনদেন করা—এগুলো ইসলাম বৈধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু কোনোভাবেই ধর্মীয় ব্যাপারে তাদের সাথে মেশা যাবে না।
.
#সহিহ_আকিদা
#বিশুদ্ধ_ঈমান (দশম পর্ব)
পূর্বের সকল পর্বের লিংক কমেন্টে পাবেন। ইনশাআল্লাহ, আকিদার এই সিরিজটি আবারো চলমান থাকবে। আল্লাহর রহমতে, আজ ১০ টি পর্ব সম্পন্ন হলো।
- Tasbeeh 

কাফেরদের মূর্তি দেব দেবী কে গালি দেওয়া বা না দেওয়া 

মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে বিধর্মীদের মূর্তিগুলোকে গালি দিতে নিষেধ করেছেন। এই নিষেধাজ্ঞার কারণ হল, যেন শত্রুতা কিংবা অজ্ঞতাবশত তারাও আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে গালিগালাজ শুরু না করে। এই বিধান এখনো পর্যন্ত বহাল আছে। তবে এখানে মুসলিমদের কাছে একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া জরুরী। অধিকাংশ সাধারণ মুসলিম এবং অনেক আলেমও এই জায়গাটাতে ভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন।


গালি দ্বারা এখানে আক্ষরিক অর্থেই গালিগালাজ উদ্দেশ্য। কিন্তু তাদের এই মূর্তিগুলোকে ভ্রান্ত ইলাহ বলা, তাদের পূজা করাকে কুফুর- শিরক বলা এবং একজন মুমিন হিসেবে এটা জানানো যে, আমি এই কর্মগুলোকে ঘৃণা করি- এই ধরণের কাজগুলো কখনোই গালির অন্তর্ভুক্ত নয়। কেউ যদি এগুলোকে গালির অন্তর্ভুক্ত করে, তাহলে সে যেন এই দাবি করে বসল যে, পবিত্র কুরআনে বৈপরীত্য আছে। অথচ মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনকে যেকোন প্রকার বৈপরীত্য থেকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন।


প্রশ্ন হতে পারে, সে কীভাবে বৈপরীত্যের দাবি করে বসল এর মাধ্যমে? কারণ পবিত্র কুরআনে বারবার এই মুর্তিগুলোকে বাতিল বলা হয়েছে, এদের পূজা করাকে কুফুর ও শিরক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এর প্রতি ঘৃণাবোধকে ঈমানের আলামত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সুতরাং যেই কুরআনে এই বিষয়গুলো বহুবার এসেছে, সেই কুরআনই যখন গালি দিতে নিষেধ করছে। তখন বুঝতে হবে এই বিষয়গুলো গালির অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এখানে আক্ষরিক অর্থেই গালি উদ্দেশ্য। বিধর্মীদের খারাপ লাগে এমন যেকোন কর্মই এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়।


কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অতি অসম্প্রদায়িকতা দেখাতে গিয়ে আমরা এমন ভাব প্রকাশ করি, যেন এগুলোও গালির অন্তর্ভুক্ত। ব্যক্তিগতভাবে কেউ ইন্টারফেইথে বিশ্বাস না রাখলেও এই ধরণের ভাব প্রকাশ করা নিশ্চিতভাবেই আন্তধর্মীয় বিশ্বাসের বাহ্যিক চরিত্রকে ধারণ করে। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ডায়ালগে কখনোই এমন নতজানু ও কৈফিয়তবাদী আচরণ ছিল না। তাঁর ডায়ালগ ছিল আপোষহীন দাওয়াতের।

কিন্তু আমাদের দায়ী আর খতিবদের ডায়ালগ আজ আপোষে জর্জরিত। তারা সুস্পষ্ট করে বলে দিতে পারে না যে, "এগুলো বাতিল ইলাহ। এগুলোর পূজা করা কুফুর শিরক। তোমরা পূজা করে মহা অন্যায় করছো। মুসলিম হিসেবে এই কর্মগুলোকে আমরা ঘৃণা করি, শ্রদ্ধা নয়। আমরা এসব আয়োজনে কাউকে শুভেচ্ছা জানাতে পারি না" এই কথাগুলো বলার দ্বারা কখনোই তাদের ধর্ম পালনের অধিকারকে নাকোচ করা হয় না।


মূর্তি ভাঙ্গা বিধানগতভাবে একটি আপেক্ষিক বিষয়। কখনো তা বৈধ আবার কখনো তা অবৈধ হতে পারে। কিন্তু বর্তমান দেশের বাস্তবতায় আমরা মুসলিমদেরকে কখনোই প্রতিমা ভাঙ্গার প্রতি উৎসাহিত করি না। একই সাথে প্রতিমা পাহারা দেয়ার প্রতিও তাদেরকে আমরা উৎসাহিত করতে পারি না। একটি সেকুলার রাষ্ট্র হিসেবে এই দায়িত্ব সেকুলার প্রশাসনের। যেখানে পূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো, পূজার অনুষ্ঠানে গমন সহ সংশ্লিষ্ট আরো বিষয় সুস্পষ্ট হারাম। সেখানে মিম্বার থেকে কীভাবে সাধারণ মুসলিমদেরকে মণ্ডপ পাহারা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হতে পারে এবং সেটাকে ঈমানী দায়িত্ব হিসেবেও আখ্যায়িত করতে পারে!


আমাদের রাসূল, আমাদের খলীফারা, আমাদের সালাফরা এবং আমাদের ইমামদের থেকে এমন নজীর আজ পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারবে না। এই দায়িত্ব পালনের জন্য সেকুলার পুলিশ আছে। মুসলমানদের কাঁধে এই দায়িত্ব কেউ চাপিয়ে দিতে পারে না। মূর্তি ভাঙ্গার কর্মগুলো তো হিন্দুদেরও হতে পারে। আপনার পাহারা দেয়া অবস্থায় যদি মূর্তি ভাঙ্গা পড়ে, তখন সেটার দায় তো আরো বেশি করে আপনার উপর আসবে। আমরা মুসলিমরা আজ অতি কৈফিয়তবাদী হয়ে গেছে। আকল, বিবেক, মানবতার দোহাই দিতে গিয়ে আমরা নুসুসকে ছেড়ে বসেছি। আমাদের ডায়ালগে শুধু কৈফিয়ত আর কৈফিয়ত। নেই আপোষহীন দাওয়াতের উপস্থিতি। নেই মুসলিমদের পক্ষে মজবুত অবস্থান।

- Iftekhar Sifat 


আজকাল পূজা মণ্ডপ পাহারা দেয়াটা ইসলামিস্টদের কাছে একটা ট্রেডিশন হয়ে গেছে। আগে রাজনীতির জন্য করা হত আজকাল কিসের জন্য করা হয় জানি না, আল্লাহই ভালো জানেন।
.
অনলাইনে আজকাল পপুলারিটি পাওয়া এক খতিব সাহেবের ভিডিও ক্লিপ দেখলাম ৪ মিনিটের, উনি হিন্দু ভাই(!) দের বলছেন মন্দিরে ভাঙচুরের আশঙ্কা থাকলে যেন ইমাম সাহেবকে খবর দেন, ইমানদারদের দায়িত্ব হিসেবে এসব রক্ষা করবেন।
.
আমি আসলে এখনো অবুঝ, আমি জানি না এটা কোন ঈমান যা মূর্তি বাঁচাতে বলে। আমি তো ঐ তাওহিদে বিশ্বাসী ছিলাম যা মূর্তি ভাঙতে বলে। হ্যা একটা পয়েন্ট আছে যে পূজারি থাকলে মন্দিরও থাকবে, কিন্তু সেটা ভিন্ন ইস্যু। অন্তত আমাদের ঈমান মূর্তি বাঁচাতে বলেনা।
.
আমরা তো ইবরাহীম(আ.) এর মিল্লাতের অনুসারী যিনি মন্দিরে ভেঙে দিয়েছিলেন সব মূর্তি। আমার আল্লাহ বলেছেন-
قد كانت لكم أسوة حسنة في إبراهيم والذين معه
.
"তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তাঁর সাথীদের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ"-[আল মুমতাহনা: ৪]
.
আর আমাদের রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেখে গিয়েছেন তার নমুনা। আলী(রা.) বলেন-
.
انطَلقتُ أنا ورسولُ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ حتى أَتَيْنا الكَعْبةَ، فقال لي نبيُّ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ: اجلِسْ وصعِدَ على مَنْكِبي فنفَضْتُه فنزَلَ، وجلَسَ لي نبيُّ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، فقال: اصعَدْ على مَنْكِبي. قال: فنهَضَ بي نبيُّ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، وإنَّه ليُخيَّلُ إليَّ أنِّي لو شِئتُ لنِلتُ أُفُقَ السماءِ حتى صعِدتُ على البَيتِ وعليه تَماثيلُ صُفرٌ، أو نُحاسٌ، فجعَلتُ أُزاوِلُه يَمينًا وشِمالًا، ومِن بينِ يدَيْه ومِن خَلْفِه، حتى إذا استَمْكَنتُ منه، قال لي رسول اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ: اقذِفْ به. فقذَفتُ به، فتكسَّرَ كما تكَسَّرُ القَواريرُ، ثمَّ نزَلتُ فانطَلَقتُ أنا ورسولُ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ نستبِقُ حتى توارَيْنا بالبُيوتِ؛ خَشيةَ أنْ يَلْقانا أحدٌ مِن الناسِ.
.
"আমি ও রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একত্রে রওনা দিয়ে কা'বায় পৌছালাম। তখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, বস। (আমি বসার পর) তিনি আমার কাঁধে আরোহণ করলেন কিন্তু আমি তাকে নড়িয়ে দিলাম তাই তিনি নেমে গেলেন। তখন তিনি আমার জন্য বসে পড়লেন ও বললেন ,আমার কাঁধে ওঠ। (আমি ওঠার পর) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। এতে আমার মনে হল যদি আমি চাই তাহলে আমি আসমান ছুঁতে পারব। এক পর্যায়ে আমি কা'বার একটা স্থানে আরোহণ করলাম যেখানে পিতল বা তামার মূর্তি ছিল।
আমি সেটাকে সরানোর জন্য ডানে-বামে, সামনে পেছনে টানতে লাগলাম। এক পর্যায়ে আমি তাতে সক্ষম হলাম।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, ওটা ছুঁড়ে মার, আমি ছুঁড়ে মারলাম। ফলে সেটি কাঁচের পাত্রের মত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
এরপর আমি উপর থেকে নেমে এলাম, এবং আমি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখান থেকে রওনা দিলাম। বাড়িগুলোর পেছনে আত্মগোপন করার আগ পর্যন্ত আমরা দৌড়ালাম। কেননা আমাদের এই ভয় ছিল যে কোনো লোক না আমাদের দেখে ফেলে।"
.
[ইমাম আহমাদ(রাহ.), আল মুসনাদ: ২/৫৮, ইমাম আহমাদ শাকিরের(রাহ.) মতে সনদ সহিহ; ইমাম তাবারানী(রাহ.), মুসনাদু আলী, হা: ২৩৭ ,সনদ সহিহ।]
.
বাই দ্যা ওয়ে মন্দির ভাংতেই হবে বলছিনা,বলছি ওগুলো বাঁচানো আমাদের কাজ নয়। আর আমরা হাদিস গোপন করিনা
লিখেছেন প্রিয় ভাই Manzurul Karim
Next Post Previous Post