বাংলা ইসলামিক উপদেশ মূলক লেখা সমগ্র

বাংলায় লেখা বিভিন্ন উপদেশ মূলক শিক্ষণীয় পোস্ট ও পিকচার  

( এই পোস্ট নিয়মিত আপডেট হবে। নতুন লেখা পেলে এড করে দিতে চেষ্টা করবো) 

বালির বাঁধ: চিন্তাপরাধ, লেখকঃ Asif Adnan


পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু করে নৈতিকতা, বিশেষ করে যৌনতার ব্যাপারে পশ্চিমের দৃষ্টিভঙ্গির বিবর্তনের দিকে তাকান। দেখতে পাবেন অবিশ্বাস্য মাত্রার পরিবর্তন।
.
একই কথা কিছুটা ভিন্নমাত্রায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ছেলেমেয়ে ভার্সিটিতে উঠে প্রেম করবে, একসময় এটাকে খুব খারাপ মনে করা হতো। এখন এটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। প্রেমের এই স্বাভাবিকীকরণের জন্য এক নতুন ধরনের ভাষাও তৈরি করে ফেলেছি আমরা।
.
‘ভাবি ছেলের বিয়ে দিয়েছেন?’
‘জি ভাবি, গত মাসে। ছেলের নিজের পছন্দ ছিল।’
.
ক্রমাগত বদলাতে থাকা সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাকে মাপকাঠি হিসেবে নেয়ার এই হলো ফলাফল। সময়ের সাথে বদলাতে থাকা নৈতিকতার কম্পাস বাঁধ দিতে পারে না; বরং হয়ে ওঠে অধঃপতন আর অবক্ষয়ের কারণ। পাবলিক পারসেপশান বদলায়, খুব দ্রুতই বদলায়। এক প্রজন্মের কাছে যা অকল্পনীয়, অন্য প্রজন্মের কাছে তা-ই হয়ে ওঠে স্বাভাবিক।
.
ভবিষ্যতে সমাজ আর কী কী গ্রহণ করে নেবে তা নিয়েও সহজেই পূর্বাভাস করা যায়। কারণ, কোন উৎসগুলো সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করছে সেটা আমাদের জানা। টিভি, হলিউড-বলিউড, শিল্প, সাহিত্য, গ্লোবাল সেলিব্রিটিদের নিয়ে গসিপ–এগুলোর মাধ্যমে ক্রমাগত আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে একটা নির্দিষ্ট, হাইপার-লিবারেল, প্রায় কামুক দৃষ্টিভঙ্গি।
.
বিনোদন মনে করে এগুলোকে নিত্যদিনের অপরিহার্য অংশ বানিয়ে নিচ্ছি আমরা। বিনোদনের জগৎ থেকে শেখা ‘নৈতিকতা’কে নিয়ে আসছি বাস্তবে। এ প্রভাবকে অ্যামপ্লিফাই করছে সোশ্যাল মিডিয়া, একজনের একান্ত অসুখ পরিণত হচ্ছে মহামারিতে।
.
এ প্রচণ্ড ও সর্বব্যাপী সাংস্কৃতিক ও নৈতিক আগ্রাসনের মোকাবেলায় আমাদের জবাব যদি হয় ‘সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা’, ‘সমাজবাস্তবতা’ আর ‘আমাদের সমাজে এসব মানায় না’–তাহলে এ স্রোতে বাঁধ দেয়ার আশা এখনই ছেড়ে দেয়া উচিত। এ যুক্তিগুলো দিয়ে টেকা যাবে না। বরং আপনার যুক্তিই একদিন আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বাধ্য করবে এ অসভ্যতাকে মেনে নিতে।
.
মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়। সমাজ বদলায়, গ্রহণযোগ্যতার সংজ্ঞা বদলায়, বদলায় অধিকাংশের মত। ইসলামের বদলে সামাজিকতা, গ্রহণযোগ্যতা ও ঐতিহ্যকে মানদণ্ড হিসেবে নিলে পশ্চিম থেকে আমাদের দিকে ছুটে আসা প্রচণ্ড ও সর্বব্যাপী নৈতিক অধঃপতনের স্রোতের মোকাবেলা করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
.


শ্রুতি লিখনঃ মাহফুজা শারমিন, 

আমার ছোট ভাই আমাকে বলছিল, এই তুমি সারাদিন এত এত ইসলামিক পোস্ট দিয়ে কি প্রমান করতে চাও। তুমি সবার চেয়ে ভালো হয়ে গেছ। আল্লাহর অলি হয়ে গেছ। আমরা সবাই খারাপ??


জিনিসটা বেশ ভাবালো। এরপর একটা লেকচার শুনতেছিলাম। একজন শাইখ বলতেছেন-

" কাউকে সাহায্য করা, উপদেশ দেওয়া, জানেন এসব ক্ষেত্রে কি হয়। বড় সমস্যা দেখা যায়। আমি যখন কাউকে উপদেশ দেই আমি ভেবে বসি আমি তার চেয়ে উত্তম। আমি তার চেয়ে ভাল তাই তার আমার উপদেশ দরকার। আর এইটা বেশ বড় সমস্যা যখন আপনি উপদেশ দিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। আপনি ভেবে বসেন আপনি অন্যদের চেয়ে ভাল।
আমি কোন অংশে আপনাদের চেয়ে উত্তম নই।আপনিও আমার চেয়ে উত্তম কিনা তা আমি জানিনা। শুধু মাত্র আল্লাহই বলতে পারেন কে কার চেয়ে উত্তম। এসব কোন মর্যাদার মানদন্ড নয়। একমাত্র আল্লাহ জানেনে কে হেদায়েতের উপর আছে। কে পথভ্রস্ট হয়েছে।

"নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন।"
( সুরা নাহল, আয়াত-১২৫)

আল্লাহই ভাল জানেন আমি ভাল না আপনি ভালো। আমি তো এও জানিনা আমি সঠিক পথে আছি কিনা।আপনাকে পথ নির্দেশনা দেওয়ার আগে জানতে হবে আল্লাহর কাছে আমার মর্যাদা কতটুকু। আমার অবস্থান কোথায়?

আপনাকে উপদেশ দেওয়ার আগে আমার আল্লাহর কাছে নত থাকতে হবে। আমি কখনো
বলিনা এই লোক গুলি পুরোপুরি বিভ্রান্তিতে আছে আমার এদের সাহায্য করতে হবে। এটা ভাবার আগে থামুন।

আমার নিজের অবস্থান কোথায় তাও জানিনা। দ্বিতীয়ত তারা যখন উপদেশ দেওয়ার পর আমার কথা শুনছেনা, আপনি যেভাবে চাইছেন।আপনি তাদের মধ্যে কোন রুপান্তর দেখতে পাচ্ছেন না। তার মানে এই না তারা পথ ভ্রস্ট।

হয়ত কোন বীজ বেড়ে উঠছে আপনি দেখতে পাচ্ছেন না। তবে আল্লাহ ভাল জানেন ভিতরে কি হচ্ছে। আর বাহিরে কি হচ্ছে এটা দেখে আমরা অর্ধেয্য হয়ে পড়ি। ভিতরে কি হচ্ছে খেয়াল করিনা।"
- উস্তাদ নোমান আলী খান।

এইটুক শোনার পর নিজেকে শুধরে নিলাম। আমরা যেন অন্যের চেয়ে নিজেকে উত্তম মনে না করি। কারন একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন তার তাকওয়া কতটুকু। আল্লাহ সবাইকে বোঝার তৌফিক দিন। আমিন।



কে পাপি আর কে কাফের মুরতাদ ? ইফতেখার সিফাত ,

মানব সভ্যতায় কিছু দুষ্টু প্রকৃতির লোক থাকা এবং কিছু অপরাধ সংঘটিত হওয়া একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এরজন্য বিচার হবে, আইন হবে, সচেতনতা হবে। এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এবং এই প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে কোন সভ্যতার জন্য হুমকিও নয়।


মানব সভ্যতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হল অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর সেটাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করা। আমাদের মুসলিম তরুণদের বিশাল এক অংশ আজ এই সমস্যাটার মধ্যে আটকে আছে।


মনে রাখতে হবে, ইসলামী শরীয়তে কোন অপরাধ সংঘটিত করার থেকেও অপরাধটাকে নরমালাইজ করা গুরুতর অপরাধ। কোন অপরাধ করা কবীরাহ গোনাহ , কিন্তু সেটাকে স্বাভাবিক ও বৈধ মনে করা কুফুর। প্রথমটা নিছক পাপী বানায়। আর দ্বিতীয়টা কাফির বানায়। প্রথমটাতে শাস্তি ভোগ করার পর (কিংবা আল্লাহর ইচ্ছায় মাফ পেয়ে) কোন এক সময় জান্নাতের নিশ্চয়তা আছে। আর দ্বিতীয়টাতে আজীবন জাহান্নামের নিশ্চয়তা আছে।


ইসলামী পরিভাষায় দ্বিতীয় বিষয়টাকে বলা হয় ইস্তিহলাল। এটা জঘন্যতম এক পাপ, কুফর ও রিদ্দাহ। ইস্তিহলালের ফিৎনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে তরুণদের ভিতর। এর প্রধান কারণ হল লিবারেল মূল্যবোধ ও তার মানদণ্ড প্রবৃত্তি। ইসলামে নৈতিকতার মানদণ্ড ওহী। কিন্তু লিবারেলিজমে নৈতিকতার মানদণ্ড হল মানবীয় প্রবৃত্তি।


ওহীর মানদণ্ডকে পরিত্যাগ করে মানুষ আর আল্লাহর আবদ তথা বান্দার স্বীকৃতির মাঝে থাকে না। সে তখন প্রভুত্বের দাবিতে অনুপ্রবেশ করে বসে। তাকেই তখন বলা হয় হিউম্যান বিয়িং। মুসলিম ও আবিদের পরিচয় ছেড়ে দিয়ে আমরা আজ হিউম্যান বিয়িংয়ের পরিচয় বরণ করে নিচ্ছি। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না, এটা তো কাফেরেরই আরেক নাম। মুরতাদেরই আধুনিক নামকরণ।

- Iftekhar Sifat 



সত্য ও মিথ্যার যুদ্ধ ঃ ইবনে মাজহার 

ক্ষমতার জন্য, টিকে থাকার জন্য আইডিওলজি প্রয়োজন। আইডিওলজির জন্য লোকবল প্রয়োজন। কনভারশন প্রয়োজন। আর ধর্মের চেয়ে শক্তিশালী আইডিওলজি আর হয় না। এবং আইডিওলজিগুলো ধীরে ধীরে ধর্ম রূপে আবির্ভূত হতে থাকে।

.

কনভারশন, অন্যদের কনভিন্স করে নিজের দলে নিয়ে আনা এর অনেক বড় একটি ফিচার। বর্তমান প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে তা আরো প্রবল ভাবে সত্য টিকে থাকার জন্য। তাই ইয়াহুদীদের শরীয়াতে বনী ইসরাইলীদের বাহিরে লোকদের কনভার্ট করা বিধান না থাকলেও, বর্তমানে আমরা নন-সেমিটিক জুইশ কমিউনিটি দেখতে পাই। এরা বনী ইসরাইলী না। এরা কনভার্ট হয়েছে।

.

খ্রিষ্টানরা অনেক আগে থেকে। বনী ইসরাইলীদের বাহিরে থেকেও লোক রিক্রুট করে আসছে, এর জন্য তাদের সংখ্যাটাও বেশী। ইয়াহুদীরা বেশ পরে শুরু করেছে। অন্যদিকে মুশরিকরা, বিশেষ করে ভারতের হিন্দু ধর্মেও এরকম কনভারশনের কোন নিয়ম ছিল না। এখনো নেই। কিন্তু ইসকনে আছে। ইসকন একটা আধুনিক হিন্দুইসম। এবং আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে গেলে আধুনিক হিন্দুদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সিস্টেমই ইসকন অফার করে।

.

কিন্তু প্যাটার্নটা দেখুন। খ্রিষ্টান, অনেক পরে জুডাইসম আর এখন ইসকন। তারা তাদের ধর্মের প্রথা ভেঙে কনভারশনে মনোনিবেশ করেছে, কারণ টিকে থাকতে হলে তা করতেই হবে। কিন্তু কনভারশনের আগে তো নিজেদের ঘরেই বেইসটা আগে শক্ত করা প্রয়োজন, তাই না?

.

ভারতীয় আধিপত্যবাদে কারণে অনেকে ইসকনের প্রতি আঙ্গুল তুলছেন খুব জোরেসোরে। যদিও এদের অনেকেই মন্ত্রী-এমপিদের নাম, কিংবা যদি বলি 'র এর নাম ধরেও কেন যেন এত অভিযোগ করে না। এর কারণটা হল, ইসকন তুলনামূলক নতুন। মানুষ কম জানে, কিংবা কম ভয় পায়। তো এর নামে যা তা বললেও মানুষ বিশ্বাস করবে, এবং এ ক'দিন যা দেখলাম আসলে মানুষ নিজ থেকেই বিশ্বাস করতে চাচ্ছে ইসকন এক মহাদানব, যদিও পাবলিকলি ইসকন কিন্তু অনেক নিরীহ একটা ইমেইজই শো করে আসছে।

.

বলবো না যে, হয়ত তারা 'র এর একটা টুল। বলবো যে, তাদের অবশ্যই র' টুল হিসেবে ইউস করবে, কিন্তু তাদের আরো শক্তিশালী টুল আছে। এবং মুসলিম নামধারী টুল আছে। ইসকনের কাজ এটা হতে পারে যে তারা একটা সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরী করবে, যেটার শক্তিশালী লবী থাকবে, যেটা পিছন থেকে অনেক কাজ করবে, করাবে। নিজেরা কখনো সিআইএ স্টাইলে অপারেশন করতে যাবে না। হয়ত তারা রায়োটে উসকানী দিবে, কিংবা কোন বিষয়ে সরকারকে চাপ দিবে। এবং পাবলিকলি একটা ভালো ইমেইজ রেখে, জনগণ বিশেষ করে হিন্দুদের মনে একটা সীম্প্যাথীর জায়গা করে নিবে। অলরেডি নিয়েছেও।

.

যেহেতু আধুনিকতার সাথে তারা যায়, তাই হিন্দুদের শিক্ষিত শ্রেণী তাদের সাথে অন্তত অনলাইনে হলেও সমর্থন প্রকাশ করে। আর ইসকন এই ফ্যানবেজটা ধরে রাখার চেষ্টা করবে। এবং টিকে থাকার জন্য আইডিওলজি ধীরে ধীরে পুশ করবে। কনভার্ট করবে। এমনকি অন্যান্য হিন্দুরাও ধীরে ধীরে এর দ্বারা প্রভাবিত হবে। সাথে সাথে মুসলিমরা। বাস্তবে মনে হবে খুব নিরীহ। কিন্তু এত নিরীহ একটা জিনিস, কোন ব্যাকিং ছাড়া বড় হচ্ছে, অথচ পিছনে তার কোন দাঁত নেই, এটা বিশ্বাস করা আর বোকার স্বর্গে বাস করা একই কথা।

- Ibn Mazhar 

Next Post Previous Post