বাংলা ছোট গল্প সমগ্র | হাসির, শিক্ষণীয় বাংলা গল্প। এক সাথে অনেক গুলো অনলাইন বাংলা গল্প
অনলাইন ছোট বাংলা গল্প সম্ভারঃ হাসির কিশোর শিক্ষণীয় গল্পের পোস্ট ২০২৪
প্রথম গল্পঃ একটু দুষ্ট কিন্ তু মিষ্টি পর্ব-১ : জে-বুনরু-মি
আমাকে বউ দেখতে আসা হয়েছে আমার চাইতে ৪ বছরের ছোট একটা ছেলের জন্য।আজব একটা পরিস্থিতিতে আমি বসে আছি।
ভাবছেন নিশ্চই, এ আবার কেমন কথা? তাহলে পুরো কাহিনীটাই বলি।
বিয়ে করতে বরাবর ই আমার দ্বিধা।তিন বোনের মাঝে আমি সবচাইতে ছোট। আমার পঁচিশ বছর চলছে। আব্বু আম্মু অসুস্থ। তাই সবাই চাইছে উনাদের কিছু হয়ে যাবার আগেই আমাকে বিয়ে দিতে।
বড় আপুর বর কলেজের শিক্ষক।ঐ কলেজের মহিলা হোস্টেলের দায়িত্বে আছেন উনি। দূর্নীতি যে কত ভাবে করা যায় আপুর বর কে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।হোস্টেলের মেয়েদের খাবারের বাজেট,লাইব্রেরি
কাজের মেয়েটাকে নিয়ে প্রতিদিন ই কিছু না কিছু শপিং করেন। শিক্ষকতা পেশাটাকেও যে ভাল ব্যবসা হিসেবে নেয়া যায় দুলা ভাই কে না দেখলে বুঝতাম না। আপু সারা দিন শপিং করে আর রাতে দেখে ইন্ডিয়ান বউ শাশুরির ঝগড়াটে সিরিয়েল সব। তারপর দুজন আলাদা রুমে ঘুমান।
আসলে আপু সুখে নেই। আপু এসব দূর্নীতি সহ্য করতে পারেন না।তাই প্রথম প্রথম বিরোধিতা করেন। কিন্তু আমার শান্ত স্বভাবের ভীতু আপুর প্রতিবাদ ধোপে টেকে না। আপুর কথার দাম যেন এ সংসার ঐ সংসার কোথাও নেই। সবাই একটাই কথা বলেন, জামাই টাকা কামায় তুমি খরচ করবে তাতে এত সমস্যা কোথায়? আপুও মেনে নিয়েছে এটা।কিন্তু মন থেকে পারছে না মানতে।
মেজো আপু আর তার বর দুজন ই ডাক্তার। গত সপ্তাহে আপুর বাসায় গিয়েছিলাম। দুলাভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করায় বললো সে জানে না। লাস্ট একমাস যাবৎ নাকি তাদের একবারো দেখা হয় নি। কারন দুলা ভাই রাতের শিফটে আর আপু দিনের।একজন আসে তার আগেই আরেক জন যায়।হসপিটালে ডাক্তার সংকট থাকায় নাকি এই মাসে শুক্রবারেও ছুটি পাচ্ছেন না কেউ। হায় এটাও জীবন!
আমি বিয়ে করতে চাই না। একা ই থাকি।নিজের মত করে নিজের জীবনকে গুছিয়ে না হয় নেবো।কে দূর্নীতি করছে বা কখন বাসায় ফিরছে তা নিয়ে কোন চিন্তা থাকবে না।
কিন্তু আমার ইচ্ছার বারোটা বাজাতে উঠেপড়ে লেগেছেন আমার বড় খালা। উনি কাল ফোন দিয়ে বড় আপু আর মেজো আপুকে বললেন আজ নাকি আমাকে বর পক্ষ দেখতে আসবে। তাই সকাল সকাল বড় আপু হাজির। এসেই রান্না বান্নার জন্য বিশাল লিস্ট করে ফেললেন।
এসব দেখে মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। আমার একটাই সমস্যা বড়দের সামনে কিছু বলতে পারি না। ছোটদের সামনে আবার এই সমস্যা টা হয় না। পটপট করে কথা বলে যেতে পারি। আপুর এসব কান্ড দেখে বিরক্ত হয়ে গেছি।
তাই নিজের ঘরের ভেতরে গিয়ে শুয়ে রইলাম। একটু পর কলিং বেলের শব্দ পেলাম। তারপর মেজো আপুর গলা। বাহ! এরা তো ভালই সিরিয়াস। হঠাৎ করে ভাবলাম, আমি অচেনা কারো সামনে ঘোমটা দিয়ে বসে আছি, আমাকে লোকটা বলছে, তুমি আমাকে আপনি করে না বরং তুমি করেই বলো কেমন?
রান্না ঘরে আপুদের হাসির শব্দে বাস্তবে ফিরে এলাম।ছিঃ এসব কি ভাবছি। কখনো বিয়ে করবো না ভাবা মেয়েটা শুধু দেখতে আসছে শুনেই বরের কল্পনা করছি?
বাম হাত দিয়ে গালে একটা চড় দিলাম।
উফ্ চড় টা জোড়েই হয়ে গেছে।ব্যাথা পাচ্ছি।
একটু পর মেজো আপু আমার রুমে এসে বলরেন, কিরে শোয়ে আছিস কেন?
গোসল করে নে না। ওরা তো বিকেলেই আসবে।
আমি আপুকে বললাম আপু আমি বিয়ে করবো না।
আপু বললো কেন? বিয়ে করবি না কেন?
আপুকে আমতা আমতা করে বললাম বিয়ে মানে ঝামেলা,অন্যের জন্য পুরো জীবনকে সেক্রিফাইস করা। এসব আমাকে দিয়ে হবে না।
আপু বললেন কারো জন্য যদি জীবনকে সেক্রিফাইস ই না করা যায় তো জীবনের দাম কোথায়?
আর কিছু বললাম না। কারন মেজো আপু যা বুঝেন তার বাইরে সারা দিন চাইলেও কিছু বুঝানো যাবে না।
চুপ করে গোসলে ঢুকে গেলাম।
বিকেল চার টার দিকে আমাদের বাসায় মেহমান আসলো।আব্বু আম্মু মেহমানদের ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করে বড় আপুকে সব দায়িত্ব দিয়ে নিজেদের ঘরে চলেন গেলেন। উনারা বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারেন না। মেজো আপু আমাকে শাড়ি পড়াতে আসলেন। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও শাড়ি পড়লাম।আপু বললেন.. শোন একটু বেশি করে খেয়ে দেয়ে মোটা হ তো.. মাস্টার্স পড়িস কিন্তু দেখলে ইন্টারের পিচ্চি লাগে।
এরকম শুকনো থাকলে বিয়ে হবে কি করে?
কথাটা বেশ কানে বাজলো।
শুকনো মেয়েদের বিয়ে হয় না? বাহ! ভাল কথা জানলাম তো। কালকে থেকে আরো বেশি ডায়েট করা শুরু করবো। এখন ওজন বিয়াল্লিশ আছে আরো পাঁচ ছয় কেজি কমাতে পারলে মনে হয় কাজ হয়ে যাবে। বিয়ে হবে না, ইয়াহু।
মনে মনে যখন এসব ভাবছিলাম তখন বড় আপু মেজো আপুকে ডেকে বললেন আমাকে নিয়ে যাবার জন্য।
আপু এমন ভাবে আমার হাতে ধরলেন যেন আমি তিন দিন আগে হাটা শিখেছি। হাত ছাড়লেই পড়ে যাবো। আমি আপুকে বললাম হাত ছাড়ো আপু।আমি হাটটে পারবো। আপু আস্তে করে একটা ধমক দিয়ে বললেন পাকামো করিস না। যেভাবে নিচ্ছি সেভাবেই আয়, এটাই নিয়ম।
তার মানে বিয়ের প্রথম শর্ত হলো নিজের স্বাধীনতা মত হাটা যাবে না।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
ঘরে ঢোকার আগে আপু বললেন সালাম দিবি ঢুকেই।
তাই ড্রয়িং রুমে ঢুকেই সালাম দিলাম। এটা অবশ্য না বললেও দিতাম। কারন আমি সব সময় মেহমানদের সাথে সালাম দিয়ে কথা বলা শুরু করি।
মধ্য বয়স্ক কেউ আমাকে বসতে বললেন।
আমি বসলাম।
আমাকে আমার রেজাল্ট, অনার্সের বিষয় সহ আরো টুকটাক কিছু জিজ্ঞেস করলেন কয়েকজন মহিলা। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে সব উত্তর দিলাম। কেন জানি না একবার ও চোখ তোলে উনাদের দিকে তাকানোর আগ্রহ পেলাম না।
তখন আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো আমার এইচ এসসি পাসের সাল কবে?
আমি উত্তর দিলাম দুই হাজার তেরো সাল।
উনারা যেন একটু থমকে গেলেন।রুমের মধ্যের কেউ একজনকে জিজ্ঞেস করলেন তোর পাসের সাল কবে?
একটা ছেলে কন্ঠ উত্তর দিলো দুই হাজার সতেরো।
আমি ভাবলাম ও সম্ভবত বরের ছোট ভাই। তখন একজন মহিলা কন্ঠ বলে উঠলো তোর চার বছরের বড় তো!
ছেলে কন্ঠটা উত্তর দিলো, সমস্যা নেই। আমার পছন্দ হয়েছে উনাকে।
কথা গুলো কেমন যেনো অন্যরকম লাগলো। ছেলে কন্ঠটার উৎসের দিকে তাকালাম। একটা উনিশ বিশ বছরের ছেলে। ব্ল্যাক শার্ট পড়ে এসেছে। ধবধবে সাদা গায়ের রঙ যেনো আরো বেশি ফুটে ওঠেছে। শার্ট রেখে এবার মুখের দিকে তাকালাম, বাচ্চা বাচ্চা চাহনিতে মায়া ভরা দুই চোখ অবাক হয়ে আমাকে দেখছে।চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।
তখন ওপাশ থেকে কোন একজন মহিলা বললেন আমাদের কোন সমস্যা নেই, তা মা তোমার আমার তাহিয়ানকে বিয়ে করতে কোন আপত্তি নেই তো? তোমার চাইতে চার বছরের ছোট হলেও ও অনেক বুদ্ধিমান আর লক্ষি একটা ছেলে।
আমি আপুদের দিকে তাকালাম।বড় আপু মেজো আপু দুজনের ই মুখ ফ্যাকাশে।বুঝতে পারলাম, উনারাও ব্যাপারটা জানতেন না।
আমি দাড়িয়ে পড়লাম। তারপর সবার সামনে বললাম এই পিচ্চিকে বাসায় নিয়ে যান। ওর এখনো বিয়ের বয়স হয় নি।আর বিয়ের পর বরকে বেবি সিটার এর মত করে দেখাশোনা করার ইচ্ছে নেই আমার।কথা গুলো বলেই নিজের ঘরে চলে গেলাম। মেজাজ আরো খারাপ হয়ে আছে।
চুপ করে বসে আছি।
ঘর অন্ধকার করে। হঠাৎ বড় আপু আর মেজো আপু আমার ঘরে আসলেন। বলেলেন, শোন,আমরা আসলে জানি না ছেলেটা এত ছোট। দুই ভাই আমেরিকা থাকে। দেশের পারিবারিক ব্যবসা সব ও দেখাশোনা করে আর ছেলেটাও খুব ট্যালেন্ট শোনে রাজী হয়ে গেলাম। ওর দুই ভাই আমেরিকা স্যাটেল। ওখানেই বউ বাচ্চা নিয়ে স্থায়ীভাবে বাস করছে।ওর বাবা অসুস্থ্য তাই তাড়াতাড়ি ছেলের বউ দেখতে চাচ্ছেন। তুই ভেবে দেখতে পারিস, ছেলেটা কিন্তু খারাপ না। সাথে সাথেই আমি ওদের কে বললাম। তোমরা কি আমার রুম থেকে বেড়োবে?
দু জন ই চুপ করে বেড়িয়ে গেলেন।
সকালে রিয়ার ফোনে ঘুম ভাঙলো।
কল রিসিভ করতেই জরুরি গলায় বললো.. হিম, তুই কি রেডি? আমি তোর বাসার সামনে।
হঠাৎ করে মনে পড়লো আজ ভার্সিটিতে সব বান্ধবীদের একসাথে দেখা করার কথা ছিলো। বললাম ১০ মিনিট এসে বাসায় বস আমি এক্ষুনি রেডি হয়ে আসছি। তাড়াতাড়ি করে কোনমতে একটা জামা পড়ে নিলাম। এলোমেলো করে চুল বেধে নিলাম।
ব্যাগ নিয়েই দৌড়। রিয়া বললো বাহ বেশ তো দশ মিনিটেই রেডি!
চল তাড়াতাড়ি। আমরা রউনা হলাম। তখন বললো তোদের কাজের মেয়ের মুখে শুনলাম কাল নাকি তোকে বউ দেখতে এসেছিলো? ছেলে কি করে রে?
আমি বললাম, বোন আর বলিস না। কালকের কথা মনে পড়লেই মেজাজ খারাপ হচ্ছে। তোকে যাবার সময় সব বলবো। একটা রিক্সায় উঠলাম।
তার পর সব খোলে বললাম রিয়াকে। রিয়া দেখি মুচকি মুচকি হাসছে। বললো তুই সবার সামনে বলেছিস বেবি সিটার হতে চাস না? ওয়াও কিয়া বাত বান্ধবী! ছেলেটা দেখতে কেমন ছিলো রে? কিউট না সুইট? হ্যান্ডসাম কিনা জিজ্ঞেস করতাম।কিন্তু বাচ্চাদেরকে তো কিউট সুইট ই বলে।হা হা করে হেসে উঠলো।
চুপ করতো বলে আমিও হাসলাম কিছুক্ষণ। আসলেই কথাটা মজার।
ভার্সিটির গেটের পাশে কয়েকটা ছেলে মেয়ে দাড়িয়ে গল্প করছে । মনে হয় প্রথম কি দ্বতীয় বর্ষের হবে।। আমরা রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিতে গেলাম।কিন্তু খেয়াল করলাম আমার কাছে পাঁচশ টাকার নোট। ভাঙতি নেই।তাড়াহুড়ো তে খুচরো টাকা আনি নি। রিয়ার কাছে শুধু পাঁচশ টাকার নোট। কোন ভাঙতি নাই।
রিক্স্ওয়ালাকে ৪০ টাকা দিতে হবে, যখন ভাবছি ভাঙতিটা কোথায পাবো,তখন গেটের পাশে দাড়ানো ছেলে মেয়েদের মধ্য থেকে সাদা শার্ট পড়া বেশ লম্বা ফর্সা একটা ছেলে এগিয়ে আসলো। এসে জিঙ্গেস করলো কোন সমস্যা?
রিয়া বললো না তেমন কিছু না, খুচরা টাকার একটু সমস্যা। ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো.. ভাড়া কত?
রিক্সা ড্রাইভার যেনো হাপ ছেড়ে বাচলো, বেচারা বোধহয় ভাড়ার জন্য টেনশনে ছিলো। ঝটপট করে বলে উঠলো চল্লিশ টাকা ভাইজান।
ছেলেটা নিজের ম্যানিব্যাগ বের করে টাকা দিয়ে দিলো।
আমি তার বিকাশ নাম্বার চাইলাম টাকাটা পরে ফেরত দেয়ার জন্য।
ছেলেটা বলে উঠলো, টাকা দেয়া লাগবে কেন এটা তো আমার দায়িত্ব।
কথাটা শুনে আমি আর রিয়া দুজন ই ছেলেটার মুখের দিকে তাকালাম। মায়া মায়া চেহারায় কেমন যেনো একটা আপন আপন ভাব।হালকা গম্ভীর চেহারাটা কেমন যেনো চেনা চেনা লাগলো। কোথাও একটা দেখেছি আগে। ঠিক মনে করতে পারছি না।
তখন জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা তুমি কি আমার পরিচিত?(যেহেতু ভার্সিটির সিনিয়র আমি, তাই তুমি করেই বললাম।)
ছেলেটা এবার ভুবন ভোলানো একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো..আমাকে চিনতে পারছো না হিম?
জুনিয়রের মুখে এভাবে নিজের ডাকনাম আর তুমি করে সম্মোধন রিয়া আর আমাকে অবাক করে দিলো। রিয়া আমার দিকে প্রশ্ন বোধক চোখে তাকালো।আর আমি তখন মনে করার চেষ্টা করলাম এই সিনিয়র স্টাইলের জুনিয়র ছেলে টা কে?
তখন আবার ছেলেটা বলে উঠলো.. চিনবে কি ভাবে তখন তো ভাল করে তাকাও নি।
আমি তাহিয়ান, তোমার হবু বর।ছোট খাটো একটা বোম্ব বিস্ফোরণ হলো যেনো কোথাও।রিয়া আর আমি দুজন ই একটুক্ষণ যেন নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছি।
একটু দুষ্ট কিন্ তু মিষ্টি পর্ব -২ ঃ বাংলা হাসির গল্প
চার বছরের ছোট তাহিয়ান যখন নিজের পরিচয় দিলো সে আমার হবু বর,তখন একটু সময়ের জন্য ভাষা হারিয়ে ফেললাম।
আমি আর আমার বান্ধবী রিয়া একজন অন্যজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছি।
তাহিয়ান আবার বলে উঠলো.. তোমার ছবি দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমার ডেস্টিনি।
যাক গে আজ ভার্সিটিতে তোমাকে দেখতে পাবো এতটা আশা করিনি। ভালই হয়েছে, জানাশোনাটা একটু বাড়িয়ে নিতে পারবে তুমি। আকস্মিকতার পর জড়তা কাটিয়ে এবার কথা বলে উঠলাম আমি।
তাহিয়ান আমার মনে হয় তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি কখনোই তোমাকে বিয়ে করতে রাজী ছিলাম না। তাই হবু বর হবার প্রশ্নই আসে না।
আর জানা শোনার কথা বলছো তো? আমি আমার চাইতে জুনিয়র কারো উপর কখনোই ইন্টারেস্টেড নই।
আর আমার মনে হয় তোমার আসলে তোমারই বয়সের কাউকে বিয়ে করা উচিৎ।
যে তোমার মন মত হবে।
তাহিয়ান চুপ করে শুনছিলো। এবার কথা বলে উঠলো.. হিম, আমি তোমার একটা কথার সাথে একমত। মন মত কাউকে বিয়ে করা উচিৎ। যার দিকে তাকালে আলাদা একটা শান্তি অনুভূত হয়। আর আমার এই একুশ বছরের জীবনে সেই মানুষ টা হলো একমাত্র তুমি।
আমি জানি তুমি কাউকে পছন্দ করো না। পুরো অনার্স লাইফে কাউকে পাত্তা দাও নি। তাই আমার মনে হয় আমি ই তোমার জন্য পার্ফেক্ট। আমিও লাইফে কারো সাথে রিলেশনে যাই নি।
রিয়ার ফোনে কল আসলো। আমাদের অন্য
বান্ধবীরা কল দিয়েছে৷ রিয়া রিসিভ করে বললো,এই তো আমরা এসে পড়েছি। গেইটেই আছি। তোরা অপেক্ষা কর, আসছি।
তাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,হিম কি এখন যাবে?
আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো,বললাম ঐ আমি যাবো কিনা এই পিচ্চিকে জিজ্ঞেস করছিস কেন?
তাহিয়ান একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো, কারন তোমার বর হিসেবে উনার আমাকে পার্ফেক্ট মনে হয়েছে তাই। আচ্ছা হিম যাও এখন, তবে আজকে আরো অনেক বার দেখা হবে।বলেই হন হন করে হেটে গেলো।
আমি রিয়ার দিকে তাকাতেই রিয়া আমতা আমতা করে বললো... তাহিয়ান অনেক হ্যান্ডসাম। আর কোন ধরনের বাচ্চামি নাই। একদম সুপুরুষ।
আমি রেগে বললাম তাহলে তোর বিষয়ে ওর সাথে কথা বলি? তুই বিয়ে করে নে পিচ্চিটাকে। তারপর কোলে নিয়ে রাখবি সারাক্ষণ।
রিয়া একটা দীঘশ্বাস নিয়ে বললো, আমার বয়ফ্রেন্ড রাকিব টা না থাকলে এতক্ষণে তোর অফারে ১০০% রাজী হয়ে যেতাম।
আমি হেসে বললাম চল তো। সবাই অপেক্ষা করছে।
বান্ধবীরা গল্প করছি। ভার্সিটির পুকুরে অনেক পদ্ম ফুল ফুটেছে। বরাবরের মত ভাবছি, ইশ কেউ যদি তোলে দিতো। কিন্তু কখনো কথা টা মুখ ফুটে বলা হয় নি। এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার গল্পে মনোযোগ দিলাম।
একটু পর একটা বাচ্চা এসে আমাদের সামনে দাড়ালো, হাতে চারটা পদ্ম ফুল।আমার বান্ধবীরা ফুল দেখে যেনো ঝাপিয়ে পড়লো।দাম কত? কে কোন টা নিবে ঠিক করছে। বাচ্চাটা সবাইকে বললো, এগুলো আপনাদের জন্য না। আমার দিকে ফুল গুলো বাড়িয়ে ধরলো। আর বললো, এই নিন আপনার ফুল।
আমি অবাক হলেও ফুল গুলো হাতে নিলাম। কারন অনার্স জীবনের প্রথম থেকেই ফুল গুলো তোলতে চাচ্ছিলাম। হাতে নিয়ে স্পর্শ করতে চাচ্ছিলাম। এত দিনে যেন মনের আশা টা পূ্রণ হলো। ভার্সিটি লাইফের একদম শেষ পর্যায়ে।
ছেলে টাকে জিজ্ঞেস করলাম, কত টাকা দিতে হবে?
এই বাচ্চা গুলো বেশ পাকা হয় জানতাম, আজ তার আবার প্রমাণ পেলাম, বাচ্চা টা গলা টেনে বলে উঠলো, আহহা আমি তোলি নি তো।
আমি ছিলাম এসিস্ট্যান্ট। আসল কাজটা তো দুলাভাই করেছে।
আমি তো অবাক, তোমার দুলা ভাই কে?
সে বললো, কে আবার আপনার হবু বর। বলেই জিহ্বায় কামড় দিলো।ইশ উনি বলতে মানা করছিলেন আপনাকে।
এবার বুঝতে পারলাম এই কান্ড তাহিয়ান করেছে।সবাই আমার দিকে তাকালো, এবার আমার প্রশ্নের বাণে জর্জরিত হবার পালা।
সব কটা জিজ্ঞেস করছে,তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর আমাদের জানাস নি?তলে তলে এত কিছু আর আমরা কিনা কিছুই জানি না? আজ বড়সড় প্যানাল্টি দিতে হবে। আর দুলাভাই এখানেই কোথাও আছে। আমি তাড়াতাড়ি বললাম, আসলে এটা একটা ভুল বুঝাবুঝি। যেরকম ভাবছিস তোরা এমন কিছু না।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমি সব সময় ই বান্ধবীদের গ্রুপের মাঝে সবচাইতে নিরীহ প্রাণী। শুধু রিয়া ছাড়া বাকীদের সামনে চুপ করে বসে থাকি। এদের ধারণা আমি চুপচাপ ধরনের মেয়ে। কিন্তু রিয়া জানে আসলে আমি এমন টা না।
আমি আর কিছু বলার আগেই তমা মেয়েটা বলে উঠলো, দুলাভাইয়ের কাছে কে কে ট্রীট চাস তোরা? এই মেয়েটা সব ফালতু কাজের নেতৃত্ব দিতে ওস্তাদ।
সব কটা একসাথে হাত তোললো, শুধু রিয়া আর আমি ছাড়া।
আমি বলে উঠলাম, আসলে দুলাভাই বলতে কিছু নাই। এমন টা হয় নি এখনো। ওরা বলে উঠলো হবু ভাইয়া তো? অকে তাতেই চলবে। ফোন দে জলদি, আসতে বল এখানে।
আমি বললাম ফোন নাম্বার নাই। আর আমি ঐ ছেলেকে চিনিই না ভাল করে।
কিন্তু কে শুনে কার কথা? বললো বুঝছি তুই এখন ই ওর টাকা বাঁচাতে চাইছিস।অকে তোর ফোন দেয়া লাগবে না। ওরা সেই বাচ্চা ছেলেটাকে ৫০ টাকা দিয়ে বললো, তোমার দুলাভাইকে গিয়ে বলো আপা ডাকছে।
আমি জলদি করে মানা করলাম। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনছেই না।
এক তো বিয়ের এখনো কিছুই হয় নি। তারপর তাহিয়ান জুনিয়র, আর আমিও ওকে চিনিই না প্রায়। এখন কি করবো?
রিয়াকে বললাম কিছু কর রিয়া। রিয়া আমার ফোনে একটা মেসেজ দিলো। আমি চেক করে দেখলাম তাতে লেখা, এদের তো তুই চিনিস ই, বাড়াবাড়ি কিছু করতে গেলে ওরা আরো বড় কান্ড ঘটিয়ে দেবে। বরং চুপ করে দেখে যা।
বুঝতে পারলাম রিয়াও এদের ই দলে।
সবাই অপেক্ষা করছে তাহিয়ানের জন্য। একটু পর একটা আইসক্রিম ওয়ালা আসলো।
এসেই সবার সামনে থামলো, বললো তাহিয়ান ভাই প্রজেক্টের প্রেজেন্টেশন করছেন। আসতে একটু সময় লাগবে, আপনাদের ততক্ষণ একটু কষ্ট করে অপেক্ষা করতে বলেছেন।ভাইয়া আপনাদের জন্য আইসক্রিম পাঠিয়েছেন।
সবাই বেশ অবাক হলো। বললো বাহ দারুণ তো ভাইয়াটা।আসতে একটু লেইট হবে তাই আমাদের জন্য আইসক্রিম পাঠিয়েছে।
এত দারুন মানুষ পেলি কই রে? আমি আবার বলার চেষ্টা করলাম আমার সাথে তাহিয়ানের কোন সম্পর্ক নেই কিন্তু তার আগেই ভার্সিটির কলা ভবনের দিক থেকে চিৎকার চেচামেচির শব্দ ভেসে আসলো।হয়তো বড় একটা মারামারি বাধতে যাচ্ছে। আমি মারামারি ভীষণ ভয় পাই। সবাই পুকুর ঘাট থেকে উঠে মেইন গেটের দিকে যেতে চাইলাম কিন্তু সেখানে আরো বেশি উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে।তাই বুঝতে পারলাম ঐ দিকে যেতে পারবো না। সাইন্স ফ্যাকাল্টির দিকে দৌড় দিলাম সবাই। উত্তেজনা পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে।
সবাই নিরাপদ জায়গার জন্য এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছে। কোথায় একটা বিকট শব্দ হলো। কেউ একজন বললো এটা গুলির শব্দ। ভার্সিটির বাইরে থেকে নাকি কয়েকজনকে ভাড়া করে আনা হয়েছিলো কাউকে পিটানোর জন্য আর এটা শুনে ভার্সিটির সব ছাত্ররা খেপে গেছে। বাইরের ছেলেদের মধ্যে একজন নাকি পিস্তল এনেছে সাথে। সেটার গুলির শব্দ আসলো।ছোটার সময় কারো সাথে ধাক্কা লেগে একটা পদ্ম ফুল পড়ে গেলো ঐটা তোলতে গিয়ে দেখি আরেকজন মারিয়ে দিয়েছে।
ঐটার আশা ছেড়ে যখন আশেপাশে তাকালাম, রিয়া বা আমার বান্ধবী দের কাউকে দেখতে পেলাম না কোথাও। এবার অনুভব করলাম কতটা অসহায় হয়ে পড়েছি আমি। চোখ ফেটে কান্না আসছে। কোথায় যাবো আমি?
কোন দিকে যাবো? আমি ভয়ে কাপতে লাগলাম। মানুষের ধাক্কাতে আস্তে আস্তে কলা ভবনের দিকে চলে যাচ্ছি। অথচ আসল গন্ডগোল টা সেখানেই।বার বার আছরে পিচরে সরে আস্তে চাইছি কিন্তু পারছি না। একসময় সাইন্স ভবনের দিকে যাবার আশা ছেড়েই দিলাম। কত বার যে মানুষ জন আমার পা মাড়িয়ে দিয়েছে হিসেব ছাড়া।
হঠাৎ ভীড়ের মধ্যে কেউ আমার হাত ধরলো।টেনে সাইন্স ভবনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। হাত টা কার জানি না। কিন্তু এই হাতটার ছোঁয়া নিমিষেই যেনো আমার মনের ভয়কে দূর করে দিলো। মনে হলো আর নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। হুম আমি নিরাপদ, এবার আমি নিরাপদ।হাতটা আমাকে ভীড়ের মধ্যে ঠিক কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জানি না। শুধু জানি নিরাপদ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ নিজেকে পদার্থ বিভাগের বারান্দায় আবিষ্কার করলাম।ভীড় এখানে নেই একদম। সামনে সাদা শার্ট পড়া একটা ছেলে। আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। খুব পরিচিত লাগছে তাকে।কিন্তু মুখ দেখা যাচ্ছে না।
একটা ল্যাবের ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আমার সামনে এসে দাড়ালো তাহিয়ান।
আমার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, টিস্যু কোন পকেটে? আমি নিজের অজান্তেই উত্তর দিলাম বাইরের পকেটে। সে ঐ পকেট থেকে টিস্যু বের করে আমার হাতে দিলো। বললো চোখের পানি মুছে নাও। তোমাকে কান্না করলে ভাল দেখায়।পরে অন্য কেউ ক্রাশ খেয়ে যাবে।
আমি কাঁদছি? এতক্ষণে হুশ ফিরলো আমার।
আরে, তাহিয়ান আমাকে টেনে বিপদ থেকে নিয়ে এসেছে?
কিন্তু আমাকে পেলো কিভাবে? জিজ্ঞেস করলাম আ..আমাকে পেলে কিভাবে?
তোমার বান্ধবী দের দেখলাম তোমাকে খোঁজছে।তুমি ওদের সাথে নেই। গেইটে যে বান্ধবী টা ছিলেন উনি তো পুরো কান্না করছেন। উনাকে গিয়ে তোমার কথা জিজ্ঞেস করলাম। বললেন জানেন না। তার পর আমি খোঁজতে বের হলাম।
ভাগ্যেস পদ্মফুল গুলো হাতে ছিলো পদ্মফুলে পাপড়ি মাটিতে পড়েছিলো। ঐ গুলো দেখেই খোঁজে বের করেছি।
আমি অবাক হলাম, ছেলেটা তো বেশ বুদ্ধিমান। এত গন্ডগোলের মাঝেও মাথা ঠান্ডা রাখতে জানে।এবার একটু রাগী গলায় বললাম, এই মারামারির মাঝে আমাকে খোঁজে হিরো সাজতে গিয়েছিলে কেন?
এখন যদি কিছু হতো তাহলে তো আমি দ্বায়ী থাকতাম। এমন হিরোগিরির কোন মানে হয় না।
তাহিয়ান একটু গম্ভীর ভাবে বললো, আজ যদি এই হিরোগিরি না দেখাতাম, যে ভাবে কলা ভবনের দিকে যাচ্ছিলে হয়তো জীবনেও আর কাউকে হিরো গিড়ি দেখানোর মত পেতাম না।
এবার একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো, নাহ ছেলে গুলোকে গন্ডগোল করার জন্য ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ।
তোমার ভার্সিটিতে পড়া প্রায় শেষ। এমনিতেই হিরোগিরি দেখানোর তেমন একটা সুযোগ পেতাম না। আমি আসলেই খুব লাকি।
ও কথা বলছে আর আমি ভাবছি, কতটা নিরাপদ বোধ করছি এখন। কতটা শান্তি পাচ্ছি মনে মনে। যখন হাত ধরে টেনে নিয়ে আসছিলো,জানতাম না মানুষটা কে কিন্তু দারুণ রকমের এক ভাল লাগা কাজ করছিলো তখন।
হঠাৎ মনে হলো, কি ভাবছি এসব? ছেলেটা আমার ছোট।এক না দু না চার বছরের ছোট।
নাহ ওর সাথে কিছু সম্ভব না।
এবার ওর উদ্দেশ্যে বড়দের মত করে বললাম, পরিচিত দের ফোন করে দেখো সবাই ঠিক আছে কিনা।
বলে আমিও রিয়াকে ফোন দিলাম। রিয়া আমার ফোন রিসিভ করেই কেঁদে দিলো।তুই ঠিক আছিস তো? জানিস তোকে তাহিয়ান খোঁজতে এসেছিলো।
তোকে হারিয়ে ফেলেছি শুনে আর এক মুহুর্তও অপেক্ষা করে নি। ছুটে তোকে খোঁজতে গেছে। জানি না বেচারা কোথায় এখন। হয়তো তোকে খোঁজছে এখনো।কথা গুলো শুনে ভাল লাগলেও মিথ্যা রাগের গলায় বললাম, কই আমি বেঁচে আছি কিনা জিজ্ঞেস করবি কিন্তু না তুই অন্য কথা বলেই যাচ্ছিস।
রিয়া ঐ পাশ থেতে বললো নারে সত্যিই ছেলে টা তোকে ভালবাসে, আর জানিস আমাদের সবাই এখন ওকে নিয়েই কথা বলছি। এক ঝলকেই সবাইকে ফিদা করে দিয়েছে তাহিয়ান। ওর হাসি খুশি চেহারা দেখেছিলাম সকালে। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে ওর সিরিয়াস চেহারা দেখলাম। তুই যদি দেখতি তাহলে নিশ্চিত প্রেমে পড়তি।
এ কথা শোনার পর আর বললাম না আমি তাহিয়ানের সাথেই আছি। বললাম, আহারে কি কথা।আচ্ছা ফোনটা রাখছি।
এরপর চোখের কোণ দিয়ে তাহিয়ান কে খেয়াল করলাম। ও ফোন করে সবার খোঁজখবর নিচ্ছে।
আমি ওকে এমন ভাবে খেয়াল করছি যেনো ও বুঝতে না পারে।
একটু পর তাহিয়ান ফোনকল শেষ করে আমার সামনে এসে দাড়ালো।
বললো চোখের কোণ দিয়ে তাকাতে কষ্ট হয়, চোখের রেটিনার উপর চাপ পড়ে। এই যে এবার সামনে আসলাম এবার সোজা তাকাও।
তাহিয়ান এভাবে বুঝতে পারবে ভাবি নি। ছেলেটা অনেক বুদ্ধিমান। আমি বললাম আসলো তোমার বন্ধুরা সবাই ঠিক আছে কিনা চিন্তিত ছিলাম।
তাহিয়ান মুচকি একটা হাসি দিলো। এক মুহুর্তে যেনো ঝলমল করে রোধ উঠলো মনে হলো।
সে বললো হুম সবাই ঠিক আছে। আর পুলিশ এসেছে ঝামেলা অলরেডি শেষ।
আমি বাইরে গিয়ে দেখে আসছি। তুমি এখানেই থেকো। বের হবে না কেমন।
নিজের অজান্তেই বাচ্চা মেয়েদের মত মাথা নেড়ে হ্যা বললাম। তাহিয়ান চলে যাবার সময় পেছন থেকে বললাম সাবধানে থেকো।
তাহিয়ান দাড়িয়ে পড়লো আমার দিকে খুব মিষ্টি করে তাকিয়ে আবার চলে গেলো।
আমি এটা কি করছি? নিজের গালে একটা চড় দিলাম। এবার চড়টা ঠিক আছে,বেশি জোড়ে দেই নি।
তারপর নিজেকে বললাম তাহিয়ান তোর ছোট হিম। তুই কখনো বিয়ে করবি না, আর করলেও তোর কল্পনাতে বড় কাউকে ভেবে রেখেছিলি সব সময়। আর এটাই স্বাভাবিক। তোর চাইতে ছোট কাউকে কিভাবে স্বামী হিসেবে মানবি?
স্বামীকে ভালবাসার সাথে সম্মানও করতে হয়। চার বছরের ছোট কাউকে সেই সম্মান টা করা সম্ভব না।
একটুপর তাহিয়ান আসলো। বললো সব ঝামেলা শেষ। তুমি কি আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবে?
আমি বললাম কি সাহায্য?
তাহিয়ান বললো একটা গাছ রোপন করবো। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি আমাকে সাহায্য করেছো তো তোমাকেও করা উচিৎ।
দেখি পদার্থ বিভাগের গেইটের এক পাশে একটা ছোট গর্ত খোড়া। পাশে একটা কৃষ্ণচূড়ার চারা। কৃষ্ণচূরার চারা টা কোথায় পেলো ও?
এটা যখন ভাবছি তখন তাহিয়ান চারা টা রোপন করতে বললো আমাকে। আমি গর্তে রাখলাম। তাহিয়ান মাটি দিয়ে চারার আশপাশ ভরে দিলো। তারপর একটা বোতল থেকে পানি ঢেলে দিলো। তারপর বললো.. এই গাছটার নাম তাহিম। তাহিয়ান আর হিম এক সাথে তাহিম।
আমরা দুজন বুড়ো হলে কৃষ্ণচূড়া যখন ফোটবে তখন আমাদের নাতিপুতি দের নিয়ে এসে তাহিমের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো, কেমন?
আমি এবার সিরিয়াস গলায় বললাম।
দেখো তাহিয়ান, তুমি আর আমি এটা সম্ভব না।
আমার এমনিতেই কখনো বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো না। তাও কখনো এ বিষয়ে ভাবলে এমন কাউকে ভাবতাম যে আমার চাইতে অবশ্যই চার পাঁচ বছরের বড় হবে ছোট না।
তোমাকে বিয়ের করার কথা তো কল্পনাতেও ভাবি না। আর তোমাকে আমার ভাল লেগেছে তবে বর হিসেবে না।
জুনিয়র হিসেবে।তুমি মানুষটা ভাল হলেও তোমাকে বিয়ে করলে আমার মনে হয় আমি
মানসিক ভাবে শান্তি পাবো না। কারন তুমি অনেক ছোট আমার। এমন টা আমার কখনো ইচ্ছেও ছিলো না।
আমি মনে হয় তোমাকে বুঝাতে পেরেছি।
তাহিয়ান চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি আবার বললাম, আর তোমারো উচিৎ তোমার বয়সের কাউকে খোঁজে নেয়া, কেন যে আমাকে নিয়ে ভাবছো আমি বুঝতে পারছি না(লেখক -জেবুন রুমি)।এবার তাহিয়ান বললো...ভার্সিটি
কেউ একজন এডমিট কার্ডটা পেয়ে পিওন কে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। পিওন কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এটা তুমি ছিলে।
আমি অবাক হয়ে বললাম, কার্ডটা তোমার ছিলো!তুমি পদার্থের স্টুডেন্ট?
তাহিয়ান বললো হ্যা, আমি পদার্থের ছাত্র। আবার বলতে লাগলো ভার্সিটিতে প্রথম দিন র্যাগ দেয়ার জন্য কয়েকজন ভাইয়া সবার সামনে আমাদের কয়েকজন কে জামা কাপড় খোলতে বলেছিলেন। তুমি সেদিন ওদের বলেছিলে স্যার ডাকছেন। কিন্তু পরে জানতে পেরেছি এটা মিথ্যে ছিলো। আমাদের কে বাঁচাতে এমন টা করে ছিলো, সেদিন থেকে তোমাকে আমার খুব আপন আপন লাগতো।
দূর থেকে প্রায় ই তোমাকে খেয়াল করতাম।পদ্মফুলের
একদিন দেখলাম কৃষ্ণচূড়া ফুল কুড়িয়ে নিচ্ছো।সে দিন থেকে বুঝতে পারলাম কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলো অনেক সুন্দর।
বাসায় বিয়ের জন্য বলছেন। আমার পড়াশোনা এখনো শেষ হয় নি তাই বিয়ে করতে চাইনি। কিন্তু আপু যখন তোমার ছবি দেখালো একবাক্যে রাজী হয়ে গেলাম। কারন ছবিতে আমার স্বপ্নের মানুষটা ছিলো।
তোমার কি এখনো মনে হয় আমার সাথে থাকলে মানসিক শান্তি পাবে না?
আমি কিছুক্ষণ ভেবে বললাম, হুম। তুমি আমার অনেক ছোট।
তাহিয়ান কিছু বলছে না আর।
আমি বললাম, আমি বাসায় যাচ্ছি। ভাল থেকো তুমি। আর আমি দুঃখিত তাহিয়ান।
তাহিয়ান আস্তে করে বললো.. তুমিও ভাল থেকো।
আমি চলে এসেছি বাসায়। পুরোটা রাস্তায় খারাপ লাগলো।তাহিয়ানকে
নিজেকে কেমন অপরাধী লাগছে।
কাজটা কি উচিৎ হলো?
এরকম ভেবে ভেবে এক সপ্তাহ চলে গেলো। বড় খালা আবার আরেকটা বিয়ের প্রস্তাব বাসায় এনেছেন। এবার আগেই আপুরা বরের বয়স জিজ্ঞেস করে নিলেন। আমার তিন বছরের বড়। হুম এবার ঠিক আছে,এটা দেখা যাক।সবাই নিশ্চিন্ত এবার। কিন্তু আমার ভাল লাগছে না। কেমন যেন একটা অশান্তি ঘিরে রেখেছে আমাকে।
আমাকে বউ দেখতে এলো। সবার পছন্দ হলো। দুই সপ্তাহ পর বিয়ের দিন ধার্য করা হলো।
বাসার সবাই কত ব্যস্ত। কেনাকাটা করছে।লিস্ট করছে। আম্মু আব্বুও যেন হঠাৎ করে সুস্থ হয়ে গেছেন । মাঝে মধ্যে উনারা উঠে এসে সব কিছুর তদারকি করছেন।
বিয়ের এক সপ্তাহ আগে আমার ভীষণ জ্বর আসলো। বড় আপু আমাদের বাসায় চলে আসলেন, একদম বিয়ে শেষ করে যাবেন। আমার সেবা করছেন। জ্বর বাড়ছে যেনো দিন দিন। ডাক্তারের কাছে নেয়া হলো। ডাক্তার জানালো এটা ভাইরাস ফিভার। তাই একটু সময় লাগবে সেরে উঠতে।
চার দিন পর আমি সেরে উঠলাম। বড় আপু আমার পাশে এসে বসলেন।আস্তে করে জিজ্ঞেস করলেন, কাউকে কি তুই পছন্দ করিস?
করলে আমাদের বলতে পারিস। পছন্দের মানুষ যেমন ই হোক। তাকে বিয়ে করা উচিৎ।যাকে পছন্দ হয় নি তার সাথে জীবন কাটানো অনেক কষ্টের।
আপু হঠাৎ করে একথা গুলো আমাকে বলছেন কেন বুঝতে পারছি না। তাই জিজ্ঞেস করে নিলাম, আমাকে এগুলো বলছো কেন?
আপু বললেন জ্বরের ঘোরে কারো নাম নিচ্ছিলি বার বার।
আমি তো অবাক! কার নাম নিচ্ছিলাম?
আপু বললো.. তাহিয়ান। কে সে? তোকে দেখতে যে এসেছিলো সে নয় তো?
আমি চুপ করে আছি। জ্বরের ঘোরে তাহিয়ান কে ডাকছিলাম? কেন?
আপু বললো, ছেলেটা বয়সে ছোট হলেও আমার কিন্তু দারুণ পছন্দ হয়েছিলো। তুই এভাবে উঠে আসার পর আমরা যখন লজ্জা পাচ্ছিলাম তখন ছেলেটা ই তোর পক্ষ নিয়ে বললো, আপনাদের হয়তো জানানো হয়নি বয়সের ব্যাপার টা। আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আর উনার এভাবে চলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। যে কেউ ই উনার জায়গায় থাকলে এমন টা করতো।
জানিস ওর মা ও না একজন ভাল মানুষ। তিনি বললেন, মেয়ে আসলে অবাক হয়ে এমন ভাবে উঠে চলে গেছে। আমরা কিছু মনে করি নি।
তুই রাজী হলে ভালই হতো রে। এখনো সময় আছে ভেবে দেখতে পারিস।
আমি বললাম না আপু, এখন অন্য কিছু ভাবা ঠিক হবে না।
রাত হলো, সারাক্ষণ তাহিয়ানের কথা মনে পড়ছে। হাতের মাঝে এখনো যেনো তাহিয়ানের স্পর্শ লেগে আছে। কিছুতেই ভুলতে পারছি না।
তাহিয়ান কে এভাবে না করা ঠিক হয় নি এখন এটা খুব অনুভব করছি।
হঠাৎ করেই বুঝতে পারছি.. আমি মনের অজান্তেই মনের মাঝে তাহিয়ানের জন্য জায়গা গড়ে নিয়েছি।
কিন্তু সেটা বোঝার আগেই সুখ পাখিটাকে তাড়িয়ে দিয়েছি। চোখের কোণে একফোটা পানি জমা হলো। তাহিয়ানের কেয়ার করা, মুচকি হাসি সব কেমন যেন আমাকে এসে বার বার ছুয়ে যাচ্ছে।
তাহিয়ানের কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকাল থেকে আমার শাড়ি কাপড় কেনা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। মার্কেটে সবাই বসে আছি। সবাই একটা একটা করে শাড়ি দেখাচ্ছে। কিন্তু আমি কিছুই দেখছি না। সিড়ি দিয়ে নামার সময় হঠাৎ মনে হলো গেইটের পাশে তাহিয়ান কে দেখলাম। পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম, এটা হয়তো মনের ভুল ছিল।
নিজেকেই বকা দিলাম। বিয়ে ঠিক হয়ে আছে,এর মাঝে অন্য একজনকে ভাবছি আমি! ছিঃ এটা কি ঠিক হচ্ছে?
বিকেল বেলা বাসা থেকে একা বের হলাম। হাটছি একা একা।
কোথাও যাবো জানি না।বাসায় ভাল লাগছিলো না। তাই বের হয়ে এসেছি। হাটতে হাটতে বেশ কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম আমি আমার ভার্সিটির গেইটের সামনে এসে পড়েছি।এতটা পথ একা হেটে এসেছি ভাবতেই অবাক লাগছে।
আচ্ছা এসেই যখন পড়েছি তাহিম মানে কৃষ্ণচূড়ার সেই গাছটাকে দেখে যাই একবার।
গেইটের পাশে বোতলে পানি বিক্রি হচ্ছে। এক বোতল কিনে নিলাম।
পদার্থ বিভাগের সামনে গাছটা এখনো আছে। গোড়ার মাটি টাকে শুকনো মনে হলো। আমি বোতলের পানি টুকো ঢেলে দিলাম। আমার পেছনের রাস্তায় একটা মোটর সাইকেল থামার আওয়াজ পেলাম। এদিকে বিকেলে অনেক মানুষ ঘুরতে আসে। এটা কমন ব্যাপার।
আস্তে করে গাছের সাথে কথা বলা শুরু করলাম.. কেমন আছো তাহিম?
তোমার নাম টা কিন্তু অনেক পছন্দ হয়েছে আমার।আচ্ছা তুমি কি আমার সাথে রাগ করেছো? আমি বুঝতে পারছি আমি ভুল করে ছিলাম। রাগকরে থাকলে ক্ষমা করে দিও। এখন থেকে মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যাবো তোমার সাথে কেমন।
তখন পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো....
বাহ তাহিমের আমি ছাড়াও আরো একজন বন্ধু আছে দেখছি।
তাকিয়ে দেখি তাহিয়ান। আজ ছাই রংয়ের একটা শার্ট পড়ে এসেছে। হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো।চুল গুলো একটু এলোমেলো। কয়েক গুছা কপালকে ঢেকে রেখেছে। আমি তাকিয়েই আছি।চোখ ফেরাতে পারছি না। তাহিয়ান মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো..কেমন আছো হিম?
আমি তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিলাম। তারপর বললাম ভাল আছি,তুমি কেমন আছো?
তাহিয়ান বললো.. তুমি একশ তিন ডিগ্রী জ্বর নিয়েও ভাল ছিলে! আর তোমার জ্বর হয়েছে শুনে আমি ভাল ছিলাম না।
আমার জ্বর ছিলো এটা কিভাবে জানো তুমি?
তাহিয়ান বললো.. যার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে বলেছিলো। আমি অবাক হয়ে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই তাহিয়ান বললো...
অহহো তোমাকে তো জানানো হয় নি। উনি আমার খালাতো ভাই। তুমি বলেছিলে না বড় কাউকে বিয়ে করবে তাই আমি উনাকে গিয়ে তোমার কথা বললাম। আসল প্ল্যানটা কি জানো?
এখন তো তোমাকে পটাতে পারি নি। যখন ভাইয়ার বউ হয়ে ওদের বাসায় যাবে তখন প্রতিদিন তোমাকে পটাতে চেষ্টা করবো। এক সময় সত্যিই পটে যাবে তারপর দুজন মিলে পালিয়ে যাবো। হ্যাপি এন্ডিং।
আমি হাসি আটকে রাখতে পারলাম না। শব্দ করে হাসতে লাগলাম। তাহিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম আর তোমার মামাতো ভাই? উনি কিছু বলবেন না?
তাহিয়ান বললো, আরে নাহ। ভাইয়া আমাদের বাসায় থেকে পড়াশোনা করেছেন। আমাকে নিজের চাইতে বেশি ভালবাসেন। আর আমিও অনেক ফ্রী উনার সাথে। এই যে তুমি আমার প্রথম ক্রাশ।এটাও উনি জানেন।
আমি অবাক হলাম, বলো কি? এতটা ফ্রী!
তাহিয়ান বললো হ্যা। ভাইয়া কে যদি এখন গিয়ে বলি.. ভাইয়া তিন দিন পর আমি বরযাত্রী হয়ে যেতে চাই না,বর হয়ে যেতে চাই ঐটাও ভাইয়া রাজী হয়ে যাবে।
আমি আবার হেসে ওঠলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কি বলো, সিরিয়াসলি এমনটা করবেন উনি?
কথা বলছিলাম আর গেটের দিকে হেটে আসছিলাম।
তাহিয়ান বললো, করবেন তো। দেখতে চাও নাকি বল?
আমি তখন একটা রিক্সা ডাকতে গেলাম। তাহিয়ান বললো, আমার বাইক দিয়ে ড্রপ করে দেই?
আমি কিছু না ভেবেই রাজী হয়ে গেলাম। তাহিয়ান বাইক নিয়ে আসলো।বাইকে যে কি হ্যান্ডসাম লাগছে ওকে। পেছনে উঠে বসলাম। আস্তে করে তাহিয়ানের কাধে হাত রাখলাম।
পথে কোন কথা হলো না।কিন্তু একরাশি ভাললাগা ছিলো সারাক্ষণ। ভাললাগাটা এভাবে ধরে রাখার ইচ্ছেটা ছিলো পুরো সময় জুরে। তাহিয়ান আমাদের বাসার সামনে বাইক রাখলো। আমি নামতেই করুণ মুখে বললো.. বললে না যে?
আমি জিজ্ঞেস করলাম কি বলবো?
তাহিয়ান বললো.. কিভাবে আসবো, বর হয়ে না বরযাত্রী হয়ে?
আস্তে করে তাহিয়ানের হাতটা নিজের হাতে তোলে নিলাম, তারপর বললাম দুটো হয়েই এসো। আমি শুধু তোমার জন্যই অপেক্ষা করবো।
তাহিয়ানের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠলো। চোখ মুখ দিয়ে আনন্দ ঠিকরে পড়ছে।আমি বাসায় ঢুকে গেলাম।
বড় আপুকে খোঁজছি। উনার সাথে কথা বলতে হবে। যাকে ভালবাসি তাকেই বিয়ে করতে চাই। সে ছোট হোক বা বড়। কারন ভালবাসা খাঁটি হলে সম্মান টা আপনা আপনি ই চলে আসে।বয়সটা কোন বাধা না।
_সমাপ্ত_
গল্পঃ বাবা, লেখকঃ মোঃ ইমরান
মায়ের থাপ্পর খেয়ে আজ একদিন বাসার বাহিরে ছিলাম
যাতে মা বাবা আমাকে ফোন করতে না পারে তাই রাগ করে ফোনটা বন্ধ করে রেখে দিয়েছি।
পরের দিন সকালবেলা বাসার উদ্দেশ্যে যাওয়া শুরু করলাম,
বাসার সামনে এসে একটা বাইক একদম নতুন দেখে মনের ভিতর একটা অনন্দ অনুভব করলাম।
কারন গতকাল এই বাইকের জন্য বাবার সাথে আমি খারাপ ব্যাবহার করেছি,বাবাকে যা না তা বলেছি,
আমার ক্লাসের সবার বাইক আছে,আমাকে বাইক কিনে দিতে হবে তুমি যদি বাইক কিনে দিতে না পারো তবে তুমি কেমন বাবা,ছেলের আবদার পুরন করতে পারো না,
বাবার সাথে আমার তর্ক আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো কিন্তু বাবা নিরব দর্শকের মতো শুনেই যাচ্ছে আর মুচকি হাসছে
তখনই মা এসে আমার গালে অনেকগুলো থাপ্পর দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বললো আমিও তখনই রাগ করে বের হয়ে গেলাম
আর আজকে এখনই আমি বাসায় আসলাম
আর বাইকটা বাসার সামনে দেখে,বাবাকে বলা কথা গুলোর জন্য অফসোস করতে লাগলাম।
বাবা কে গতকাল যা বলেছি তার জন্য আমার ক্ষমা নেই
আমি আজকে বাবার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবো ,যতক্ষন ক্ষমা না করবে ততক্ষন আমি পা ছাড়বো না,
আনন্দ মনে বাসার ভিতর প্রবেশ করে দেখলাম বাসায় কেউ নেই
সারা বাসা তন্ন তন্ন করে খুজেও কাউকে খুজে পেলাম না।
তারাতারি ফোনটা সুইচ অন করে,
আম্মু কাছে,বাবার কাছে ফোন দিলাম কিন্তু কেউ ফোন তুলছে না
কেমন যেনো ভিতরে একটা ভয় কাজ করতে শুরু করলো,
তারাতারি পাশের বাসার আন্টিকে জিজ্ঞাস করলাম,আমার মা বাবা আর বোন কোথায়
সে বলল,তারা সবাই হাসপাতালে।
তারা হাসপাতালে কেনো,
আমি আন্টির কথা শুনে তারাতারি করে হাসপাতালে ছুটে গেলাম,
দেখি আইসিউর কেবিনের সামনে আম্মু আর আপু দাড়িয়ে আছে
আমাকে দেখে আম্মুর কান্নাটা বেড়ে গেলো
আমি বললাম,আম্মু কাদছো কেনো ,তোমরা হাসপাতালে কেনো বাবা কোথায়?
আম্মু তো কান্না করতেই আছে
তারপর বোনটা আমাকে বললো,ভাইয়া তুই গতকালকের যখন রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলি তখনই বাবা অসুস্হ হয়ে পড়ে,
তারপর আমরা কতোবার তোর মোবাইলে ফোন করেছি কিন্তু তোর ফোন সুইচ অফ ছিলো,তারপর
দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসি,
ডাক্তার বলছে বাবা নাকি হার্টএট্যাক করেছে এখন বাবা আইসিউতে আছে বলেই কান্না করতে লাগলো
হঠাৎ তখনই ডাক্তার এসে আমাদের সবাইকে জানালো
আপনাদের রোগি আর বেচে নেই।
ডাক্তারের কথা শুনে মা প্রায় পাগলের মতো অবস্থা,আমি বাবা বলে চিৎকার দিয়ে বাবার কেেবিনে প্রবেশ করে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম,
বাবা ও বাবা,তোমার কিছু হয়নি,তুি ওঠো,
মা দেখো বাবার কিছু হয়নি,
বাবা,,,,,,,,,,আ
আমি আর কখনো তোমার কাছে কিছু চাইবো আর কখনো কিছু বলবো না,ও বাবা ওঠো,বাবা একবার ওঠো,সারাজীবন তোমার একটা কথারও অবাধ্য হবো না,,বুঝছি তুমি আমার সাথে অভিমান করছো তাই তো,,,,সে জন্যই চোখ বন্ধ করে আছো তাই তো,মা দেখো বাবা ঘুমাচ্ছে, ডাক্তার মিথ্যা বলছে,ও বাবা,ও বাবা,ও বাবা,আমার বাইক লাগবে না,আমার তোমারে লাগবে,বাবা ও বাবা,ও বাবা,,জড়িয়ে ধরে চিৎকরার করে শুধুই বাবা বাবা বলে চিৎকার করতে লাগলো,ফিরে আসো বাবা,ও বাবা
কবরের পাশে দাড়িয়ে,,,,
বাবা তোমাকে একটিবার সরি বলার সুযোগ দিলে না,একটিবার পা দুটো জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দিলে না,আমাকে একটাবার জড়িয়ে ধরলে না,আমাকে আর একটাবার খোকা বলে ডাকলে না,আমারে আর কখনো,বাবা বলে ডাকবে না,,,আমাকে আর কখনো আমার বাবা, বাবা বলে ডাকবে না।
ঝড়া বেলিফুলঃ AbantiIslamPart:1
ক্লাবে গান গাওয়া মেয়েটার মুখ না দেখায় সবাই একটু বিরক্ত হয়ে আছে। কিন্তু গানের গলা এত সুন্দর ছিল কেউ চাইলেও ফিরে যেতে পারে না। হঠাৎ করে এই রকম মেয়ে আসা কারণ কেউ জানে না।
ক্লাবের কর্নার এ বসে ড্রিংক করে যাচ্ছে কাব্য আহমেদ গান যেন তার কান পযর্ন্ত পৌঁছাছে না। নিজের মতো করে নেশায় ডুবে আছে। এক এর পর এক ড্রিংক এর গ্লাসে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে। পাশের টেবিলের লোকের কিছু কথা কানে আসাতে ওটা শুনার জন্য মনযোগ দিল।
পাশের টেবিল থেকে একজন বলল,,,
---"মেয়েটার গান যেমন সুন্দর তেমনি মেয়েটার চোখ গুলো দেখতে সুন্দর। এই মেয়েকে তো আমার বিছানায় চাই। তার জন্য যত টাকা দরকার হয় আমি খরচ করব।"
কাব্য ওদের কথা শুনে কিছুক্ষন হেসে ড্রিংক এর গ্লাসে চুমক দিয়ে ভাবছে।এরা ড্রিংক করতে আসে নাকি মেয়ে নিয়ে মস্তি করতে আসে সেটা বুঝা যায় না। ড্রিংক শেষ করে বাহির হওয়ার সময় কাব্যর কানে গানের শুর যাওয়াতে একবার পিছন ফিরে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ফিরে চলে যেয়ে কিছু একটা ভেবে দাঁড়িয়ে যায়। মেয়েটার দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে কাব্য চোখ গুলো টানা টানা মুখ না দেখা গেলেও চোখ গুলো যে কারো মন কেরে নিতে পারবে।
হঠাৎ কারো ঢাকে পিছন ফিরে তাকায়। স্যার বাসায় যাবেন না অনেক লেট হয়ে গেছে।
কাব্য পিয়ে সাফিন এর কথায় ভাবনা থেকে বাহির হয়ে এসে বলল,,,
---হ্যা চল আমি তো খেয়াল করি নি। বলে ক্লাব থেকে বাহির হয়ে যায়।গাড়িতে সাফিন ড্রাইভ করছে। কাব্য সিটে হেলান দিয়ে আছে। সাফিন ড্রাইভ করতে করতে বলল,,,
---"স্যার মেয়েটার গানের গলা কিন্তু অসাধারণ চোখ গুলো খুব সুন্দর মুখটা না দেখা গেলেও মেয়েটাকে অসাধারণ লাগছিল।"
কাব্য সাফিন এর কথা শুনে চোখ খোলে সাফিন এর দিকে তাকিয়ে বলল,,,
---"গানের গলা ভালো হলে কি হবে,এইসব যায়গায় ভালো কেউ আসে নাকি। বাবা মার বিগড়ে যাওয়া মেয়েরা আসে আর নয়ত দেখ ওইসব মেয়েরা আসে।"
সাফিন কাব্যর কথা শুনে বলল,,,
---"তা এখানে ভালো বা কে আসে সব তো বিগড়ে যাওয়া মানুষ আসে। বলে কিছু একটা ভেবে চুপ হয়ে যায়।"
কাব্য সাফিন এর কথা শুনে একটু রেগে বলল,,,
---"অনেক হয়েছে এখন বাসায় চল আর কথা বলতে হবে না।"
_______________
কুঞ্জন ক্লাব থেকে বাহির হয়ে আসার সাথে সাথে চারজন লোক কুঞ্জন এর কাছে চলে আসে।
কুঞ্জন লোকদের উদ্দেশ্য করে বলল,,,
---"আমি ঠিক আছি আপনারা নিজেদের বাসায় চলে যান। আমি চলে যেতে পারব বলে গাড়ি নিয়ে বাহির হয়ে যায়। বাসায় ঠুকে দেখে রোমানা চৌধুরী বসে আছে। মেয়েকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে যেয়ে বলল,,,
---"এটা কোন টাইম হলো বাসায় আসার। আমার একটা কথাও কি তোমার শুনতে ইচ্ছে করেনা।কতবার বলেছি এই গুলো বন্ধ কর আর আমাদের সাথে সুইডেন চলে আস। এখানে থাকার কোন দরকার নাই। এই সব করে তুমি কি পাবে। যা হারানোর সেটা হারিয়ে গেছে।"
কুঞ্জন মায়ের কথায় রেগে বলল,,,
---"আমি যা করছি আমাকে সেটা করতে দেও। আমি জানি আমি ঠিক করছি। তুমি এইসব এর মধ্যে এস না মা। আর মা তুমি যাচ্ছ কবে।"
রোমানা চৌধুরী মেয়ের কথায়ো রেগে বলল,,,
---"আমি এখান থেকে চলে গেলে তুমি তোমার মন মতো লাইফ লিট করতে পারবে সেটাই তো চাইছ। আমার কালকে ফ্লাইট তোমার যা ভালো মনে হয় সেটা কর। আমি আর তোমাকে বাধা দিবনা বলে রুমে চলে যায়।"
_______________
কাব্য কফি খেতে খেতে নিচে আসছে। নাস্তার টেবিলে বসে আছে। আশরাফ আহমেদ নাস্তা করা অবস্থায় ছেলেকে বলল,,,
----"আজকে মিটিং এ তোমাকে থাকতে হবে। তাই আজকে অফিস থেক কোথাও যেও না। তোমাকে ছাড়া মিটিং সম্ভব না।"
কাব্য কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল,,,
---"কেন আজ তো কোন ক্লাইন্ট মিটিং আছে বলে আমার মনে পড়ছে না। তাহলে আজকে কিসের মিটিং আছে।"
আশরাফ আহমেদ কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলল,,,
---"কোন কিছু কি তোমার মনে থাকে না। গত সাপ্তাহে জব র্সাকলার দেওয়া হয়েছে আজকে তার ইন্টাভিউ আছে। আমি চাই তুমি নিজে ইন্টারভিউ নিবে। বলে খাওয়া শেষ করে টেবিল থেকে উঠে চলে যায়।"
কাব্য আর কোন কথা না বলে নাস্তা করায় মনযোগ দেয়। জাহানারা আহমেদ এসে ছেলের কাধে হাত রেখে বলল,,,
---"আজ ছাবিহা ভার্সিটি প্রথম দিন মেয়েটাকে ভার্সিটি দিয়ে অফিস যাস বাবা। একা একা যেতে ভয় পাচ্ছে।"
কাব্য মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
---"ঠিক আছে ছাবু কে তৈরি হতে বল আমাকে এখনি বাহির হতে হবে। অফিসে অনেক কাজ আছে। বলে নিজের রুমে চলে যায়।"
_______________
কুঞ্জন প্লান মতো নিজের সব ফাইল গুছিয়ে নিচ্ছে। যে করে হোক এই ইন্টাভিউ তে টিকরতে হবে। আর জব পেতেই হবে। ভেবে সব কাগজপত্র রি চেক করে বাসা থেকে বাহির হয়ে যায়।
১০ টায় ইন্টারভিউ জন্য চলে আসে।এসে ওয়েটিং রুমে বসে আছে। কিছুক্ষন পর একজন মেয়ে এসে কুঞ্জন কে ডেকে নিয়ে যায়।
কুঞ্জন এর এডুকেশন সার্টিফিকেট দেখে সবাই এক প্রকার অবাক হয়ে যায়। আশরাফ আহমেদ কুঞ্জন কে নিজের কেবিনে নিয়ে যায়।
আশরাফ আহমেদ আর কুঞ্জন সামনা সামনি বসে আছে।
আশরাফ আহমেদ কুঞ্জন এর কাগজ গুলো দেখে যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর নিজের থেকে বলতে শুরু করছে। আচ্ছে তোমার এডুকেশন এত ভালো তাহলে এত নরমাল পোষ্ট এ জব এর কারণ কি জানতে পারি।
কুঞ্জন আশরাফ আহমেদ এর এই প্রশ্নের জন্য প্রথম থেকে প্রস্তুত ছিল। তাই মুখটা মলিন করে বলল,,,
আমার বাবা মা মরা যায় রোড এক্সিডেন্ট। আমি একাই থাকি। এখানে আমার কেউ নাই। আমার পরিচিত আর কেউ থাকে না। জবটা আমার খুব দরকার আঙ্কেল প্লিজ জবটা হলে খুব উপকির হবে।বলে চোখের পানি ফেলছে।
চলবে,,,
শিক্ষণীয় বাংলা ইসলামিক ছোট পোস্ট ঃ
জাহালিয়াতের সময়ে পশ্চিমে এক সংগীত শিল্পীর একটা গান খুব শোনা হতো । গানের কথা গুলো অনেকটা এমন ছিলো “It's my life ,It's now or never ,I ain't gonna live forever ,I just want to live while I'm alive ”
.
পশ্চিমা ভোগবাদী জীবন ব্যাবস্থা আমাদেরকে মুলত এমনটাই শেখায়। জীবন তো একটাই খাও দাও ফূর্তি করো। তোমার জীবন ডিসাইড করার অধিকার শুধু তোমারই ।
.
এখানেই মুলত মুসলিম আর কাফিরদের মধ্যে অন্যতম বড় পার্থক্য । একজন মুসলিম নিজেকে আল্লাহ সুবহানু তায়ালার কাছে আত্বসমার্পণ করে , সে আকিদাহ রাখে সে আল্লাহ সুবহানু তায়ালার একজন দাস মাত্র । এই জীবন আল্লাহ সুবহানু তায়ালা তাকে দান করেছে । তাকে নিজের ইচ্ছা মত পরিচালিত করার কোন অধিকার তার নেই।
.
কাফেরদের কাছে দুনিয়াটা হচ্ছে ভোগের বস্তু । এখান থেকে যা খুশি করে যাও , জীবন তো একটাই । অপরদিকে একজন মুসলিম এর আকিদাহ হচ্ছে , দুনিয়াটা হচ্ছে শস্যক্ষেত । এখানে যা রোপন করা হবে আখেরাতে সেই ফল পাওয়া যাবে। কাজেই এই ছোট্ট দুনিয়াকে যেখানে আমি চিরোস্থায়ী বসবাস করব না তাকে ঘিরে এত স্বপ্ন সাজাবার কি আছে?
.
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে , যারা কাফেরদের দুনিয়ার শান শওকত ,প্রাচুর্য্য , শক্তি দেখে অবাক হয় । অথচ তারা ভুলে গেছে এই দুনিয়া তো মুমিনদের জন্য কারাগার । আর আল্লাহ এই কাফেরদের সাময়িক সময়ের জন্য ছাড় দিচ্ছেন , সময় শেষ হয়ে গেলেই আল্লাহ মুমিনদের অন্তরকে প্রশান্ত করবেন । মুমিনদেরকে দিয়েই আল্লাহ ও মুমিনদের দুশমন কাফেরদের উপর প্রতিশোধ নিবেন ।
ফেসবুকে একটা নিউজ ভাইরাল হয়েছিল কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের
.
এসব নিউজ গুলো শেয়ার দিতে খুব গা ঘিন ঘিন করে । কিন্তু বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা যায় না। রাস্তা ঘাটে বের হলেই অস্লিলতা, মসজিদ থেকে জুতা চুরি হচ্ছে , মুসলিমরা ধোকা দিচ্ছে । তারা যেন কাফদের মত দুনিয়া কামাইয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ছে । তারা কাফেরদের সুরে গেয়ে উঠতে জীবন তো একটাই , এখনই ইনজয় করে নাও ।
.
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মুসলিমরা কি জানে না কিংবা তারা কি বিশ্বাস করে না যে তাদের আল্লাহ সুবহানু তায়ালার কাছে জবাব দিহিতা করতে হবে । হ্যা তারা অবশ্যই জানে , কিন্তু এই দুনিয়ার মোহ , কাফেরদের চাকচিক্য ,কাফেরদের বিজয় তাদের কে ভুলিয়ে দিচ্ছে । তারা যেন এক স্বপ্নের জগতে বাস করছে । যেখানে তাদের ঘুম ভেংগে দেয়ার কেও নেই ।
আমাদের গ্রুপে অনেকেই প্রশ্ন করেন , কিভাবে গুনাহ ছেড়ে থাকতে পারি? কিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি ।
.
এর উত্তম হচ্ছে মৃত্যুকে বেশী বেশী করে স্বরন করা। কারন মৃত্যু হচ্ছে সুখ শান্তি বিনাশকারী । আপনি যদি কোরআনের ধারাবাহিক আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট দেখেন তাহলে দেখবেন , কোরআনে প্রথম দিকে মৃত্যু ,জান্নাত জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াত গুলো নাযিল হয়েছে । এরপর বিধান আহকাম গুলো । আল্লাহ সুবহানু তায়ালা এর মাধ্যমে সাহাবাদের কে আগে জাহান্নামের ভয় আর জান্নাত্তের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তুলে তাদের অন্তর গুলোকে তৈরি করেছেন । যাতে করে তারা সহজে ইসলামের বিধান গুলোকে মেনে নিতে পারে। এজন্যই সাহাবারা ইসলামের প্রসারে ময়দানের পর ময়দানে ছুটে বেরিয়েছেন , আল্লাহ রাস্তায় শহিদ হতে পিছপা হন নি । এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছুটে বেরিয়েছেন ইসলাম কে বিজয়ী করতে । যাতে আল্লাহর জমিনে আল্লাহ অবাধ্যতা, জুলুম নির্মুল হয়ে যায়।
.
হ্যা ইসলাম বিজয়ী থাকা ! ইসলামের বিজয়ী থাকা অতান্ত জরুরি , কারন মানুষের স্বভাব হচ্ছে বিজয়ী জাতীকে অনুসরন করা। আজকে জমিনে কাফেররা বিজয়ী, তাদের সমাজ , তাদের সংস্কৃতি তাই আমাদের ঘ্রাস করছে। অথচ যখন আল্লাহ জমিনে আল্লাহ দ্বীন বিজয়ী ছিল , তখন দলে দলে মানুষ ইসলামের ছায়ায় এসেছে । আল্লাহ বলেন ,
.
“যখন আল্লাহর সহযোগিতা এবং সেই বিজয় আসবে, আর তুমি দেখবে মানুষ দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে, তখন তুমি প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা ভরে তোমার রবের পবিত্রতা ঘোষণা করবে, আর তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবে। তিনি অবশ্যই বার বার ক্ষমা করেন। [আন-নসর]। ”
.
সুতরাং আমাদেরকে নিজেদের মধ্যে মৃত্যুর আকিদাকে বন্ধমূল করে নিতে হবে। মৃত্যুর কথা বেশী বেশী স্বরন করতে হবে। আর আল্লাহর দ্বীন যাতে আল্লাহর জমিনে বিজয় লাভ করে তার জন্য আল্লাহ সুবহানু তায়ালার দেখানো পথে কাজ করতে হবে । সর্বপরি আল্লাহ সুবহানু তায়ালার কাছে দূয়া জারি রাখতে হবে , যাতে আল্লাহ আমাদেরকে বিজয়ী জাতিতে পরিনত করেন।
-সাজ্জাদুর রহমান শাওন
২য় গল্পঃ স্বপ্ন কাগজের নৌকো, লেখা : Sabbir Ahmed
-চাচা আমার চাকরির ব্যবস্থা টা করলেন না??(শুভ)-আরে তোরে কইছি চাকরির ব্যবস্থা কইরা দিমু (চাচা)
-জ্বি বলছেন
-তো টেনশন করস কেন? যা গরু গুলারে খাওন দে
-তা দিচ্ছি কিন্তু চাচা আমার লেখাপড়া তো শেষ। আপনি বলেছিলেন লেখাপড়া শেষ হলে আপনার বাড়িতে আর কাজের লোক হিসেবে রাখবেন না
-আর গাধা এটা গ্রাম এখানে চাকরি পাবি কই? চাকরি পাইতে সময় লাগবো
-কত সময় চাচা?
-সামনের মাসে আমার বাড়িতে মেহমান আসতেছে ওদের শহরে বড় বড় কারখানা শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে ওদের বলে দিমু তোরে যেন কোনো একটা চাকরি ঐখানে দেয়
,,
শুভ চাচার পায়ের কাছে গিয়ে বলল
-চাচা কথা টা শুনে সত্যি আমার প্রান টা জুড়ায়া গেলো, আমার আব্বা আম্মার খুব সখ ছিলো আমি যেন শহরে চাকরি করি। কিন্তু তারা তো আর দেখতে পারবে না তারা তো নেই
-তোর দুঃখের কথা রাখ যা গরুগুলারে খাইতে দে
-জ্বি চাচা দিচ্ছি
-ঘোষ বাবু কি সকালে আসছিলো?
-হ্যা সে ঘি দিয়ে গেছে
-বাকি টাকা দেয় নাই?
-সেটাও দিছে, আমি চাচির কাছে দিয়ে দিছি
-হুমমমম
শুভ গরুকে খর খাওয়াচ্ছে। এই বাড়িতে বড় একটা গরুর খামার।সব গরু গুলো শুভ দেখাশোনা করে। মাস শেষে শুভ কিছু টাকা পায় সেইটা দিয়ে সারা মাস চলে। সে গরুকে খর দিচ্ছে আর গরুর সাথে কথা বলছে..
-আহারে তোদের কত সুখ খাস আর ঘুমাস আর আমারে দেখ খাটতে খাটতে জীবন শেষ। বাপ মায়ে তো এক পাই জমি জমা রাইখা যায় নাই। যা রাখছিলো গ্রামের মাতবর ঋনের বাহানা দেখাইয়ে দখল করছে। ধুরর কারে কি কই এই তোরা খা। এই এই ব্যাটা লাত্থা লাত্থি করস কেন? চুপ চাপ খা
গোয়ালে কাজ করছিলো তখনই আবার ডাকলো শুভর চাচি। চাচির ডাকে সাড়া দিয়ে শুভ এগিয়ে গেলো..
-চাচি বলেন (শুভ)
-আজকে হাটবার মনে আছে??(চাচি)
-হ্যা মনে আছে
-ব্যাগ আর টাকা টা রাখ, তোর যখন সময় হয় হাট করে নিয়ে আসবি
-চাচি কি কি নিয়ে আসবো?
-সেটা কি আবার বলে দিতে হবে? প্রতি হাটে যা নিয়ে আসিস তাই
-হুমমম
সারাদিন শেষে সন্ধ্যার পরপর গরু গুলো গোয়ালে তুলে খাওয়ানোর পর শুভর কাজ শেষ হয়। সন্ধ্যায় গোসল করে তার রুমে আসে। এই বাড়িতেই একটা ঘরে সে থাকে।
রুমে তার নানান রকম বই খাতাপত্র আছে। যে বই টা প্রিয় সেটা নিয়ে দোয়াত এর আলোতে পড়তে শুরু করে। বই পড়তে পড়তে একটা সময় সে ঘুমিয়ে যায়। তারপর সকাল বেলা, এভাবেই তার দিন পার হয়। শুভ গ্রাম থেকে দূরে একটা কলেজে লেখাপড়া করে সেখান থেকে স্নাতক পাশ করে। আর এখন সে একটা চাকরির জন্য খুব চেষ্টা করছে। চাচার মুখ থেকে মেহমান আসার কথা শোনার পর সে দিন গোনা শুরু করেছে। কবে আসবে তারা? কবেই বা শহরে যাবে আর একটা চাকরি নিবে।
দেখতে দেখতে সপ্তাহ খানেক চলে গেলো। একদিন দুপুর বেলা শুভ গরুগুলোকে গোসল করাচ্ছিলো আর তখনই...
-হে কাওবয় কাম হেয়ার
কথাটা কে বলল সেটা দেখার জন্য শুভ পেছনে তাকিয়ে দেখে একটা ঘোড়ার গাড়িতে কয়েকজন নতুন মানুষ এদের আগে কখনো দেখে নি সে।
-হে কাম কাম (শুভর বয়সী একটা লোক শুভ কে ডাকছে)
,,
শুভ এগিয়ে গিয়ে বলল
-জ্বি বলেন (শুভ)
-ব্যাগ গুলো টেক ইট এন্ড ব্যাড়ির ভেতর গো (লোকটি)
-আপনি কি বললেন বুঝলাম
-গাইয়া তো তাই বুঝতে পারো নি ব্যাগ গুলো বাড়ির মধ্যে নিয়ে যাও
-ওহহহ আপনারা এই বাড়ির মেহমান?
-আমাদের দেখে কাজের লোক মনে হয়?
-না না দেন দেন ব্যাগ গুলো আমি নিচ্ছি.....হায়র
,,
শুভ গাড়ির কাছে এগিয়ে গেলো। ব্যাগ গুলো নামাতে যাবে তখন তার চোখ গেলো একটা সুন্দরি ম্যাম এর দিকে..
-আপা নামেন ব্যাগ গুলো নামাইতে হবে (শুভ)
-ওয়েট। উফফ কোথায় আসলাম এত গরম কেনো?(মেয়েটি)
-আপা আপনি নেমে ঘরের মধ্যে গিয়ে বসেন। সবাই তো নেমে চলে গেছে আপনি শুধু...
-..(পুরো কথাটা বলার আগেই মেয়েটা গাড়ি থেকে নেমে চলে গেলো)
-কিরে ভাই ব্যাগ গুলো নামাতে একটু সাহায্য করেন(শুভ গাড়িওয়ালা কে বলল)
,,
মেহমান আসার পর থেকে শুভর খুব খুশি খুশি লাগছে। ব্যাগ গুলো নিয়ে বাড়ির মধ্যে যেতেই শুভর চাচা এসে হাজির। মোট পাঁচজন মেহমান আসছে তাদের সাথে কথা বললেন খোঁজ খবর নিলেন তারপর শুভ কে ডেকে বললেন...
-এদিকে দেখ উনি তোর চাকরি দিবেন (চাচা)
-ওহহ উনি আপনার কে হয়? (শুভ)
-আমার বড় ভাই
-ও আল্লাহ উনার ছবি এতদিন ঘরে দেখছি কিন্তু চিনতে পারলাম না, ছবির চেয়ে উনি বাস্তবে বেশি সুন্দর
,,
শুভ কথা শুনে সবাই হাসলো।
-খোরশেদ ও কে??(খোরশেদ শুভর চাচার নাম)
-ভাইজান ভেতরে চলেন, বসে তারপর বলছি
,,
ভেতরে যাওয়ার পর..
-ছেলেটা কে??(খোরশেদ চাচার বড় ভাই রাশেদ)
-ছেলেটা পাশের গ্রাম থেকে এসেছে। একদিন আমি পাশের গ্রামে হাটে গিয়েছিলাম সেখান থেকে ওর সাথে পরিচয়। গ্রামের মাতবর ওর বাড়িঘর দখল নিয়েছে,বাবা মা না থাকায় ছেলেটা আজ পথে। ওকে চাকরির কথা বলে আমার বাড়িতে কাজ করতে দেই। ওকে বলেছি ভাইজান যখন আসবেন তখন চাকরির কথা বলব
-তার মানে আমাকে চাকরি দিতে হবে?
-হ্যা ভাইজান একটু চেষ্টা করে দেখেন
-চেষ্টার কি আছে যাওয়ার সময় ওকে আমি নিয়ে যাবো। এখন এসব বাদ তোর দিন কাল কেমন কাটছে?
-হ্যা ভাইজান ভালই কাটছে
,,
এদিকে শুভ খুশি হয়ে নাচতে নাচতে কাজ করছে। সে শহরে যাবে চাকরি করবে, শহর ঘুরে দেখবে মজাই আলাদা। হঠাৎ এই কল্পনার জল্পনার মধ্যে ঐ সুন্দরী মেয়েটা ডাক দিলো..
-ওহে রাখাল বালক এদিকে এদিকে, এখানে আয় (মেয়েটা)
-জ্বি আপা বলেন (শুভ)
-নাম কি তোর?
-শুভ
-গ্রাম অঞ্চলে এই নাম চলে? আমি তো মনে মনে ভাবছিলাম ছালাম কুদ্দুস,রহিম টাইপ এর হবে। যাই হোক এই বাড়িতে তোর কাজ কি?
-গরু দেখাশোনা করা খাওয়ানো মাঝে মাঝে মাঠেও যাই বাজার করি
-বাহহ ভালো আমি ইরা
-ইরা মানে?
-আমার নাম ইরা(একটু রেগে)
-ওহহ আমি ভাবছিলাম পিংকি, চুমকি, টিনা মিনা টাইপ এর হবে
,,
শুভর মুখের কথা শুনে ইরা পুরাই থ। একজন রাখাল তাকে এত বড় অপমান করলো! ইরা সইতে না পেরে উঠে দাড়ায় আর শুভর গালে চর মেরে বলে..
-বেয়াদব বড়দের মুখের উপর কথা বলিস (ইরা)
-আপা আপনার বয়স কত??(শুভ)
-বিশ হবে হবে ভাব
-আমার ২৬ হবে হবে ভাব
-আমি এই বড়র কথা বলি নাই। বয়স ছাড়া তুই সবদিক দিয়ে আমার চেয়ে ছোট
-জ্বি আপা জানি
-যা যা এখন কাজ কর
,,
শুভ এসে চাড়ি তে পানি দিচ্ছে আর মনে মনে বলছে...
-আমার যদি আজ টাকা থাকতো আমিও একটা চর মেরে শোধ দিতাম। যাই হোক এদের সাথে ভালো ব্যবহার না করলে চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। যত কষ্টই হোক চাকরি টা নিতে হবে..
,,
পানি দেওয়া শেষ হয়নি সেই মুহূর্তে আবার ইরা ডাকলো..
-এই এদিকে আয় (ইরা)
-জ্বি বলেন (শুভ)
-ঘরে আমার রাসেল মাম্মাহ আছে উনাকে ডেকে দে
-ঐ বাংলিশ ম্যান??
-বাংলিশ ম্যান মানে?
-মানে আপনাদের সাথে একজন আসছে উনি বাংলা ইংরেজি দুটো মিলিয়ে কথা বলে
-হ্যা উনি যা ডেকে নিয়ে আয়
-হ্যা যাচ্ছি তবে একটা কথা
-কি??
-আপনার মাথায় চুলের উপর একটা পোকা..
ইরা চিল্লানি দিয়ে উঠে বলল
-কোথায় পোকা?
-চুলের উপর হাঁটছে। আচ্ছা চুপ চাপ বসে থাকেন আমি ফেলে দিচ্ছি
,,
শুভ ইরার কাছে একটা পাতা হাতে যায় আর চুলের উপর থেকে পোকাটা হাতে নিয়ে বলে..
-এটার কাটা যদি আপনার শরীরে ফুটে তো লাল হয়ে শরীর চুলকানো শুরু করবে (শুভ)
-ও বাবা কি ভয়ংকর দেখতে! এটা আমার মাথার উপর ছিলো, আমি ভাবতেই পারছি না
-হুমম খুব ভয়ংকর
-আচ্ছা এগুলো কি আরও আছে? (পুরো বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন)
-হ্যা আছেই তো এই পোকাটা দেখে মনে হচ্ছে যুবক। যদি তাই হয় ওর বউ আছে ছেলে মেয়ে আছে
-কয়টা ছেলে মেয়ে আছে?
-ওদের অনেকগুলো হয়
-কতগুলো?
-এই ধরেন এক ঝাঁকে চার থেকে পাঁচশ
-নাআআ আমি বাসায় চলে যাবো এখানে থাকবো না....
চলবে