একজন মারলে খুনি আর হাজার জন মারলে হিরো,বীর,বিদ্রোহী?

সন্ত্রাসী ব্রেন্টন টরেন্ট ও জঙ্গি রাষ্ট্র ভারত আমেরিকা চীন ফ্রান্স : Monir Ahmed Monir


নিউজিল্যান্ডে মুসল্লি হত্যাকারী ব্রেন্টন টরেন্টকে মিডিয়া জঙ্গি, সন্ত্রাসী বা খ্রিস্টান টেরোরিস্ট বলেনি, তা নিয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করছেন। নিউজের কমেন্ট সেকশনে প্রশ্ন তুলছেন কেন জঙ্গি-সন্ত্রাসী বলা হলো না?! এই ট্যাগগুলো কী কেবল মুসলিমদের জন্যই বরাদ্দ? প্রশ্নটা বেশ যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয়। তবে এখানে প্রাসঙ্গিক আরো কিছু বিষয় আলাপ করা যেতে পারে।

ব্রেন্টন টরেন্টের অপরাধ হচ্ছে সে অন্যায়ভাবে উপাসনালয়ে ঢুকে ৫১জন বেসামরিক মানুষকে খুন করেছে। যা অবশ্যই গুরুতর অপরাধ এবং বর্বর সন্ত্রাসী কার্যক্রম। তবে অমুসলিম কর্তৃক নিরাপরাধ মানুষ হত্যা চলতি শতাব্দীতে এটাই কী প্রথম নাকি এর আগেও হয়েছে? নিশ্চয়ই শুধু এ শতক না আগের শতকেও হয়েছে। আরো আগেও হয়েছে। গত এক শতকে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক তিন কোটি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। 

বিভিন্ন দেশে দেশে হামলা চালানোর মাধ্যমেই এতো বিপুল সংখ্যক মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন আশা স্বাভাবিক ব্রেন্টন টরেন্টকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, খ্রিস্টান টেরোরিস্ট না বলায় আমরা ক্ষিপ্ত হলেও এর চেয়ে হাজার গুণ অধিক অপরাধ করার পরও আমেরিকার নামের সাথে উক্ত ট্যাগ গুলো কেন আমরা লাগাইনা বা কেউ না লাগালেও প্রশ্ন তুলি না? ব্রেন্টন টরেন্টের নামের সাথে 'জঙ্গি' না লাগালে আমাদের বিবেকে নাড়া দেয় কিন্তু তার চেয়ে হাজার গুণ অধিক অপরাধীদের জঙ্গি না বলাটাই কেন আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়?

একই কথা চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, ভারতসহ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এদের সবার অপরাধই ব্রেন্টন টরেন্টের অপরাধের চেয়ে গৌণ নয় নিশ্চয়? টরেন্টের সাথে যাদের তুলনা করা হলো এখানে দুই তুলনীয়র মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। টরেন্ট একজন পারশন আর আমেরিকা-রাশিয়া ইত্যাদি হলো স্টেট। 

আমরা মাথার মধ্যে সেট করে নিয়েছি কোন ব্যক্তি বা সংগঠন অপরাধ করলে সেটা সন্ত্রাস আর রাষ্ট্র সে একই অপরাধ শত, হাজার বা লক্ষ গুণ বেশি করলেও তা সন্ত্রাস নয়। রাষ্ট্রকে 'সন্ত্রাসী' বলা হবেনা। মিডিয়া ও এস্টাবলিশমেন্ট কর্তৃক সেট করে দেয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী বা অন্যান্য বাহিনী সুযোগ পেলেই খুন ধর্ষণে মেতে উঠা সন্ত্রাস নয়, তারা সন্ত্রাসী বাহিনী নয়। সন্ত্রাস কেবল স্টেটের বাইরের অপকর্ম। আবার স্টেটকেও জাতিসংঘের সমর্থন নিয়ে স্টেট হয়ে উঠতে হবে! পশ্চিমের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ না হলে সেটাও হয়ে যাবে জঙ্গি সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রিত ভূমি।

টরেন্ট বা এ জাতীয় দূর্বল সন্ত্রাসীরা মানুষ খুন করলে রক্ত ঝড়ে , মায়ের বুক খালি হয়, শিশুরা এতিম হয়। তাই এরা সন্ত্রাসী। আর স্টেট বোমা মেরে বা ফিজিক্যালি হামলা চালিয়ে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করলেও রক্ত ঝরে না! মায়ের বুক খালি হয় না! শিশুরা এতিম হয় না! তাই স্টেট সন্ত্রাসী নয়! এরা 'জঙ্গী' রাষ্ট্র নয়। গুদাম থেকে মুসিকের ১ সের গম খাওয়া আমাদের কাছে অপরাধ মনে হলেও ডাকাত দলের গুদামঘর লোপাট করা বড় কিছু নয়।

নিপীড়িত উম্মাহর সদস্যরা টরেন্টকে সন্ত্রাসী বলতে বলছে তাও কম নয়, আবারো বলছি এটা প্রয়োজন তবে সাথে এও মনে রাখতে হবে আসল সন্ত্রাসী বা বড় সন্ত্রাসী কারা। ভয়ে বা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বলতে না পারলেও মনে ঘৃণাটা যেন বরাদ্দ থাকে। যে বড় অপরাধী তার প্রতি ঘৃণাটাও বেশি রাখা উচিত। শক্তিশালী বড় সন্ত্রাসীকে ঘৃণা না করে, কেবল দুর্বল সন্ত্রাসীকে ঘৃণা করলে তো ঘৃণার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা হলো না! এই ভারসাম্য রাখার কথাই বলছি, এখন আবার কেউ বলে বসেন না আবার- 'পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়!'
- Monir Ahmed 
Next Post Previous Post