হিউম্যান বিয়িং বই PDF ডাউনলোড ও রিভিউ | বাংলা ইসলামিক বই হিউম্যান বিয়িং | "ইন্টারফেইথ বা ‘আন্তঃধর্ম’
"ইন্টারফেইথ শব্দের অর্থ ‘আন্তঃধর্ম’। বর্তমান মুসলিমদের জন্য একটি বড় ফেতনা হচ্ছে ইন্টারফেইথ।
এর সম্পর্ক মূলগতভাবে পাশ্চাত্য বিশ্বাসগুলোর সাথে হলেও এটি অনেক আগেই একটি স্বতন্ত্র ও সক্রিয় মতবাদে রূপ নিয়েছে।
ইন্টারফেইথের মূলকথা হলো, ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্মকেও ধর্মীয় মর্যাদা দেওয়া এবং অন্য ধর্মের জন্য মুসলিমদের মাঝে ধর্মীয় মর্যাদাবোধ ও সহানুভূতি প্রতিষ্ঠা করা।
বিভিন্ন নামে এই মতবাদ মুসলিম সমাজে প্রচারিত হয়ে থাকে। যেমন: ইন্টারফেইথ ডায়ালগ, ইন্টারফেইথ হারমোনি, ইন্টারফেইথ এলায়েন্স ইত্যাদি।
➤আরেকটি অনন্য চিন্তামূলক ইসলামিক বই চিন্তাপরাধ ।
পাশ্চাত্য আকিদা স্বাধীনতা ও সমতার সাথে ইন্টারফেইথ বিশ্বাস অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পৃক্ত। পাশ্চাত্য স্বাধীনতার মূলকথা হলো, ভালো-মন্দ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই স্বাধীন। আর এই স্বাধীনতা ব্যবহার করে প্রত্যেকের নির্ধারিত চয়েজই সত্য এবং সমান।
এটা হলো পাশ্চাত্য সমতা। ইন্টারফেইথের ক্ষেত্রে এই দুই বিশ্বাস কাজ করে।
যে ব্যক্তি মেনে নেবে যে ‘ভালোমন্দ নির্ধারণ করার অধিকার যেকারো রয়েছে’; ‘ভালো-মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত নয়’; ‘আর প্রত্যেকের চয়েজ-করা বিষয়ই সত্য ও সমমান’।
সে তখন এটাও বিশ্বাস করবে যে, ‘প্রত্যেকের পালন-করা-ধর্মই সত্য এবং তা সমঅধিকার ও মর্যাদার দাবি রাখে’। ইসলামকেই তখন সে একমাত্র সত্য হিসেবে মানবে না;
অথচ মহান আল্লাহ বলেছেন,
اِنَّ الدِّیْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ
নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দীন ইসলাম।
বাংলাদেশে এই ইন্টারফেইথ বিশ্বাস প্রচারে ‘কোয়ান্টাম মেথড’ অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এ ছাড়াও বিশ্বব্যাপী কাজ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। দুঃখজনক হলেও সত্য, মুসলিমবিশ্বের অনেক আলেম, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং রাষ্ট্রপ্রধান এসব সংগঠনের মূলে কাজ করছে কিংবা তাদের প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে মূল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
গত বছর আবুধাবিতে ‘আব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউজ’ নামে যেই কমপ্লেক্সের ভিত্তি স্থাপন করা হয়, সেখানে সব ধর্মের উপাসনালয় একসাথে নির্মাণ করা হবে। ২০২২ সালে এই প্রজেক্টের কাজ সমাপ্ত হবে। এই প্রজেক্টটি একটি ইন্টারফেইথ প্রজেক্ট।
এ ছাড়া রাশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে Temple of all Religions নামে কিছু উপাসনালয় তৈরি হচ্ছে, যেখানে সব ধর্মের উপাসনা হবে একসাথে। অত্যন্ত সুকৌশলে এখানে কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করার জন্য।
আন্তর্জাতিক কিংবা আঞ্চলিক কিছু সংগঠন আলেমদের নিয়ে ইন্টারফেইথ ডায়ালগ অনুষ্ঠান করছে। মাদরাসার আঙিনাতেও তারা এ ধরনের অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছে।
ধর্মীয় সম্প্রীতির নামে সাধারণ মুসলিমদের ইন্টারফেইথ বিশ্বাসের দীক্ষা দেওয়া হচ্ছে। কার্যতভাবে ইন্টারফেইথ সেক্যুলারিজমেরই ভিন্ন নাম।"
আমাদের সমাজে পাশ্চাত্য নৈতিকতা এতটাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়েছে যে, ইসলামের নৈতিকতা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না। দীর্ঘ সময় যাবৎ সেক্যুলারিজম ও লিবারেলিজম দ্বারা পরিচালিত সমাজে বসবাস করার কারণে আমরা পশ্চিমা নৈতিকতা ও দর্শনকে পরম সত্য হিসেবে মনস্তাত্ত্বিকভাবে মেনে নিয়েছি এবং এটাকে চ্যালেঞ্জ করার পরিবর্তে নৈতিক মাপকাঠি কিংবা কম্পাস হিসেবে গ্রহণ করেছি।
ফলে যখনই পশ্চিমা কাঠামোর সাথে ইসলামের কোনো অবস্থান মিলছে না, তখন কেউ কেউ ইসলাম নিয়ে সংশয়ে পড়ছে এবং শেষমেশ ঘোষিতভাবেই রিদ্দার পথ বেছে নিচ্ছে। আর অধিকাংশই ইসলামি অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে এই পাশ্চাত্য-কাঠামো মেনে নিয়ে অঘোষিতভাবেই ইলহাদে জড়িয়ে পড়ছে। এটা হলো সাধারণ মুসলিমদের অবস্থা।
যেসব আলেম, তালেবুল ইলম, ইসলামিক স্কলার এবং বুদ্ধিজীবী পাশ্চাত্য সভ্যতার কাছে মনস্তাত্ত্বিকভাবে পরাজয় বরণ করেছে, তারা এই প্রশ্নগুলোর ক্ষেত্রে ইসলামের এমন নতুন ব্যাখ্যা হাজির করছে, সালাফদের মাঝে যার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় না এবং সেটা পাশ্চাত্য কাঠামোর সাথে সাংঘর্ষিকও হয় না। বরং সেই ওয়েস্টার্ন ফ্রেমওয়ার্কের সাথে খাপ খায়। আর এখান থেকেই সৃষ্টি হয় মডার্নিজম ও রিভিশনিজম।[১]
এজন্য আমাদেরকে এরকম দাঈ ও স্কলারদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পাশ্চাত্যের মোকাবিলায় পাশ্চাত্য কাঠামো ও মানদণ্ডকে মেনে নিয়ে বিজ্ঞান, স্বাধীনতা, সমতা, উন্নতি ইত্যাদির মাধ্যমে ইসলামকে সঠিক প্রমাণ করার প্রবণতা ছাড়তে হবে। এটা খুবই দুর্বল এবং রক্ষণাত্মক অবস্থান। বরং আমাদেরকে আক্রমণাত্মক অবস্থানে যেতে হবে।
উলটো তাদের মাপকাঠিকে প্রশ্ন করা শিখতে হবে। বলতে হবে বিজ্ঞান কেন বিশুদ্ধ ও চূড়ান্ত মাপকাঠি নয়! বর্তমান বিজ্ঞান কীভাবে পক্ষপাতদুষ্ট! সমতা, স্বাধীনতা, উন্নতি কেন ন্যায় এবং নিরপেক্ষ নয়! প্রশ্ন করতে হবে আল্লাহর একজন দাস কোন অধিকারে স্বাধীনতা চাইবে! ইনসাফের পরিবর্তে সে কোন সাহসে সমতার কথা বলে! কোন অধিকারে সে উন্নতির খোদাপ্রদত্ত সংজ্ঞা বদলে ফেলে!
আবার ইসলামের সূত্র ছাড়া ন্যায়, শান্তি এবং অধিকারও কোনো মাপকাঠি নয়। কারণ ইসলামই একমাত্র হক ও ন্যায়। এর বাইরে সবকিছু বাতিল ও জুলুম। জানাতে হবে একমাত্র ইসলামই চূড়ান্ত ও বিশুদ্ধ মাপকাঠি। এভাবে নিজেদের মাপকাঠি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
মুসলিম-মানসে পাশ্চাত্য-পূজার যে মূর্তি তৈরি হয়েছে, তাকে প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করতে হবে। আঘাতে আঘাতে ভেঙে ফেলতে হবে। আর এজন্য জরুরি হলো পাশ্চাত্য সভ্যতার মূল কাঠামো সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং ইসলামের মৌলিক অবস্থান তথা সালাফে সালেহিনের অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।
১)মডার্নিজম হলো শরিয়াহর শিক্ষাকে পাশ্চাত্য দর্শনের মানদণ্ডে বিচার করা এবং শরিয়াহর শিক্ষাগুলোকে এমনভাবে বদলে নেওয়া, যাতে ইসলামকে পাশ্চাত্য কাঠামোতে খাপ খাওয়ানো যায়। আর রিভিশনিজম হলো শরিয়াহর শিক্ষার আলোকে পাশ্চাত্য প্রতিষ্ঠান এবং কার্যক্রমকে শরিয়াহসম্মত বানানোর চেষ্টা করা। উভয়ের মাঝে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও একটা গুরুত্বপূর্ণ মিল আছে। তা হলো দুজনের কেউই পাশ্চাত্য কাঠামোকে আঘাত করতে চায় না এবং জরুরি কিংবা আবশ্যিক মনে করে না।
সদ্য প্রকাশিত বই হিউম্যান বিয়িং এর ভূমিকা থেকে....
প্রকাশিতব্য বই হিউম্যান বিয়িং থেকে ঃ Iftekhar Sifat
আরো পড়ুন ঃ চিন্তার আড়ালে ভ্রান্তির অনুপ্রবেশ
PDF Download: LINK
লেখক প্রকাশক পিডিএফ প্রকাশ না করলে আমরাও লিংক দিতে পারছি না। একটু কষ্ট করে বইটা কিনে পড়ুন। একদিন বিকেলে হোটেলে নাস্তা করলেও তো ২০০+ টাকা বিল আসে, তাই না? কিছু টাকা খরচ করে বইটা কিনে পড়ুন এতে ইসলামিক প্রকাশনা বৃদ্ধি পাবে ও ইসলামি লেখা বেশি বেশি পাবো।
Buy From Wafilife: হিউম্যান বিয়িং বই
হিউম্যান বিয়িং বইটির শর্ট পিডিএফ প্রকাশ করা হয়েছে পাঠকের সুবিধার্থে। নানান ব্যস্ততার কারণে সবার পক্ষে পিডিএফ ডাউনলোড করে দেখা সম্ভব হয় না। তাই কোনো কোনো ভাই সূচিপত্র দেখতে চেয়েছেন। তাদের জন্য সূচিপত্র দেওয়া হলো।
হিউম্যান বিয়িং সূচিপত্র
ভূমিকা
পরিভাষার চোরাবালি
আধুনিক পশ্চিমের শেকড়
গ্রিক সভ্যতা
সাংস্কৃতিক তৎপরতা
রোমান সভ্যতা
রোমান সংস্কৃতি
গণতান্ত্রিক সিস্টেম
মধ্যযুগ
রেনেসাঁ বা নবজাগরণ (আধুনিকতার সূচনা)
যুক্তিবাদ (Rationalism)
নিউটনের ভ্রান্তি
ব্যক্তি ও সমাজের অবস্থান
ফরাসি বিপ্লব
ঊনবিংশ শতাব্দী
তুলনামূলক ধর্মপাঠ
উপনিবেশবাদ (colonialism)
বিংশ শতাব্দী
পাশ্চাত্য সভ্যতার সৃষ্টি
১.1 স্বাধীনতা
১.2 স্বাধীনতার ইসলামি দৃষ্টিকোণ
১.3 স্বাধীনতার ইসলামিকরণ
২.১ সমতা
২.২ ইসলামের দৃষ্টিতে সমতা
২.৩ সমতার ইসলামিকরণ
৩.১ উন্নতি (Development)
৩.২ ইসলামের দৃষ্টিতে উন্নতি
পাশ্চাত্যের কিছু মতবাদ
ফেমিনিজম বা নারীবাদ
ইন্টারফেইথ
মুক্তচিন্তা
হিউম্যানিজম : আইন ও অথরিটি
হিউম্যানিজম : মুসলমান নাকি মানুষ?
হিউম্যানিজম কি নিরপেক্ষ হতে পারে?
হিউম্যান রাইটস এবং হুকুকুল ইবাদ-এর পার্থক্য
ইসলাম বনাম সেক্যুলারিজম
সেক্যুলারিজম
ইসলামি দৃষ্টিকোণ
টলারেন্সের ইসলামিকরণ
সেক্যুলারিজমের ইসলামিকরণ
ল’ অফ পিপলস
ফান্ডামেন্টালিস্ট মুসলিম
ট্রাডিশনালিস্ট মুসলিম
মডারেট মুসলিম
সেক্যুলারিস্ট মুসলিম
উপসংহার
বিজয়ের জন্য প্রয়োজন পথপ্রদর্শক কিতাব এবং সাহায্যকারী তরবারি।’
পশ্চিমাবিশ্ব যে ইসলামের সাথে এক সামগ্রিক লড়াইয়ে লিপ্ত একবিংশ শতাব্দীতে এসে এই বিষয়ে কোনো মুসলিমের সন্দেহ থাকার কথা নয়।
এই দ্বন্দ্ব সভ্যতার দ্বন্দ্ব। পাশ্চাত্য সভ্যতা বিশ্ব-নেতৃত্বের আসন গ্রহণ করার পর নিজেদের জন্য একমাত্র হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে। পাশ্চাত্য সভ্যতাকে পরাজিত করে বিশ্ব-নেতৃত্ব গ্রহণ করার একমাত্র শক্তি ইসলামি সভ্যতার ভিতরেই আছে।
ফলে পশ্চিমাবিশ্ব ইসলামের বিরুদ্ধে এক সামগ্রিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। সামরিক আগ্রাসনের পাশাপাশি এই যুদ্ধের আরো ভয়াবহ দিক হলো আদর্শিক আগ্রাসন, যাকে বলা যায় মনস্তাত্ত্বিক লড়াই।
ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব। এই টপিকে অনেক ইসলামি চিন্তাবিদই বই লিখেছেন। বিগত শতাব্দীতে যারা এই বিষয়ে কাজ করেছেন, তাদের কাজগুলো তাদের সময়ের জন্য বর্তমানের তুলনায় বেশি প্রাসঙ্গিক ছিল।
কারো লেখার ধরন ছিল পশ্চিমা দার্শনিকদের থিউরিসমূহের খণ্ডন, আবার কেউ কেউ তখনকার সমাজ-বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে ইসলামের সাথে পাশ্চাত্যের সংঘাতকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের সামনে দুটি সংকট এসে হাজির হয়েছে।
প্রথমত, মুসলিমবিশ্বের পরাজিত মানসিকতা, হীনম্মন্যতা কিংবা পাশ্চাত্য-মুগ্ধতা সীমাহীন বৃদ্ধি পাওয়া। ফলে পাশ্চাত্য সভ্যতার সাথে মুসলিমবিশ্বের আপস এবং পাশ্চাত্যকে ইসলামিকরণের প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, প্রথমে উল্লেখকৃত সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার মূল দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে সমসাময়িক যেই বয়ান তৈরি করার প্রয়োজন ছিল, সেই জায়গাটায় বিরাট শূন্যতা রয়ে যাওয়া। অন্ততপক্ষে বাংলাভাষায় এই শূন্যতার কথা অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। আমার ব্যক্তিগত অনুসন্ধান এমনটাই।
প্রথম সংকটকে আমরা মডারেশন হিসেবে জানি। এটা মুসলিম-সমাজে অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কীভাবে এবং কাদের মাধ্যমে এই সংকট দিন দিন বেড়েই চলছে- বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র রচনার দাবি রাখে। ফলে বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে প্রথম সংকট নিয়ে আলোচনা থাকবে না।
আমাদের আলোচ্য বিষয়, দ্বিতীয় সংকট। বর্তমান সময়ের ইসলামি স্কলারগণ প্রথম সংকট মোকাবিলা করার চেষ্টা করেননি, ব্যাপারটা মোটেই এমন নয়। তারা চেষ্টা করলেও পাশ্চাত্য সভ্যতা নিয়ে তাদের জানাশোনার একটা কমতি আছে।
ফলে অধিকাংশই একদম জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলোতে হোঁচট খেয়েছেন। প্রতিরক্ষার জায়গা থেকে লিখতে গিয়ে অনেক সময় ইসলামের আপসহীন দাসত্বের বাণী থেকে সরে এসেছেন কিংবা শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন।
পাশ্চাত্যের মূলকে না জানার পাশাপাশি সমাজ-বাস্তবতায় পাশ্চাত্যের প্রভাব অনুধাবন করারও অক্ষমতা তৈরি হয়েছে। যে বিষয়টি আসলে পাশ্চাত্যের প্রভাব সেটা আমাদের কাছে কোনো সমস্যারই মনে হচ্ছে না।
বরং এটাকে আমরা গৌরবের কারণ বানিয়ে নিয়েছি। ফলে পাশ্চাত্যবিরোধী বক্তব্যেও পশ্চিমের ভয়াবহ প্রভাব লক্ষ করা যায়। সমস্যার মূল যখন চিহ্নিত হবে না তখন সমাধানও ভুল আসবে। এটাই নিয়ম। আর হচ্ছেও তাই।
‘বাতিল যেভাবে আসবে তাকে সেভাবেই মোকাবিলা করতে হবে’ এমন সরল-সোজা যুক্তির মারপ্যাঁচে পশ্চিমা সভ্যতাকে বরণ করে নেওয়ার সবক দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা ভুলে যায় হক এবং বাতিলের বিভাজন শুধু নামেই নয়, বরং উভয়ের মাঝে কাঠামোগত বিস্তর ফারাক রয়েছে।
বাতিল যে পথে উন্নতি করবে হক সে পথে উন্নতি করতে পারবে না। বরং সে পথে হক বাতিলের সাথে একাকার হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
কেউ আবার বিজ্ঞানকে মুসলিম সভ্যতার একমাত্র ভরসা বলে দাবি করছে; অথচ বিজ্ঞান কোনো সভ্যতার উত্থানের সূত্র নয়, ফলমাত্র। উপর্যুক্ত বাস্তবতাগুলো সামনে রেখেই বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে পাশ্চাত্যের মূল কাঠামো তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতা যেই ভিত্তিমূলের উপর দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোর ব্যাপারে ইসলামের শাশ্বত দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করা হয়েছে। সাথে সাথে পাশ্চাত্যের মোকাবিলায় মৌলিকভাবে করণীয় সম্পর্কে একটি উপসংহার যুক্ত করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই লক্ষ করেছি, ইসলামের দৃষ্টিতে বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতাকে কোন হিসেবে নামকরণ করা যায় এবং ইসলাম সেই সমস্যার কী সমাধান দিয়েছে। ব্যাপারটা অনেকের কাছে অতি সরলীকরণ মনে হতে পারে, কিন্তু আমাদের মুক্তির পথ এখানেই নিহিত। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ খুব সুন্দর বলেছেন, ‘বিজয়ের জন্য প্রয়োজন পথপ্রদর্শক কিতাব এবং সাহায্যকারী তরবারি।’
লেখকের কথা থেকে বই: হিউম্যান বিয়িং (প্রকাশিতব্য)
ফেমিনিজমের
মোকাবিলায় পাশ্চাত্যের এই বিশ্বাসগুলোতে আঘাত করার পাশাপাশি আমাদের
ইসলামপ্রদত্ত নারী অধিকার সমাজে বাস্তবায়ন করার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এই
জায়গাটায় আমাদের চরম পর্যায়ের অবহেলা রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে,
পার্শ্ববর্তী শিরকি সমাজের প্রভাবে এবং ইসলাম পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠিত না
থাকার কারণে যুগ যুগ ধরে আমাদের সমাজে নারীদের সাথে এমন কিছু বিষয় জুড়ে
দেওয়া হয়েছে, যা ইসলামে অনুমোদিত নয়।
অথচ সাধারণ মুসলিমরা এগুলো ইসলামি
নির্দেশনা বলে বিশ্বাস করে আসছে। যেমন মহর আদায়ে গড়িমসি করা, সম্পদের মিরাস
এবং পারিবারিক অধিকার যথাযথরূপে আদায় না করা। আমরা যখন পশ্চিমা নারীবাদের
বিরুদ্ধে কথা বলব তখন ইসলামপ্রদত্ত নারীর অধিকারসমূহ বাস্তবায়নের প্রতি
গুরুত্ব না দেওয়া একপ্রকার ভণ্ডামি।
বর্তমান মুসলিমসমাজে নারীরা যে
দুটি প্রাপ্য থেকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে, তা হলো মহর এবং উত্তরাধিকার
সম্পত্তি। নারীদের মিরাস চাওয়াকে নির্লজ্জতা এবং ঘৃণার চোখে দেখা হয়।
ভাইয়েরা ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে দায়সারাভাবে কিছু টাকা দিয়ে বোনদের এই
অধিকার কেড়ে নেয়। তাদেরকে বঞ্চিত করে প্রাপ্য অধিকার থেকে।
আর স্বামীরা
মহরকে অঘোষিতভাবে রহিতই করে দিয়েছে সমাজ থেকে। মহর এখন কাগুজে সংখ্যা ছাড়া
কিছুই না। অনেকে তো সারাজীবন স্ত্রীর ভরণ-পোষণকেই মহর হিসেবে গণ্য করে
থাকে। অথচ স্ত্রীর ভরণ-পোষণ ও বাসস্থান স্বামীর উপর আলাদা ওয়াজিব। মহরের
সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
আমাদের সমাজে নারী নির্যাতন ও হেনস্তার
অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলো যৌতুক। পূর্বনির্ধারিত কিংবা কাঙ্ক্ষিত অর্থ বা
বস্তু না পেলে সারাজীবন বউয়ের উপর এর শোধ তোলে স্বামীর পরিবার। যৌতুকের জের
ধরে বহু নারী অকালে ঝরে পড়ে। অসংখ্য নারী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের
শিকার হয়। আবার অনেকে সারাজীবন হজম করে যায় নানারকম খোটা ও কটু কথা।
নারীর
উপর এই যৌতুকের বোঝা ইসলাম চাপিয়ে দেয়নি। দিয়েছে হিন্দুপ্রভাবিত সমাজ।
ইসলামে যৌতুকের অর্থ সম্পূর্ণ হারাম। স্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে
স্বেচ্ছায় কোনো প্রকার উপঢৌকন এসে গেলে ভিন্ন কথা। কিন্তু চুক্তি করে কিংবা
পূর্বাকাঙ্ক্ষা থেকে সম্পদ না পেয়ে স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালানো কিংবা
তাকে কটু কথা শোনানো সম্পূর্ণ জুলুম। ইসলামে এর কোনো বৈধতা নেই।
প্রকাশিতব্য বই "হিউম্যান বিয়িং" থেকে
হিউম্যান বিয়িং: শতাব্দীর বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব
পাশ্চাত্য বা ইউরোপীয়দের চিন্তা চেতনার মূল উৎস হলো গ্রীসের বিশ্বদর্শন আর রোমানদের সমাজ-রাষ্ট্রবোধ। স্বাধীনতা, সমতা, নৈতিকতা, নিরপেক্ষতা এবং উদারতা এসব চিন্তাদর্শন দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে তারা উপনিবেশের মাধ্যমে। ব্রিটিশ প্রণীত শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচয়গতভাবে আমাদের মুসলমান বানালেও মতামত, নীতি-আদর্শ, বিশ্বাস, ভাবধারা আর চিন্তাচেতনায় তৈরি করেছে সেক্যুলার।
শিক্ষাব্যবস্থা কিংবা মিডিয়ার মাধ্যমে অত্যন্ত সুকৌশলে আমাদের চিন্তা-চেতনা এবং মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে পাশ্চাত্যের ভাবধারা। কাজেই পাশ্চাত্যের চশমা পড়ে আমরা যখন ইসলামকে বিশ্লেষণ করতে যায় তখন কুরআন এবং সুন্নাহর অনেক বিধানকেই সেকেলে, বর্বর, হিংস্র কিংবা অমানবিক মনে হয়।
ভালো এবং মন্দের মাপকাঠি হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি পাশ্চাত্যের বুলি আওড়ানো মানবতা এবং বিজ্ঞানকে। অথচ, ভালো এবং মন্দ নির্ধারিত হবে একমাত্র কুরআন এবং সুন্নাহর ভিত্তিতে। আমাদের মনে রাখা উচিত বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল। চিরস্থায়ী কিংবা চিরসত্য নয়। কিন্তু ইসলাম অপরিবর্তনশীল, চিরস্থায়ী এবং চিরসত্য। আর যে পাশ্চাত্য গড়েই উঠেছে সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনের মধ্যদিয়ে তাকে ভালো মন্দের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করার প্রশ্নই উঠে না।
ইসলাম কিছু আনুষ্ঠানিক রীতিনীতি এবং কৃষ্টি-কালচারের নাম নয়। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জিবনব্যবস্থা। পক্ষান্তরে, অন্যান্য ধর্মগুলো শুধুমাত্র কিছু রীতিনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ব্যাপকভাবে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিধানশূন্য। ফলে সেই শূন্যস্থান কোনো প্রকার সংঘর্ষ ছাড়াই পাশ্চাত্য সভ্যতা বা সেক্যুলারিজম পূরণ করে নিয়েছে।
অন্যদিকে জিবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের দিকনির্দেশনা রয়েছে। এখানে শূন্যস্থান বলতে কিছু নেই। ঠিক সেই কারণেই এখানে সেক্যুলারিজমকে প্রবেশ করাতে হলে শূন্যস্থান তৈরি করে নিতে হবে। আর এজন্যই সেক্যুলারিজম বা পাশ্চাত্যের পক্ষথেকে ইসলামের উপর কোপটা বেশি পড়ে।
একটি সভ্যতার পতনের পর আরেক সভ্যতার উত্থান ঘটে। মাঝখানে চলে যায় কয়েক শতাব্দী বা কয়েক সহস্রাব্দ। এর জন্য বিদ্যমান অবস্থার ওপর দিয়ে বয়ে যায় এক ধরণের ট্র্যাজেডি। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিটি সভ্যতার পতনের গল্প ঠিক এমনই।
এতকিছুর পরেও ইসলাম এগিয়ে যাবে। ইসলাম আমাদের মুখাপেক্ষী নয় বরং আমরাই ইসলামের মুখাপেক্ষী।
এজন্য আহমেদ দিদাত বলেন, "ইসলাম জিতবেই তোমাকে নিয়ে অথবা তোমাকে ছাড়াই। কিন্তু ইসলামকে ছাড়া তুমি হেরে যাবে, হারিয়ে যাবে।"
"হিউম্যান বিয়িং" বর্তমান সময়ে মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত একটি বই। শতাব্দীর বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে হলে মুসলিম উম্মাহকে এমন একটি বই অবশ্যই পড়তে হবে। বইটি হালকা-পাতলা গড়নের হলেও এর অন্তর্নিহিত বিষয়গুলো অনেক বিস্তৃত। ইফতেখার সিফাত ভাইকে আল্লাহ উত্তম জাযাহ্ দান করুক মুসলিম সমাজকে সঠিক পথ বাতলে দেয়ার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার জন্য।
লিখেছেন শাকিল আহমাদ ভাই। আল্লাহপাক ভাইকে জাজা দান করুক।
-
নাশাত পাবলিকেশন