চীন ভারত যুদ্ধ | লাদাখে যুদ্ধের প্রস্তুতি চীনও ভারতের
গতকাল নিউজে দেখলাম লাদাখে নতুন করে যুদ্ধ বিমান মোতায়েন করেছে ভারত। তাদের রাশিয়ান জেট সু ৩০ mki দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লাদাখের আকাশে।
নরেন্দ্র মোদি লাদাখ সেনাঘাটিতে গিয়ে মোটিভেশনাল স্পিচ দিয়ে আসছে। এদিকে চীন ও বসে নেই, তারা সব ধরনের প্রিপারেশন নিয়ে বসে আছে। এ
বার শুধু আলোচনা করে কাজ হবেনা সেটা অনেকটাই নিশ্চিত।
এলাকার বড় ভাইয়েরা মারামারি করলে ছোট গুলা দ্বিধায় পড়ে যায়! বড় ভাইয়েরা ট্রাই করে কিভাবে চিপ্স পপকর্ণ কিনে দিয়ে তাদের হাতে রাখা যায়!
বাংলাদেশ কে নিয়ে ভারত চীনের আগ্রহ কই আসলে?
এটা স্পষ্টযে চীন-ভারত দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে বঙ্গোপসাগরে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। বাংলাদেশের কাছে অলরেডি দুইদেশ ই সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়েছে।
ভারত কোন ভাবেই চাইবেনাহ বাংলাদেশ চীনের বলয়ে যাক।
এদিকে চীন দক্ষিন এশিয়ায় প্রভাব বাড়াচ্ছে পুরোদমে।
উদ্দেশ্য অবশ্যই ভারত কে কাউন্টার দেওয়া। অন্যদিকে ভারত হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে অজনপ্রিয় প্রতিবেশী রাষ্ট্র!
এই সুযোগ ভালো ভাবেই লুফে নিয়েছে চীন। আগে শুধু পাকিস্তান ছিলো চীনের বলয়ে। এখন নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা সবাই চীনের বলয়ে। বার্মিজরা তো আগে থেকেই চীনের শিষ্য।
বাকি রইলো বাংলাদেশ!এখন বাংলাদেশের এইসুযোগ কাজে লাগিয়ে উল্টো কতটুক লাভবান হওয়া যায় সেটাই আসল বিষয়।
বলা বাহুল্য বাংলাদেশই ভারতের একমাত্র বন্ধুপ্রতীম দেশ এ অঞ্চলে। আমাদের মন্ত্রীরা তো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের সাথে তুলনা দিয়ে কথাও বলে রীতিমতো।
( https://bit.ly/2Z2Mxxj ) কিন্তু বাস্তবে চিত্র পুরো উল্টো। বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত হত্যার রেকর্ড পৃথিবীর অন্য যেকোন দেশের চেয়ে বেশি।
এখনো একমাত্র বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের সীমান্তে দুই তিনটা করে প্রতিদিন পাখির মত মানুষ মারে ইন্ডিয়ান বি এস এফ। ( https://bit.ly/2VMtyVG ) সে যাই হোক আমাদের লোক বেশি তাই স্বামী হিসেবে তারা মারতেই পারে। অধিকার বলে কথা!!!!
এখন কথা হচ্ছে চীন ভারত ঠুকাঠুকিতে বাংলাদেশের করণীয় কি?
বাস্তবতা হচ্ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের কোন স্থায়ী বন্ধু নাই। অন্তত প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে নাই।
সেই দূর থেকে তুরস্ক এসে পাশে দাড়াইছিলো সাহায্যের জন্য।
কয়েকটা মুসলিম দেশ ভ্রাতৃত্বের জন্য নিন্দা জানিয়েছিল কিন্তু কাজের কাজ আমেরিকার সমর্থনেও হয়নাই! এখনো বারো লাখ রোহিঙ্গাদের বোঝা ঘাড়ে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ।
সুতারং এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ কোনো দাদা ভাইয়ের দলে যোগ দিবেনা সেটাই স্বাভাবিক।
তবে চীন বরাবরই বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট আমদানির ৩৪ ভাগই আসে চীন থেকে।
বাংলাদেশ প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে চীন থেকে। আর রপ্তানি করে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার।
২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং বাংলাদেশে এসে ২৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি করে গেছেন।
এটা বাস্তবায়ন হলে চীনের মোট বিনিয়োগ হবে ৩৮ বিলিয়ন ডলার। এটি বাংলাদেশে একক কোনো দেশের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ।
শুধু তাইনা করোনার এই মহামারির মধ্যে চীনের বাজারে বাংলাদেশি ৯৭% (৮০০০+) পন্যের শুল্ক মওকুফ করে দিয়েছে চীন। নি:সন্দেহে এটা অনেক বড় ধরনের সহযোগিতা।
এবার আসি ইন্ডিয়া বাংলাদেশ সম্পর্কের বেলায়।
খুব সাধারণভাবে যদি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের দিকে কেউ দৃষ্টিপাত করে, তবে দেখা যাবে তাতে ভারতের ব্যাপক একটা প্রভাব বাংলাদেশের ওপর রয়েছে।
এ প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। বলা যায়, ভারতের প্রভাব বাংলাদেশকে গ্রাস করে ফেলছে। অথচ আমাদের কেউ কেউ ভারতের সাথে সম্পর্ককে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ বলে আখ্যায়িত করেন।
ভারতের আচরণে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তো নেই-ই বরং এক ধরনের দাদাগিরি ভাব রয়েছে।
মজার ব্যাপার চীনের দেখাদেখি ইন্ডিয়ানরা ২০১৭ সালে এদেশে প্রায় পাচ বিলিয়ন ডলারের ঋণের ঘোষণা দেয়।
কিন্তু সুদের হার আর এক গাদা শর্তে ভরা সেই ঋণ বাংলাদেশের গলার কাটা হয়ে আছে। সামরিক ঋণের পঞ্চাশ কোটি ডলারের একটা ঋণের চুক্তি ও করে তারা।
নয়াদিল্লি চাইছিলো সেই ঋণের টাকা দিয়ে বাংলাদেশ তাদের থেকেই সামরিক সরঞ্জাম কিনুক! স্বয়ং ইন্ডিয়ান বাহিনী যেগুলো রিজেক্ট করে দেয় সেই টাইপের বস্তাপচা সামরিক সরঞ্জাম কেনার অফার দেয় তারা! সেই ডিল এখনো ঝুলে আছে।
অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশে রফতানি করে বছরে প্রায় আট বিলিয়ন ডলারের পণ্য। কিন্তু আমদানি করে মাত্র ২৬ কোটি ডলারের।
কিন্তু দুদেশের মধ্যে অনেক 'ইনফরমাল ট্রেড' বা অবৈধ বাণিজ্য হয়, যা মূলত ভারতের অনুকুলে। এর পরিমাণ কমপক্ষে দুই হতে তিন বিলিয়ন ডলারের সমান হবে বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশে যে ভারতীয়রা কাজ করেন তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও হবে দুই হতে চার বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশকে ভারত যে বৈদেশিক সহায়তা দেয় বছরে তার পরিমাণ পনের কোটি ডলারের মতো।
সব মিলিয়ে ভারতের স্বার্থান্বেষী মনোভাবের প্রতিফলন ই বেশি।
আর আরেকটা বিষয় হলো এইসব বিনিয়োগের প্রধান উদ্দেশ্যেই থাকে ভারতের দুই অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করা!
তবে ইতিবাচক দিকের চেয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বেশ কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে
যেমন
১.রোহিংগা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে না থাকা।
২.অভিন্ন নদীর ন্যায়সঙ্গত পানি বন্টনে অনিয়ম।
৩.ক্রমাগত সীমান্ত হত্যা।
৪.NRC ইস্যু
৫.অবৈধ অভিবাসীদের বাংলাদেশি বলে চালিয়ে দেওয়ার মনোভাব ইত্যাদি।
এতকিছুর পর বাংলাদেশের উচিৎ কোনো নিদিষ্ট বলয়ের প্রতি অতিমাত্রায় আনুগত্য প্রকাশ না করা।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে চীনের ভেটোর কারনেই বার্মিজরা আরো বেশি সাহসী হয়ে গণহত্যা চালায় আর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পুশ করে।
সুতারং এই দুইদেশের কেউই বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু নয়।
বাংলাদেশ যদি তার নিজের জাতীয় স্বার্থ খেয়াল রেখে কাজ করে, যার কাছ থেকে যে জিনিসটা ভালো পাওয়া যাবে - এগুলো করলে আমাদের যারা বন্ধু তারা কেউই বাঁধ সাধবে না।
আমার ধারণা যে মোটামুটি সে জিনিসটাই সরকার করার চেষ্টা করছে।
লাদাখ ইস্যুতে যতই মারামারি করে আমাদের প্রণোদনা দিয়ে কাছে নেওয়ার চেষ্টা করা হোক কোনো লাভ নাই! আমরা বড়জোর পপকর্ণ হাতে নিয়া বসবো আর মাঝেমাঝে চিল্লানি দিয়া বলবো চিয়ার্স!!!!!
(কষ্ট করে পুরাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ)