সহজ ৬ টি সহিহ দরুদ | ও দরুদ পাঠের বিশেষ পরিস্থিতি ও সময়গুলো ভালোবাসি প্রিয় নবীজি (আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ~লি মুহাম্মাদ)
সহজ ৬ টি সহিহ দরুদ | ভালোবাসি প্রিয় নবীজি
সহজ ৬ টি সহিহ দরুদ উপস্থাপন করছি। সবগুলোই ছোট, সহজ ও সহিহ হাদিসে বর্ণিত
❑ দরুদ: [০১]
.
কা’ব বিন উজরাহ (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, ‘কীভাবে আমরা (আপনার উপর) দরুদ পাঠ করব, তা বলুন।’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরুদে ইবরাহিম পাঠ করতে বলেন, যা আমরা প্রত্যেক নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু...)-এর পর পড়ি। সেটি হলো: আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা.....হামীদুম মাজীদ। সবারই মুখস্থ আছে, তাই এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। এই দরুদটিই সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ। [সহিহ বুখারি: ৩৩৭০, মুসনাদ আহমাদ: ৪/২৪৪]
.
❑ দরুদ: [০২]
.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ
.
[আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ~লি মুহাম্মাদ]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদের পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করুন।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা আমার প্রতি দরুদ পড়ো এবং সাধ্যানুযায়ী দু‘আ করো ও বলো (উপরের দরুদটি)।’’ [নাসাঈ: ১২৯১; শায়খ আলবানি (রাহ.) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
.
❑ দরুদ: [০৩]
.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَأَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقَرَّبَ عِنْدَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
.
[আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আনযিলহুল মাক্ব‘আদাল মুক্বাররবা ‘ইনদাকা ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ্]
.
(হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং কিয়ামতের দিন আপনার নিকটেই তাঁকে স্থান দিন)
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে এটি বলবে, তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে।’’ [মুসনাদ আহমাদ: ২/৩৫২, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১৭৩০৪; ইমাম হাইসামি ও মুনযিরি (রাহিমাহুমাল্লাহ্) হাদিসটির সনদ হাসান (গ্রহণযোগ্য) বলেছেন]
.
❑ দরুদ: [০৪]
.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ، وَصَلِّ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ، وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ
.
[আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ‘আবদিকা ওয়া রাসূলিক, ওয়া সল্লি ‘আলাল মুঅ্মিনী-না ওয়াল মুঅ্মিনা-ত, ওয়াল মুসলিমী-না ওয়াল মুসলিমা-ত]
.
(হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদের উপর রহমত প্রেরণ করুন এবং সকল মুমিন-মুমিনা ও মুসলিম-মুসলিমার উপরও রহমত প্রেরণ করুন)
.
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে-মুসলমানের দান-সাদাকাহ করার মতো কিছু নেই, সে যেন দু'আ করার সময় এটি বলে। এটি তার জন্য যাকাতস্বরূপ।’’ [সহিহ ইবনে হিব্বান: ৯০৩, হাকিম: ৪/১৩০, মুসনাদে আবু ইয়ালা: ১৩৯৭; হাকিম ও যাহাবি (রাহিমাহুমাল্লাহ) হাদিসটির সনদ সহিহ বলেছেন, হাইসামি (রাহ.) হাসান বলেছেন]
.
❑ দরুদ: [০৫]
.
صَلَّى اللّٰهُ عَلَى النَّبِيِّ مُحَمَّدٍ
.
[সল্লাল্লাহু 'আলান্নাবিয়্যি মুহাম্মাদ]
.
অর্থ: নবী মুহাম্মাদের উপর আল্লাহ্ রহমত বর্ষণ করুন। (নবীজির নাতি হাসান (রা.) হতে বর্ণিত কুনুতের শেষ অংশ এটি) [নাসাঈ: ১৭৪৫, ইমাম নববি (রাহ.) হাদিসটির সনদ সহিহ বলেছেন (মাজমু‘উ: ৩/৪৯৯), অবশ্য অনেকেই দুর্বল বলেছেন। তবে, নিঃসন্দেহে এটি আমলযোগ্য।]
.
❑ দরুদ: [০৬]
.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ
.
[আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি, ওয়া ‘আলা আ~লি মুহাম্মাদ]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি উম্মি নবী মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করুন। [আবু দাউদ: ৯৮১, শায়খ আলবানি (রাহ.) ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ হাদিসটিকে হাসান (ও সহিহ) বলেছেন]
.
দরুদের বাক্য নিয়ে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বিশেষত দরুদে ইবরাহিম শাব্দিক পরিবর্তনে অসংখ্য রেওয়ায়াতে সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। আমরা সেগুলো উল্লেখ করিনি। কারণ এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ সেটিই, যেটি আমরা নামাজে পড়ি।
.
#ভালোবাসি_প্রিয়_নবীজি (চতুর্থ পর্ব)
পূর্বের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পর্ব কমেন্টে দেওয়া লিংক থেকে পড়ে নিতে পারেন।
.
#Tasbeeh
নবীজির উপর দরুদ পড়ার অপরিসীম লাভের কথা আমরা জেনেছি।
এবার দরুদ পাঠের বিশেষ পরিস্থিতি ও সময়গুলো জানবো।
মূলত, দিনে-রাতে সবসময়, সব অবস্থায় দরুদ পাঠ করা জায়েয। তবে, বিশেষ কিছু সময়ে এর গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশি।
.
❑ কোনো মজলিসে বসলে:
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোন সম্প্রদায় যখন কোন মজলিসে (বৈঠকে) বসে, সেখানে যদি তারা আল্লাহর যিকর না করে এবং তাদের নবীর উপর দরুদ পাঠ না করে, তবে তা তাদের জন্য আফসোস ও ক্ষতির কারণ হবে। ইচ্ছা করলে আল্লাহ্ তাদের শাস্তি দিবেন আর ইচ্ছা করলে তাদের তিনি মাফ করে দিবেন।’’ [তিরমিযি: ৩৩৮০, সহিহাহ: ৭৪, (সহিহ)]
.
❑ দু‘আ শুরু করার পূর্বে:
.
উমার (রা.) ও আলী (রা.)— তাঁরা দুজনই বলেছেন, ‘সকল দু‘আ পর্দার আড়ালে থাকবে, যতক্ষণ না নবীর উপর দরুদ পাঠ করা হবে।’ [তিরমিযি: ৪৮৬, সহিহাহ: ২০৩৫, (হাসান)]
.
❑ রাসূলের আলোচনা বা নাম উচ্চারিত হলে:
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কৃপণ ঐ ব্যক্তি, যার সামনে আমার আলোচনা করা হলো, অথচ সে আমার জন্য দরুদ পাঠ করলো না।’’ [বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৫/১৪৮, তিরমিযি: ৩৫৪৬, (হাসান)]
.
❑ দুশ্চিন্তা ও বিপদ-মুসিবতে:
.
একজন সাহাবি রাসূলকে বলেছিলেন, তিনি তাঁর উপর সর্বদা দরুদ পাঠ করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘যদি তুমি তাই করো, তবে তোমার সকল চিন্তা ও উৎকণ্ঠা দূর করা হবে (প্রয়োজন পূরণ হবে) এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে।’’ [তিরমিযি: ২৪৫৭, হাকিম: ২/৪৫৭, হাদিসটি সহিহ]
.
❑ জুমু‘আর দিনে ও রাতে:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। সুতরাং এই দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে দরুদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরুদ আমার কাছে উপস্থাপন করা হয়।” [আবু দাউদ: ১০৪৭, নাসায়ি: ১৩৭৪, হাদিসটির সনদ সহিহ]
.
❑ মসজিদে প্রবেশ ও বের হতে:
.
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার সময় বলতেন, তখন বলতেন, ‘বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ’ এবং বের হওয়ার সময়ও বলতেন, ‘বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ’। [ইবনুস সুন্নি: ৮৮, (হাসান)]
.
ইবনু মাজাহর হাদিসেও দরুদ পড়ে মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
.
❑ আজানের পর:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন তোমরা মুআযযিনকে আজান দিতে শুনবে তখন সে যেরূপ বলে, তোমরাও তদ্রুপ বলবে। অতঃপর তোমরা (আজান শেষে) আমার প্রতি দরুদ পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওসিলা প্রার্থনা কর...।’’ [সহিহ মুসলিম: ৩৮৪]
.
❑ সকাল-সন্ধ্যায় ১০ বার করে:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার আমার জন্য দরুদ পড়বে, কিয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশের নাগাল পাবে।’’ [হাইসামি, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১২০, সহিহ আত তারগিব: ১/৩৪৫, (হাসান)]
.
এছাড়াও—
◗প্রত্যেক নামাজের শেষ বৈঠকে দরুদ পড়তে হয়।
◗জানাযার নামাজের দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ পড়তে হয়।
◗নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারতে দরুদ পড়তে হয়।
◗দু‘আ কুনুতেও দু‘আ করা যায়।
◗এছাড়াও যেকোনো সময়ে, যেকোনো অবস্থায় দরুদ পাঠ করা যায়। অজু ছাড়াও পড়া যায়।
.
#ভালোবাসি_প্রিয়_নবীজি (পঞ্চম পর্ব)
পূর্বের সকল পর্বের লিংক কমেন্টে।
.
#Tasbeeh