কোরবানির ঈদ ও সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ঐক্যের বন্ধন এবং জালেমদের বিদ্বেষ
কোরবানির ঈদ ও সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ঐক্যের বন্ধন এবং জালেমদের বিদ্বেষ । কোরবানি নিয়ে চক্রান্ত
যেমন- সবাই মিলে এক সাথে ঈদের নামাজ পড়লেন, কোলাকুলি করলেন, সবাই সবার বাসায় বেড়াতে গেলেন, সেমাই খেলেন, কোরবানী ঈদের সময় গরু কিনলেন, দাম জিজ্ঞেস করলেন, সবাই একসাথে রাতে গরু পাহারা দিলেন, একজনের গরু অন্যজন জবাইয়ের সময় ধরলেন, সবাই একসাথে গরু কাটাকুটি করলেন, একজন অন্যজনের বাসায় মাংশ দিলেন আর কতকিছু।
ভেবেছি, এগুলো কিছু ধর্মীয় বিষয় ছাড়া আর কি ?
কিন্তু এগুলো মাধ্যমেই যে মানুষ সমাজবদ্ধ হচ্ছে এবং সামাজিক জীব হিসেবে বেচে থাকছে তা আমাদের বোঝা হয়নি।
এমনকি ফ্ল্যাটের সামানের রাস্তায় কেউ যেন কোরবানী করতে না পারে, সেই নোটিশও দিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তগুলো কি তাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে ??
কারণ ফ্ল্যাটগুলোতে কোরবানী নিষিদ্ধ করে আসলে- তারা সামজিক বন্ধনের মধ্যে আঘাত করেছেন,
তাদের এই কর্মের ফলে অনেকে হয়ত ইচ্ছা থাকলেও কোরবানী করতে পারবে না,
কোন কোন ধর্মপ্রমাণ মুসলমান হয়ত কষ্ট করে অন্যত্রও কোরবানী দিতে গিয়ে দুর্ভোগ ও হেনস্তার শিকার হবেন।
একই সমাজে বসবাস করে একজন অন্যজনকে কষ্ট দেয়া হবে।
মানে এর মাধ্যেম সামাজিক অসহযোগীতা বা কষ্ট দেয়ার ট্রেন্ড চালু করা হচ্ছে,
যার আলটিমেট ফলাফল কিন্তু কখনই সামজিক বন্ধনের জন্য সুখকর নয়, বরং ক্ষেত্রে বিশেষে সমাজে বসবাস করা মানুষগুলোর জন্য মারাত্মক ভয়ের কারণও বটে।
কিন্তু তিনি নিজেই হয়ত বুঝতেছেন না, সামাজিক বন্ধনের বিরুদ্ধে কাজ করে হয়ত তিনি নিজের পায়েই কুড়াল মারছেন।
এমনও হতে পারে,
--তিনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেলেন, প্রতিবেশীরা সামান্য সাহায্য করলে হয়ত তিনি প্রাণে বাঁচতেন, কিন্তু কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসলো না। ফলশ্রুতিতে তিনি মারা গেলেন।
--তার লাশ ঘরে পড়ে রয়েছে, প্রতিবেশীরা কেউ তার দাফন-কাফনে এগিয়ে আসেনি। সিটি কর্পোরেশনের লোকরা ২৪ ঘণ্টা পর তার লাশ পঁচিয়ে গর্তে ঢুকিয়েছে।
--তার বাসায় হঠাৎ বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটলো, প্রতিবেশীরা একটু এগিয়ে আসলেই হয়ত পুরো পরিবার রক্ষা পেতো। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসলো না।
--তার বাসায় হঠাৎ ডাকাত পড়লো, অনেক ডাকাডাকি করলেন কিন্তু কেউ এগিয়ে আসলো না।
--তিনি কোন আর্থিক সমস্যায় পড়লে প্রতিবেশীরা অনেক সময় এগিয়ে আসেন। কিন্তু প্রতিবেশীদের সাথে খারাপ সম্পর্কের কারণে কেউ এগিয়ে আসলো না। তিনি এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলেন।
সেই সব লোকগুলো বিজনেস হলো ভ্যাকসিন, মেডিকেল ইক্যুপমেন্ট ও অনলাইন শপ নিয়ে।
সুতরাং তারা এত সহজে আপনাকে ছেড়ে দিবে না। কারণ আপনি যত ভয় পাবেন, তাদের ব্যবসা তত বাড়বে।
এজন্য করোনা শেষ হলেও দেখবেন তারা নিত্য নতুন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আপনাকে ভয় দেখাতেই থাকবে।
তাদের নিজস্ব মিডিয়া ব্যবহার করে এমন ভীতি ছড়াবে যে, আপনি সেই ভয়ের বলয় থেকে বের হতে পারবেন না।
আরেকজন আপনার কাছে আসলেই আপনি মরে যাবেন, মানে ‘ছোয়াচে বিশ্বাস’ আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াতে থাকবেই।
আর তাদের কথা অনুসারে চললে আপনাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
যারা করোবানীর মধ্যে করোনার ভীতি খুজে পাচ্ছেন, তাদের দাবী হলো-
“কোরবানীর হলে অনেক কসাই আসবে, মাদ্রাসা ছাত্র আসবে, মাংশ নিতে গরীব মানুষ আসবে।
কথা হচ্ছে- আপনি সমাজের যে শ্রেনীগুলোকে করোনার বাহক হিসেবে ভয় পাচ্ছেন,
তারা কি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ?
কতজন মাদ্রাসা ছাত্র করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ?
কিংবা যে দরিদ্র শ্রেনীকে ভয় করছেন, সেই দরিদ্র শ্রেনীর বাস্তিঘরে কয়জন করোনায় আক্রান্ত ?
সব তো দেখা যাচ্ছে, ধনী শ্রেনী আর ফ্ল্যাট বাড়ির বাসিন্দারা।
তারাই তো বেশি করোনায় আক্রান্ত।
তাই ভয় যদি পেতে হয়, তবে দরিদ্ররাই তো ধনী শ্রেনীকে ভয় পাবে, ধনীরা কেন দরিদ্রদের করোনার জন্য ভয় পাচ্ছে ?
এতে একদিকে যেমন সামাজিক বন্ধন নষ্ট হয়ে মানুষগুলো বিছিন্ন হয়ে হুমকির মুখে পড়ছে,
অন্যদিকে, ঘরে বন্দি থেকে নিজেদের ইম্যুউনিটি হ্রাস করে করোনায় আরো বেশি কুপোকাত হচ্ছে।
“অতি চালাকের গলায় দড়ি”- প্রবাদটা সবার মনে রাখা উচিত।