মুসলিমদের বিজ্ঞানি নাই কেনো? বিজ্ঞানে মুসলিমরা পিছিয়ে থাকার কারন ? - শামছুল আরেফিন শক্তি
মুসলিমদের বিজ্ঞানি নাই কেনো? বিজ্ঞানে মুসলিমরা পিছিয়ে থাকার কারন ?
ঠিক এই মনোভাবকেই ‘ওরিয়েন্টালিজম’ তৈরি করতে চেয়েছে। ইউরোপকে শ্রেষ্ঠ আর প্রাচ্যকে পশ্চাদপদ দেখানোর জন্য সব রকমের চেষ্টা তারা করেছে।
এবং আমরা মেনেও নিয়েছি তাদের শ্রেষ্ঠত্ব। একে মানসিক দাসত্ব বলে। আরে ভাই কী বলেন? চোখ নাই নাকি? দেখতেই তো পাচ্ছেন ওরা কীভাবে সবকিছুতে এগিয়ে গেছে, আর আমরা পিছিয়ে আছি।
আমরা আমাদের স্বর্ণযুগে ধুমসে বিজ্ঞান করেছি, এটা সবাই জানি কমবেশি। আন্দালুস-মিশর-বাগদাদে আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত-ই মুসলিমদের হাতে গড়া, এটা পুরো দুনিয়া স্বীকার করে। তাহলে এই বিজ্ঞান আমাদের হাত থেকে ছুটলো কীভাবে?
৩য় পর্যায়ের অংশ হিসেবে এই পোস্ট: আমরা এখন কেন বিজ্ঞানে এগোতে পারছি না।
এতোদিন হয়নাই বুঝলাম, এখন কেন হচ্ছে না। এখন হচ্ছে না তার কারণ এই না যে, আমাদের মেধা নেই। বা আমাদের ভেতর থেকে বিজ্ঞানী তৈরি হচ্ছে না, এমনও না । প্রতি বছর মুসলিম দেশগুলো থেকে বহু শিক্ষিত মেধাবী সন্তান ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি দিচ্ছে। বা বিজ্ঞান চর্চা মুসলিম দেশে হচ্ছে না, এমনও না। তাহলে ঘটনা কী? এগোতে কেন পারছি না।ঘটনা হল—
- এই বিজ্ঞানীদের দেশে রাখতে হয়, পুষতে হয়
- দেশবিদেশ থেকে পড়িয়ে পোক্ত করে আনতে হয়
- ফান্ডিং প্রয়োজন হয়। স্রোতের মত টাকা ঢালতে হয় এক্সপেরিমেন্টে।
- অধিকাংশ গবেষণা হবে ব্যর্থ। মানে পুরো ফান্ডিং-টাই জলে গেল। এরকম বহু পয়সা জলে দেবার মত আর্থিক সঙ্গতিও থাকতে হয়।
বিজ্ঞানের এই মহাযাত্রা ইউরোপে শুরু হয়েছে ইংল্যান্ড থেকে আপনারা জানেন। ভারতে আসার আগে ইংল্যান্ডের কি বিজ্ঞান পালার সামর্থ্য ছিল কি না, একটু দেখি।
‘ইংরেজদের দেশ সরকারের ব্যর্থতা আর গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিল। এতটাই যে, বাণিজ্য প্রসার ও সুরক্ষা জন্য পুঁজিই ছিল না তাদের। ওলন্দাজদের সাথে চলতো এক অসম প্রতিযোগিতা’।
'পলাশির যুদ্ধের পর (১৭৫৭) বাঙলার সম্পদ স্রোতের মত এসে জমা হতে থাকে লন্ডনে। ১৭৬০ সালের আগে যেখানে শিল্পকারখানার নাম-গন্ধও ছিল না, সেখানে হাজার হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।’
‘ইংল্যান্ডে সম্পদ আসত সমুদ্রপথে। ওয়াট ও অন্যান্যদের আবিষ্কৃত যন্ত্রগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ইংল্যান্ডের যেটুকু কমতি ছিল, ইন্ডিয়া সেটুকু সরবরাহ করেছে। ইংল্যান্ডের পুঁজি বহুগুণে বাড়িয়েছে ভারতীয় সম্পদের প্রবেশ।...শিল্পবিপ্লব, যার উপর ভিত্তি করে ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সম্ভব হয়েছিল কেবলমাত্র ইন্ডিয়ার সম্পদের কারণে। যা কোনো লোন ছিল না, এমনিতেই নিয়ে নেয়া হয়েছিল। তা নাহলে স্টীম ইনজিন ও যন্ত্রশিল্প পড়েই থাকত ইংল্যান্ডের।
একই ইতিহাস সবগুলো ইউরোপীয় শক্তির ক্ষেত্রেই খাটে। পর্তুগাল ব্রাজিলে, স্পেন বাকি ল্যাটিন আমেরিকায়, ফ্রান্স পূর্ব-উত্তর আফ্রিকায়, ডাচরা ইন্দোনেশিয়ায়, ইটালি লিবিয়াতে একই কাজ করেছে।
বিজ্ঞন গবেষণার পিছনে বিপুল অর্থ তারা ঢালতে পেরেছে উপনিবেশিক আমলে লুটপাট থেকে। সামরিক আগ্রাসনের বদৌলতে। কোথায় অপমানে ক্ষোভে রাগ আসার কথা, সেখানে আজ মুগ্ধতায় চোখের পলকই পড়ে না গোলামের জাতের।
- সিরিয়ার বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র (Scientific Studies and Research Center) এর ফান্ডিং দেয় আমেরিকা আর ফ্রান্স। সেই সুবাদে শুরু থেকেই পশ্চিমা গোয়েন্দাদের নখদর্পণে।
- ১৯৮১ সালে বাগদাদে গিয়ে ধ্বংস করে দিয়ে এসেছে ইরাকের নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট।
কিংবা সুস্থ মানুষ নিজ ফ্ল্যাটে মরে পড়ে থাকবে। কিংবা গুম হয়ে যাবে চিরকালের মত। মোটকথা স্বাভাবিক কোনো মৃত্যু এদের কপালে নেই, রহস্যজনক মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে বিজ্ঞান করবে আমাদের বিজ্ঞানীরা।
মুসলিম বিজ্ঞানীদের গুপ্তহত্যার সামান্য তালিকা
- তিউনিসিয়ার aviation engineer মোহাম্মদ আল-জাওয়ারি (২০১৭)
- মিশরের nuclear scientist সামির নাজিব (1967)
- মিশরের nuclear scientist, ইয়াহিয়া আল-মাশাদ (১৯৮০)
- লেবাননের condensed matter physicist রাম্মাল হাসান রাম্মাল (১৯৯১)
- ইরাকের nuclear scientist ইব্রাহীম আল-যাহেরী (2004)
- ইরানী quantum field theorist and elementary-particle physicist মাসুদ আলী মোহাম্মদী (2010)
- ইরানী nuclear engineer মাজিদ শাহরিয়ারি (২০১০)
- ফিলিস্তিনী rocket scientist ফাদি মোহাম্মদ আল-বাতশ (April 21, 2018)
- লেবাননের PhD student হাসান আলী খাইরুদ্দিন (কানাডায়)
- লেবাননের nuclear Physics স্টুডেন্ট হিশাম সালিম মুরাদ (February 28, 2018)
- ফিলিস্তিনী Chemist হোসাম আল-রোজা
- মিশরের nuclear scientist ড. সামিরাহ মূসা (১৯৫২)
- মিশরীয় scientist সাঈদ আল-বুদাইর (১৯৮৯)
- মিশরী পদার্থবিদ নাবিল আল-কালিনী (1975)
- লেবাননের ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার হাসান কামেল আল-সাব্বাহ (১৯৩৫) এমআইটি ফারেগ, ৫০টা পেটেন্ট।
- মিশরের আলী মুস্তফা মোশরেফা (১৯৫০)। তাকে বলা হত ‘আরবদের আইনস্টাইন’।
- সৌদি আরবের প্রথম মহিলা নিউরোসার্জন সামিয়া আবদুর রহীম মাইমানি
- সিরিয়ান rocket scientist আযিয আসবার (2018)
- ইরানী nuclear scientist মোস্তফা আহমাদী রোশান
শুধুমাত্র ইরাকে US occupation এর পর থেকে ২০১৩ সাল অব্দি ৩২৪ জন বিজ্ঞানী, গবেষক, একাডেমিককে গুপ্তহত্যা করা হয়েছে। আর থাকে কী?
[http://www.iraqsolidaridad.org/wordpress/wp-content/uploads/2013/11/List-of-Iraqi-academics-assassinated-November-2013.pdf]
আসল অসুখ কী সেটা সবাই জানেনও। কিন্তু স্বীকার করবেন না, ‘আমেরিকা দ্যাখতেয়াসে’ বলে। যতদিন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পশ্চিমা নব্য-উপনিবেশী শক্তি থেকে বেরোতে না পারছেন, ততদিন বিজ্ঞানের কুতকুত খেলে কোনো লাভ নেই।
প্রকৃত স্বাধীনতা পেতে হলে হকি খেলতে হয়, কুতকুত-বৌছি এগুলো খেলে হয় না।
- - শামছুল আরেফিন শক্তি