চীন - ভারত যুদ্ধ | মার খেয়ে তাল হারানো ভারতকে নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী কমেডিক লেখা | Kaisar Ahmed |
মার খেয়ে তাল হারানো ভারতকে নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী কমেডিক লেখা | লাদাখের সেই ভয়াল কালো রাত | India China War
এরিয়া কমান্ডার, মেজর সহ কয়েকটি মিটিং হল, কিন্তু চীন নিজ অবস্থানে অনড় থাকে। কনফ্লিক্ট বেড়ে চলল। ভারত সরকার এবং আর্মি পুরো বিষয়টি জনগণের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখল।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় সকল খবর হাইড করা পসিবল ছিল না। টুকরো টুকরো সত্য বের হতে লাগল। কিন্তু মোদি সরকারের প্রতি ভাক্ত দের অত্যাধিক বিশ্বাস থাকার কারনে সত্যকে মানতে চাইলো না তারা।
৬ জুন ভারতের অনুরোধে ল্যাফটেন্যান্ট জেনারেল লেভেলের মিটিং ডাকা হয়। চীন ল্যাফটেন্যান্ট জেনারেল এর পরিবর্তে মেজর জেনারেলকে পাঠায়। তাও সে আসে অতি বিলম্ব করে।
মিটিং এ তার এটিটিউড দেখে ভারত চীনের উদ্দেশ্যকে ভালো ভাবেই বুঝতে পারে। মিটিং শেষে স্বাভাবিক ভাবে ভারতের গোয়েবলস মিডিয়া তাদের বিজয়ের কথা প্রকাশ করে।
উভয় পক্ষ ব্যাপক মাত্রায় আর্মি মোতায়েন করতে থাকে।
এর মাঝে চীন পাহাড়ি ঝরনা ধারা আটকে রাখে। এতে দুই সেনা শিবিরের মাঝে যে গালওয়ান নদী ছিল তার ফ্লো থেমে যায়। মিটিং ব্যর্থ হবার পর ভারত চীনকে হটাতে প্লান তৈরি করে।
লাদাখের সেই ভয়াল কালো রাত: Kaisar Ahmed |
লম্বা রডে কয়েকটি সরু ছোট ছোট রড ওয়েল্ডিং করে, এবং মোটা বাঁশে তারকাটা পেচিয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র তৈরি করে রাখে তারা। আকাশে চাইনিজ হেলিকপ্টার থেকে সারাক্ষণ নজরদারি চলছিল।
এমন সময় রাতে চাইনিজরা ভারতীয় সেনাদের দেখতে পায়। নদীর ফ্লো না থাকায় ভারতীয়রা সহজে চীনা ক্যাম্পের দিকে এগোতে থাকে। চায়নিজরা প্রথমে পানির ফ্লো খুলে দেয়।
ভারতীয় সেনারা আকস্মিক পানির চাপ দেখে কিছু বুঝে উঠতে পারে না।
এরই মধ্যে চাইনিজরা ভারতীয় সেনাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভয়ঙ্কর অস্ত্র দিয়ে বেচারা! হিন্দুস্তানি সেনাদের উপর নির্মমভাবে আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে।
কে কর্নেল, কে অফিসার কে সিপাহী, কারোর দেখার সময় নেই। ভারতীয়রা পালাতে শুরু করে, জীবন বাঁচাতে কেউ পাহাড় থেকে পানিতে লাফ দেয়।
শতাব্দীর সকল বর্বরতাকে হার মানিয়ে চীনারা নতুন ইতিহাস তৈরি করে। এই বর্বরতা ভাইকিংস, তাতারিদের বর্বতার কথা মনে করিয়ে দিল বিশ্ববাসীকে।
প্রায় ৪০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। কারো কারো মুখ পুরো থেঁতলে যায়, কাপড়ে থাকা ন্যামপ্লেট দেখে তাদের সনাক্ত করা হয়।
শতাধিক সেনা আহত হয়। ১০ জনকে চীন আটক করে। চীনারা তেমন হতাহত হয়নি, ৫-১০ জন আহত হয়েছিল কেবল।
চারদিকে এক আতংক ও বিভীষিকাময় পরিবেশ তৈরি হয়। আহতদের চিকিৎসা করার জন্য ছিল না তেমন ব্যবস্থা। যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল ভঙ্গুর।
নিরস্ত্র সেনাদের শীত নিবারণের জন্য পর্যাপ্ত কাপড়ের ব্যবস্থাও ছিল না। ভোর থেকে সকাল, সকাল থেকে বেলা গড়িয়ে চলে।
ভারতীয় প্রশাসন ও আর্মি ঘটনা জেনে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। সরকার ব্যস্ত হয়ে পড়ে সব লুকাতে। কিন্তু চীনারা আবার এক আঘাত করল, তারা সরাসরি রাতের ঘটনা বিশ্বকে জানিয় দিল।
মোদির ব্লাড প্রেসার বেড়েই চলল। কী করবে কী বলবে, কিছু বুঝে উঠতে পারল না। ডিফেন্স চীফ বিপিন রাওয়াত ঘরে লুকিয়ে থাকল। বেচারা! নিহতদের পরিবারও কিছু জানল না। হাইড এন্ড সিক খেলা চলল দিনভর।
চীনের নাম নিয়ে টুইট করার সাহসও হচ্ছিল না প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর। কেউ সারজিকাল স্ট্রাইকের কথা বলল না, এগিয়ে এল না বলিউড রেজিমেন্টের সেনারা।
হতাহতের নসিব ভালো ছিল না। দেশবাসী তাদের খবর রাখল না। মোদী তাদেরকে চিনল না। নিহত কর্নেল, বা আটক কর্নেল কে তাও কেউ জানল না, সে তো আভিনন্দন ছিল না।
বন্দিদের নসিবে এক কাপ চাও জুটল না। নেই নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা, দিল না কেও ফুল। হল না পুলওয়ামার মত লাইভ টেলিকাস্ট।
মান বাঁচাতে ভারত প্রথমে ৪৩ জন চীনা মারার কথা জানালো, কিন্তু তার পশ্চিমা মিত্র মিডিয়াগুলো তাতে কোন পাত্তা দেয়নি।
দশ কয়েদীকে ছাড়ানো মোদীর জন্য সহজ ছিল না, চীনের মিত্র রাশিয়ার কাছে ৩৩ টি বিমানের মুক্তিপণ দিয়ে পরিশেষে ছাড়ানো হল।
লিমিটেড যুদ্ধের কথাও ভাবলেন তিনি, সেনারা চেঁচিয়ে বলল ১০ দিন যুদ্ধ করার মত গোলাবারুদও নেই তাদের কাছে।
যাইহোক, মিলিটারিলি কিছু করতে না পারি অর্থনৈতিক ভাবে চীনকে শিক্ষা দেবার আহ্বান জানালো অর্থনীতি সম্পর্কে অজ্ঞ সাংবাদিকরা।
আবেগের বশবর্তী হয়ে নিজের কষ্টের কামায়ের কেনা টিভি ফ্রিজ ভাঙ্গা শুরু করল জনগণ। বেচারারা ভাবল না, যে এক মাস পর আবার নিজের টাকা দিয়ে চীনা টিভি কিনতে হবে তাদের।
চাইনিজ ফোন দিয়ে, চাইনিজ টিকটক ব্যবহার করে বয়কট চায়নার শ্লোগান উঠল। চাইনিজ প্রিন্টারে, চাইনিজ পেপারে, চাইনিজ কালারে প্রিন্ট করা হল বয়কট চায়নার প্ল্যাকার্ড। ক্ষোভে, আতঙ্কে ভক্তগন সি জিং পিং ও কিম জন উনের পার্থক্য ভুলে গেল।
ইজ্জত, সম্মান, সুপার পাওয়ার হওয়ার স্বপ্ন সবই ভেঙে চুরে ছারখার হয়ে গেল নিমিষে। কাশ্মীরে যুলমের সময় যেভাবে পুরো বিশ্ব চুপ হয়ে থাকে, অন্ধ হয়ে যায়, একই ঘটনা ঘটল ভারতের সাথে। সবাই চুপ। যেন কিছুই হয় নি। কেউ জানালো না শোক।
কেউ চীনকে দিল না থ্রেট। সকলকে আইসোলেট করে দেবার হুমকি দিত যারা তারাই আজ আইসোলেটেড। জাপান, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা, ন্যাটো, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি বা রাশিয়া কেউ কিছু বলল না।
ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির দেশ গুলো গুম হয়ে গেল। শোক জানালো না বাংলাদেশও। শোক তো দূরের কথা উল্টা থ্রেট দিল নেপাল। এত দুঃখ বয়ে বেরানো সহজ নয়। মানসিক ভারসাম্য ঠিক রাখা যায় না। এই সময় মানুষ আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
আবোল তাবোল বলে, ঠিক একই ভাবে কাল সারান্ডার মোদি ভক্তদের বললেন, ''কিছুই হয়নি। সব কন্ট্রোলে আছে। যে যেখানে আছে সেটা তার ভূমি। দুর্বলকে মেরে ফেলা, সবলের পা ধরা হল আমাদের নীতি।"
চীন আমেরিকা ভারত ও পাকিস্তান। দক্ষিন এশিয়ার ভু রাজনীতি
সম্প্রতি আমেরিকা কথিত সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে আবশ্যিকভাবে পাকিস্তানের আলোচনা চলে আসে। পাকিস্তান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তারা বলে, "আঞ্চলিকভাবে সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্য পাকিস্তান নিরাপদ আশ্রয়স্থল।"
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ইমরান খান ভাষণ দেন। বক্তৃতায় প্রসঙ্গক্রমে চলে আসে আমেরিকান প্রতিবেদন কেন্দ্রিক আলোচনা-সমালোচনা
আর তাতেই খেপে যায় সংসদের বিরোধী শক্তি। ক্ষণিকের মধ্যে বিশ্ব মিডিয়ার অনলাইন ভার্সনে চলে যায় ইমরান খানের 'শহীদ' সম্বলিত ভাষণের খণ্ডিত অংশ। 'জাত গেল' বলে রব ওঠে জালিম পাড়ায়। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, ইমরান খানের কঠোর সমালোচনা হয় ভারতে। পাকিস্তান বা পশ্চিমা দেশ থেকে প্রায় তিনগুণ বেশি। ভারতের এমন কোনো নিউজ পোর্টাল নেই যাতে ইমরান খানকে সন্ত্রাসীর প্রশ্রয়দাতা বলা হয় নি।
চীন সরকার সম্প্রতি হংকং-এ প্রত্যর্পণ আইন পাশ করে। এতে ফুঁসে উঠে হংকং-য়ের জনগণ। চীন সরকারের বিরোধিতায় তারা রাস্তায় নেমে ব্যাপক আন্দোলন করে। আর এই ইস্যুকে কাজে লাগায় যুক্তরাষ্ট্র। গত রাতে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন অধ্যাদেশ জারি করে বলেছে, "সিসিপির (চীনা কমিউনিস্ট পার্টি) কোনো নেতা আমেরিকার ভিসা পাবে না। যাদের কাছে আছে তা ছিনিয়ে নেওয়া হবে। আমেরিকা হংকং-য়ের অধিকারের পক্ষে।"
চীনা বাজারে ৯৭ ভাগ বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের অনুমতি পাওয়ার পর থেকে ভারত জ্বলছে। প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক ভাষায় বাংলাদেশের গালমন্দতে ব্যস্ত তারা। টুইটারে চলছে ব্যাপক সমালোচনা, গালিগালাজ এবং অপমানজনক কথাবার্তা। তারা একটি কথা বারবার বলছে, "এতোদিন দুধকলা দিয়ে বিষধর সাপ পুষেছে ভারত। এখন সময়মতো ছোবল দিতে সময় নেয় নি। বাংলাদেশ-পাকিস্
এবার উপর্যুক্ত ঘটনাগুলোর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ক্ষেপণ করলে দেখবেন, সবকিছু ঘটছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক কারণে। চীন যেসব দেশগুলোকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছে সেসব দেশগুলোর বিরুদ্ধে লেগে যাচ্ছে ভারত-আমেরিকা। যেমন: পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ। আর যে দেশের ওপর চীন জোর করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সে দেশে আন্দোলন জোরদার করার সবধরনের সহযোগিতা করছে আমেরিকা-ইন্ডিয়া
ভারত সবচেয়ে চিন্তিত বাংলাদেশকে নিয়ে। রাগেক্ষোভে দাউদাউ করে জ্বলছে। সীমান্তে বাংলাদেশের ওপর ইতোমধ্যে চড়াও হওয়ার খবর শুনতে পাচ্ছি। বাংলাদেশকে ভারতের অন্ধ আনুগত্যে পুরোপুরিভাবে ফিরিয়ে নিতে তারা যা যা করা দরকার সবই করবে অবলীলায়, কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে। প্রকাশ্য-অপ্রকা
ঐদিকে চীন তো টোপ দিয়েই রেখেছে। আরও দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই চলেছে। করোনা টিকার প্রথম বৈদেশিক চালান বাংলাদেশে আসবে বলে চীন ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। স্বাস্থ্য খাতের সরঞ্জামাদি তো চীন থেকেই আসছে। স্বাস্থ্য খাতকে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখতে হলে চীনকে হাতে রাখার বিকল্প আপাতত বাংলাদেশের নেই।
সব মিলিয়ে আমরা চিন্তামুক্ত অবস্থাতে নেই। গভীর চিন্তামগ্ন হলে কপালে ভাঁজ পড়বেই। চীন-ভারত দুটো দেশই আমাদেরকে ব্যবহার করার ইচ্ছা পোষণ করে। আমরা যেন বলির পাঠা না হই তজ্জন্য কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতেই হবে।
শিরদাঁড়া শক্ত করার এখনই সময়। আমরা ভেসে যেতে জানি না, ভাসাতে জানি। আমরা হুঙ্কারে স্তব্ধ হই না, মুষ্টিবদ্ধ হাত নিয়ে জেগে উঠি।