ইসলামিক ইতিহাসের গল্প | "আলমুত "অত্যন্ত দুর্ভেদ্য এক ঐতিহাসিক গগনচুম্বী কেল্লা এবং আইন জালুতের যুদ্ধ।
ইসলামিক ইতিহাসের গল্প | "আলমুত "অত্যন্ত দুর্ভেদ্য এক ঐতিহাসিক গগনচুম্বী কেল্লা। গুপ্তঘাতক হাশিশিদের ইতিহাস ও আইন জালুতের যুদ্ধ।
এই নামটি দুটো শব্দ দ্বারা গঠিত। আল আর মুত। প্রাচীন পাহলবিভাষায় এর অর্থ চিলের বাসা।
ইরানের রুদবার প্রদেশে, কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণদিকে, রাজধানী তেহরান থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে, দায়লাম পাহাড়ে, আজও এর ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান।
এর অবকাঠামো ধ্বংস হলে কী হবে, এর কুখ্যাত অবদান তো আর ইতিহাস থেকে মুছে যায়নি!
পথটি পাহাড়ের শীর্ষদেশ থেকে নিচের ঢালুতে নেমে এসেছে। অপরিচিত কারও জন্য সে পথ ছিল বিপদসংকুল।
যার কারণে কেল্লাটি ছিল অজেয়। কেল্লায় হামলা করার আগে যেকোনো যোদ্ধাকে সাতবার ভাবতে হত।
ভয়ানক এই কেল্লার মূল নির্মাতা কে- জানা যায় না। তবে বলা হয়, প্রাচীন কোনো দায়লামি শাসক এটি নির্মাণ করেছিলেন।
অত:পর ৮৬০ সালে এটির পুনর্নির্মাণ করেন এক আলাবি শাসক। এর কর্তৃত্ব আলাবিদের হাতেই থাকে।
১০৯০ সালে ইতিহাসের কুখ্যাত পিশাচগোষ্ঠী ইসমাইলি শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত হাশিশিরা এটি দখলে নেয়।
তাদের নেতা হাসান বিন সাব্বাহ আলাবি শাসককে কেল্লা থেকে বিতাড়িত করে শিয়া বাতিনি মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করেন।
বিশেষ করে তিনি কেল্লার নির্জন একটি জায়গায় রঙবেরঙের ফুল, সুস্বাদু ফল ও দৃষ্টিনন্দন উদ্ভিদ রোপণ করেন।
এগুলোর পাশাপাশি তিনি কৃত্রিমরূপে দুধ, মদ ও মধুর ঝর্ণা তৈরি করেন। এগুলো সামান্য থেমে থেমে ফোয়ারা হয়ে বইত।
দেখলে যেকেউ মনে করত, এগুলো মাটির তলদেশ থেকে উৎসারিত!
এসবকিছুর দেখাশোনা করার জন্য নিয়োজিত ছিল একদল সুন্দরী ললনার। যারা নৃত্যের তালে তালে নাচগান করত।
হাশিশিদের এদের প্রেমমদিরায় চুমুক দয়ে অশ্লীলতার রাজ্যে হারিয়ে যেত। পুরো কেল্লার একজন আধ্যাত্মিক গুরুও ছিলেন।
তিনি হাশিশিদের বলতেন, এটিই হলো জান্নাত!
এরপর নেশাকর হাশিশ নামক দ্রব্য খাওয়াতেন। খেয়েই এরা নেশায় বুঁদ হয়ে রইত।
গুরুর ইশারায় এদেরকে বাগানে তুলে নিয়ে যাওয়া হতো। যখন হুঁশ ফিরত, নিজেদেরকে তারা আবিষ্কার করত নয়নাভিরাম বাগানে।
এ বাগানকেই তারা জান্নাত মনে করতে লাগত!
যখন জ্ঞান ফিরত, তারা নিজেদের আবিষ্কার করত আধ্যাত্মিক গুরুর সামনে।
তখনই তারা গুরুর চরণে সেজদায় পড়ত লুটিয়ে। গুরু জিজ্ঞেস করতেন, কোত্থেকে এসেছো তোমরা? তারা বলত, জান্নাত থেকে!
এখান থেকেই তারা গোপনে হত্যা করে সেলজুক সাম্রাজ্যের উজিরে আজম নিজামুল মুলককে।
হত্যা করে আব্বাসি খলিফা মুস্তারশিদ বিল্লাহ ও রাশিদ বিল্লাহকে।
এখানে থেকেই তারা গাজি সালাহুদ্দিন আইয়ুবিকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
এখান থেকেই তারা ক্রুসেডারদের সাথে আঁতাত করে।
এই কেল্লাই ছিল তাদের সব পৈশাচিকতার স্বর্গরাজ্য।
১২৫৬ সালে শিয়াদের নিজারিয়া ইসমাইলিয়া রাজ্যভুক্ত নিশাপুরে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয় মোঙ্গলরা,
তখন জান নিয়ে পলায়ন করেন তুসি। আশ্রয়গ্রহণ করেন হাশিশিদের এই আলমুত কেল্লায়।
এই তুসি একাধারে ছিলেন বিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিদ, দার্শনিক, গাণিতিক ও রাজনৈতিক। বিশ্বজোড়া স্বীকৃত তার গ্রন্থাদি লেখেন এখানেই। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ হলো 'রিসালাতু আখলাকি নাসিরি'।
কেল্লাটি দুর্ভেদ্য থাকা সত্ত্বেও কেল্লার অধিপতি রুকনুদ্দিন খোরশাহ হালাকু খাঁর সাথে সন্ধি করেন। জান ও কেল্লা বাঁচানোর আশায়।
কিন্তু হালাকু খাঁ কি সেই কিসিমের লোক? কেল্লা দেন গুঁড়িয়ে, কেল্লার সব লোকের গরদানও দেন উড়িয়ে।
যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়। তুসির বেলায়ও তা-ই ঘটল। কিন্তু ঝানু রাজনীতিবিদ এই তুসি সাথে সাথে খোলস পালটে নেন।
তিনি হালাকু খাঁর সাথে হাত মিলান। ওদিকে হালাকু খাঁরও এমন একজন ধুরন্ধর লোকের খুব প্রয়োজন ছিল।
এর আগে তুসি ছিলেন ইসনা আশারিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত শিয়া। হাশিশিদের সংস্পর্শে এসে তিনি ইসমাইলি শিয়াতে রূপান্তরিত হয়েছিলেন।
চিঠি চালাচালি করে ধ্বংসের পুরো নীলনকশা আঁকেন। তার করা ছক অনুযায়ী ১২৫৮ সালে হালাকু খাঁ বাগদাদ ধ্বংস করেন।
বইয়ে দেন রক্তের বন্যা। এভাবেই কবরস্থ করেন সোনালি সভ্যতার এক সমৃদ্ধ অধ্যায়।
আর সেই নকশা আঁকেন নাসিরুদ্দিন তুসি। এভাবেই তিনি পৃথিবীসীর কাছে শিয়াদের আসল চেহারা উন্মোচিত করে যান।
যারা তাদের জাতিগত ইতিহাসে সবসময় ইসলামের শত্রুদের সাথে মিলে গোপন পাঁয়তারা এঁটেছে।
________
তথ্যসূত্র : আল-কামিল ফিত তারিখ : ৯/৪৭৯-৫৬১, ইমাম ইবনুল আসির।