যে ১৫ টি কারণে রোজা ভাঙে না (অথচ অনেকেই মনে মনে করেন—এসব কারণে রোজা ভেঙে যায়

যে ১৫ টি কারণে রোজা ভাঙে না (অথচ মনে করেন রোজা ভেঙে যায় [সরাসরি হাদিস থেকে]


কখন রোজা ভেঙ্গে যায়?
(এক.)
অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (মুখ ভরে হলেও) রোযা ভাঙবে না। তেমনি বমি কণ্ঠনালীতে এসে নিজে নিজে ভেতরে ঢুকে গেলেও রোযা ভাঙবে না। [তিরমিযি: ১/১৫৩, ৭২০ নং হাদিস দ্রষ্টব্য]
.
(দুই.)
স্বপ্নদোষ হলে, শরীর থেকে রক্ত বের হলে, শিঙ্গা লাগালে (রক্ত দিলে) রোজা ভাঙবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তিনটি বস্তু রোজা ভঙ্গ করবে না: বমি, সিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ।’’ [বাযযার সূত্রে ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার: ১২৯১, হাদিসটি সহিহ]
.
তবে রক্ত দিলে যদি শরীর দুর্বল হয়ে যায়, তবে রোজা মাকরূহ হবে; রোজা ভাঙবে না। [সহিহ বুখারির ১৯৪০ নং হাদিস দ্রষ্টব্য]
.
আলিমগণের একাংশ শিঙ্গা লাগানো (হিজামা করানো) এবং বমি করাকে রোজা ভঙের কারণ বলেছেন। তবে, হানাফি ফিকহে তা রোজা ভঙের কারণ নয়। কারণ হাদিসে এসেছে, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমতাবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন, যখন তিনি রোজাদার।’’ [সহিহ বুখারির সূত্রে ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার: ১২৯০]
.
(এ প্রসঙ্গে আমাদের (Tasbeeh) পেইজে আলাদা একটি পোস্ট আসতে পারে। যেহেতু পক্ষে-বিপক্ষে হাদিস আছে, সেহেতু, একটা পর্যালোচনা হতে পারে)
.
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি রোজাদার অবস্থায় অনিচ্ছাবশত বা বাধ্য হয়ে বমি করবে, তার কাযা করতে হবে না।’’ [আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ, ফিকহুস সুনান: ১২৯৪, হাদিসটি সহিহ]
.
(তিন.)
সুরমা, কাজল, সুগন্ধি ইত্যাদির দ্বারা রোজার কোন ক্ষতি হয় না। আনাস ইবনু মালিক (রা.) রোজাদার অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করতেন। [আবু দাউদ, ফিকহুস সুনান: ১৩০৫, সনদ হাসান] [ইবনু তাইমিয়্যাহ, হাকীকাতুস সিয়াম, পৃষ্ঠা: ৪০-৪১]
.
(চার.)
মশা, মাছি, ধুলাবালি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা পেটে ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘‘কারো গলায় মাছি ঢুকে গেলে রোযা ভাঙবে না।’’ [ইবনু আবি শায়বা, আল মুসান্নাফ: ৬/৩৪৯] [রমযান মাসের ৩০ আসর, পৃষ্ঠা: ১৫৩]
.
(পাঁচ.)
ভুলে কিছু পানাহার করলে রোজা ভাঙবে না। হাদিসে এসেছে, ‘‘যে রোজাদার ভুলে পানাহার করলো, সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে; কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন’’ [সহিহ বুখারি: ১৯৩৩, সহিহ মুসলিম: ১১৫৫]
.
(ছয়.)
শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে না। [আবদুর রাযযাক, আল মুসান্নাফ: ৪/৩১৩]
.
(সাত.)
রোজা অবস্থায় অজ্ঞান, বেহুঁশ বা অচেতন হলে রোজা ভাঙবে না। [বাইহাকি, সুনানুল কুবরা: ৪/২৩৫]
.
(আট.)
রোজা অবস্থায় মিসওয়াক (কাঁচা বা পাকা ডাল যাই হোক) করলে রোজার কোন সমস্যা নেই। এমনকি ইফতারের পূর্বে করলেও অসুবিধা নেই। [সহিহ বুখারি: ১/২৫৯, আবদুর রাযযাক, আল মুসান্নাফ: ৪/২০২]
.
[টুথপেস্টের মাসআলাটি ভিন্নভাবে আসতে পারে। আল্লাহই তাওফিকদাতা]
.
(নয়.)
নাইট্রোগ্লিসারিন-জাতীয় ইনহেলারে রোজা ভাঙবে না, তবে ভেনটোলিন ইনহেলারে রোজা ভেঙে যাবে, কারণ এর কিছু অংশ খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। [মাসিক আল কাউসার সূত্রে ‘রমযান মাসের উপহার’ মাওলানা হাবীবুর রহমান]
.
(দশ.)
নাকে ড্রপ, স্প্রে ব্যবহারের পর তা যদি গলার ভিতরে চলে যায়, তবে রোজা ভেঙে যাবে। অবশ্য গলায় না গেলে বা স্বাদ অনুভূত না হলে রোজা ভাঙবে না। [মাজাল্লাতু মাজমা‘ইল ফিকহিল ইসলামী: ২/৪৫৪, মাসিক আলকাউসার সূত্রে ‘রমযান মাসের উপহার’] 
.
(এগারো.)
খাবার ঠিকঠাক আছে কীনা তা বোঝার জন্য ঘ্রাণ নিলে রোজা ভাঙবে না। ইবনু উসাইমীন (রাহ.) বলেন, ‘খাবারের স্বাদ গ্রহণ করলে রোজা ভাঙবে না। যদি গিলে ফেলা না হয়।’ [রমযান মাসের ৩০ আসর, পৃষ্ঠা: ১৫৫]
.
তবে, বাধ্য না হলে এমনটি করা মাকরূহ। যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে।
.
(বারো.)
রোজা অবস্থায় নখ বা চুল কাটতে কোনো সমস্যা নেই। মেয়েরা হাতে-পায়ে মেহেদী দিলেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। [শায়খ আহমাদ মূসা জিবরিলের রিসালাহ]
.
(তেরো.)
সহবাস ছাড়া স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ হলে রোজা ভাঙবে না। তবে বীর্যপাত হওয়া যাবে না। আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজাদার অবস্থায় (স্ত্রীকে) চুমু খেতেন এবং আলিঙ্গন করতেন। তবে, নিজ আবেগ-উত্তেজনার উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিলো তোমাদের সবার চেয়ে বেশি।’’ [সহিহ বুখারি ও মুসলিম, ফিকহুস সুনান: ১২৯৫]
.
তবে সাবধান! এটি অনেক বেশি রিস্কি ব্যাপার। বীর্যপাত হওয়া বা সহবাসের দিকে আগ্রহী হওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনা থাকলেও এ থেকে বিরত থাকতে হবে।
.
(চৌদ্দ.)
রাতে সহবাস করতে কোনো অসুবিধা নেই। এমনকি সহবাসের পর গোসল না করে সাহরি খেয়ে ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর গোসল করলেও সমস্যা নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই কাজটি সাব্যস্ত আছে। [সহিহ বুখারি ও মুসলিম, ফিকহুস সুনান: ১৩০৪]
.
(পনেরো.)
গরমের কারণে, শরীর ঠাণ্ডা করতে একের অধিকবার গোসল করতেও সমস্যা নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই কাজটির প্রমাণ আছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক: ২/২৯৪, আবু দাউদ: ২৩৬৫]
.
পোস্ট ক্রেডিটঃ  Tasbeeh
Next Post Previous Post