তালিবান - আমেরিকান শান্তি চুক্তি। পরাজিত আমেরিকার নাক বাঁচানোর শেষ চেষ্টা
১৯ বছর পর আফগানিস্তানে শান্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে। তালিবান-আমেরিকা পিস ডিলের প্রথম ধাপে ৭ দিনের "Reduction in Violence'' অর্থাৎ যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হয়েছে।
ইংশা আল্লাহ ২৯ ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকে শঙ্কিত, চিন্তিত। ট্রাম্প চায় একটি সুন্দর প্রসেসের মাধ্যমে পরাজিত আমেরিকান সেনাদের সম্মানের সাথে নিয়ে যেতে।
চুক্তির দিকে মুখিয়ে তাকিয়ে আছে বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ। অধিকাংশ লোক চায় এই চুক্তি হোক, আফগান আবার মুক্ত হোক।
কিন্তু কিছু গ্রুপ আছে যারা চুক্তি বিরোধী। আঞ্চলিক ভাবে এদেরকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
এক- ভারত।
আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে বের হলে সবচে ক্ষতিগ্রস্থ হবে ভারত। আমেরিকা চলে গেলে পুরো অঞ্ছলে ভারত একা হয়ে যাবে। এমনিতেও আমেরিকা পুরো এশিয়া থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে।
এছাড়া তালিবান ক্ষমতায় এলে পাকিস্তানের পশ্চিম বর্ডারে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে ফলে পাকিস্তান পূর্বে পুরো ফোকাস করতে পারবে।
অন্যদিকে তালিবানের মদদে আঞ্চলিক ইসলামিস্ট গ্রুপ গুলো শক্তিশালী হয়ে উঠবে। অবশ্যই আফগানিস্তান থেকে ভারতকে পুরো বের হয়ে যেতে হবে।
সাম্প্রতি করা ইনভেস্ট চরম ভাবে লস হবে। সব মিলিয়ে ভারত চরম আতংকিত এখন।
দুই- আফগানিস্তানের সেকুলার ও মডারেটরা
ঐ সকল স্পয়লার-রা যারা আফগানিস্তান, পাকিস্তান, উজবেকিস্তানে বসবাস করে।
আফগানিস্তানের সেকুলার ও মডারেটরা জানে তালিবান ক্ষমতায় আসা মাত্র তাদের পাকরাও করা হবে নতুবা রাষ্ট্র ত্যাগ করতে হবে।
এই সেকুলাররা ইসলামকে ভয় পায়। অন্যদিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুলোর সেকুলার চিন্তা ধারার মানুষ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম হলে তাদের রাষ্ট্রেও এক সময় ইসলাম ঢুকবে এই ভয়ে শঙ্কিত।
একই ভাবে এই গ্রুপে আছে মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলো। যারা নিজেদের রাজত্ব ও ক্ষমতা নিয়ে শঙ্কিত।
তিন-
ঐ সকল মানুষ যারা আমেরিকা এবং তালিবানের শান্তি আলোচনার নাম শুনলেই ভয় করেন, বা অপবাদ দেন যে তালিবান আগের মত নেই, তারা দ্বীন ইসলামের ক্ষেত্রে ছাড় দিচ্ছে বা মডারেট লিবারেল ধারা ফোলো করছে, তালিবান জাতীয়তাবাদী চেতনা ধারন করেছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এছাড়া বিশেষ করে পশ্চিমা সেকুলার লিবারেল ডেমোক্রেট মানুষ গুলো কঠিন ভাবে চুক্তি বিরোধী।
যাইহোক, স্পয়লার-রা যদি কোনো চক্রান্ত না করে তাহলে এই চুক্তি ইংশা আল্লাহ হবে। আর তৃতীয় ভাগের মানুষরা জেনে রাখুক তালিবান ঠিক আগের মতই আছে ছিল থাকবে।
বরং আরো কুর'আন ও সুন্নাহর নিকটবর্তী হবে। তারা যদি নিজ আদর্শে ছাড় দিত তাহলে বহু পূর্বেই আমেরিকাকে তাড়াতে পারত। অনেক কিছু অর্জন করতে পারত।
আমেরিকান ইম্পেরিয়ালিজম কলাপ্স করছে। নিশ্চয় আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদে সবচে বড় আঘাত হল আফগান তালিবান।
শারীরিক ভাবে তারা যেভাবে আমেরিকাকে পরাজিত করেছে, দীর্ঘ দিন ধরে মানসিক সকল ফিল্ড আমেরিকার দখলে থাকলেও এবার মানসিক ভাবেও তাদের পরাজিত করা হয়েছে।
আমেরিকার মেইনস্ট্রিম মেডিয়া গুলো তালিবানকে সন্ত্রাসী বলা বাদ দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলছে। তালিবানের কথা সরাসরি মেডিয়ায় প্রকাশ পাচ্ছে,
নিউইয়র্ক টাইমসে তালিবানের কলাম ছাপানো হচ্ছে।
আফসোস হয় বিভিন্ন মুসলিম দেশের ইসলামিক রাজনৈতিক দল গুলোকে দেখলে। এদের কেউ কেউ এমন ভাব ধরে, মনে হয় তালিবান না রাজনীতি বুঝে না যুদ্ধ।
অথচ তারা জানে না রাজনীতি, কূটনীতি এবং যুদ্ধনীতি সব কিছুতেই তারা তালিবানের তুলনায় ছোট এক শিশু।
এরা সেকুলারদের সাথে ভয়ে ভয়ে যে বৈঠক করে সেটাকে বৈধতা দিতে তালিবান-ইউএস নেগোশিয়েশন এর কথা তুলে আনছে।
অথচ তারা ভুলে যায় তালিবান পরাজিত অবস্থায় আমেরিকার সাথে বসেনি। বরং তারা এমন অবস্থানে গিয়েছে যে শান্তি আলোচনায় বসতে আমেরিকা বাধ্য হয়েছে।
- Kaisar Ahmad কায়সার আহমাদ
আফগানিস্তানে যুদ্ধের পরে কী? - Rezaul Karim Rony
আফগানিস্তানে তালেবান কি করতে যাচ্ছে...?
একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলেছে আফগান যুদ্ধের ইতি টানা নিয়ে। কাতারের দোহাতে গত ১৮ মাস ধরে চলছে আমেরিকার সাথে তালেবান নেতাদের বৈঠক।
বৈঠকের ফলাফল পৃথিবী প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল। মানে তালেবানদের সাথে আমেরিকা একটি শান্তি চুক্তিতে সাক্ষর করতে যাচ্ছিল এমন সময় কাশ্মির ইস্যুসহ মোদির জায়নবাদি প্রকল্প ও ইসরায়েলের পরিকল্পনামতে পাকিস্তানকে একটা যুদ্ধের ফাঁদে ফেলার কৌশল শুরু হওয়াতে এই শান্তিচুক্তির প্রকৃয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। পাকিস্তান ও ইমরান খানের ভূমিকাও ঐতিহাসিক হয়ে উঠবে এই প্রকল্পটা সফল হলে। এখনও আশা শেষ হয় নাই, এখনও সেই প্রকল্প চলছে।
এই গতকাল। ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২০, দি নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতামত সেকশন দেখে টাস্কি খেয়ে গেলাম। 'What We, the Taliban, Want'-শিরোনামে তালেবানের ডেপুটি লিডার সিরাজুদ্দিন হাক্কানীর একটা লেখা ছাপা হয়েছে। সিরাজউদ্দিন হাক্কানী খুবই গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এবং দুনিয়ার রাজনীতি ভালই বুঝেন। আমাদের হুজরদের কাউকে এখনও এই লেভেলে কল্পনাও করতে পারি না।
তালেবান নেতার লেখা খুব গুরুত্ব নিয়ে দুনিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী পত্রিকাতে ছাপা হয়েছে। কেন তারা বাধ্য হল, এটা ছাপতে। কেন তারা তাদের 'জঙ্গি' বক্তব্য এখন নিজেরাই প্রচার করছে? মিলিটেন্ট প্রতিরোধ
শত্রুকেও বাধ্য করে আপনার জন্য স্পেস ছেড়ে দিতে। আপনার পজিশন যাই হোক, যতই অনাধুনিক হোক, সে আপনাকে আমলে নিতে বাধ্য।
বাঙ্গালিয় প্রগতী টাইপের অশিক্ষিত মগজ এটা বুঝতে পারবে বল মনে হয় না। খুবই সুন্দর লেখাটিতে তিনি যেসব বিষয় পরিস্কার করেছেন তা আগামীতে আফগানিস্তানে কি ঘটতে যাচ্ছে তা বুঝতে ব্যাপক হেল্প করতে পারে।
তিনি পরিস্কার করে বলেছেন, চুক্তির এক নম্বর শর্ত হল, আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনাকে বিনা শর্তে সরে যেতে হবে। তার পরে কেমন সরকার হবে তা তিনি আফগান জনগনের মতামতের উপর ছেড়ে দিতে বলেছেন। কিন্তু এই লেখায় সব চেয়ে জরুরী যে বিষয়টা উঠে এসেছে, তিনি একবারও সেকুলার রাষ্ট্র কায়েমের পশ্চিমা তরিকার দিকে আগ্রহ দেখান নাই।
বরং পরিস্কার করে বলেছেন, ইসলামের যে সাম্য ও সমান অধিকারের ঘোষণা আছে। নারীদের যে সম্মান, শিক্ষা ও কাজের অধিকার রয়েছে তার আলোকে আফগান জনগনের ইচ্ছাতেই আগামিতে আফগান রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। আর কে না জানে, আফগান জনগনের উপর সব চেয়ে বেশি প্রভাব রাখেন এখন তালেবান। তালেবান শুধু জেহাদি শক্তি না। জাতীয় হিরোও জনগনের কাছে।
এই যুদ্ধে আমেরিকা কিয়ামতের আগে জিততে পারবে না। ফলে এই রকম শান্তি-আলাপের মাধ্যমে আফগান যুদ্ধের ইতি টানার সুযোগ গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন পথ তাদের সামনে খোলা নাই। অন্যদিকে আফগান তালেবান খুব আগ্রহ ও আন্তরিকতা নিয়ে আলাপ শুরু করলেও আমেরকিা বিশ্বস্ততার প্রমাণ রাখতে ব্যার্থ হয়েছে।
আলাপ চলা কালেও হামলা করেছে, গ্রামে গ্রামে বোমা ফেলেছে। ফলে তালেবানও আমেরিকাকে অবিশ্বাস করে যুদ্ধ ও সংলাপ দুইটাই চালিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকা যে মূলত বেঈমান তা তাদের দেশের পত্রিকাতেই লিখে হাক্কানী দুনিয়াকে জানাচ্ছেন। অন্ত্র ও নৈতিক উভয়ে যুদ্ধে আমেরিকার উপর তালেবানের এই প্রভাব দেখে অবাক না হওয়ার কারণ নাই।
আফগান তালেবানকে জঙ্গি, সন্ত্রাসী বলে যারা দুনিয়াতে প্রচার করেছে তারাই তাদের বক্তব্য, লেখা এখন প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছে। সিরজউদ্দিন হাক্কানীর লেখা ছাপা হওয়াকে পশ্চিমা ইসলাম বিরুদ্ধে যুদ্ধের একতরফা প্রচার যুদ্ধের পরাজয় হিসেবে দেখাই যায়।
হাক্কানীর লেখায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা ধরা পরেছে তা হল, আফগান তালেবান তার পজিশন থেকে এক বিন্দুও সরে নাই। বরং তার পজিশন সে এখন আরও কঢ়া ভাবে জাস্টিফাই করার সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি একবারও পশ্চিমা গণতন্ত্রের মতো করে যুদ্ধের পরে দেশ চলবে এমন কথা বলেন নাই।
তিনি সব দেশ ত্যাগে বাধ্য মানুষকে আফগানিস্তানে ফিরিয়ে আনতে চান ( সব দল মতের মানুষকে) । পৃথিবীর সব দেশের সাথে আফগানিস্তানের মর্যাদা সমুন্নত রেখে এবং ইসলামের ঐতিহ্য মোতাবেক সম্পর্ক স্থাপনের কথাও বলেছেন।
তা হলে দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধের পরে পৃথিবীর অন্যদেশে যেমন আমেরিকার বানানো গণতন্ত্র আমদানি করা হয় এবং তাদের পোষা কিছু লোকদের ক্ষমতায় বসানো হয় আফগানিস্তানে এটার কোন সুযোগ নাই। আফগান যুদ্ধ অবশ্যই শেষ হবে।
এবং আমি এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি একটা ইসলামি শাসনই আফগানিস্তানে কায়েম হবে। এবং এই শাসনের বিরুদ্ধে আর আগের মতো ইসলামোফোবিক প্রচারণা চালানোর সুযোগও থাকবে না।
এখন কথা হল, এটা কেমন ইসলামী শাসন হবে? মোল্লা ওমরের আমলের মতোন নাকি ভিন্নতরো কোন শাসন কাঠানো দেখা যাবে? এটা আগাম বলা যায় না। তবে আমি ক্ষুদ্রজ্ঞানে যতটা বুঝতে পারি, এটা আর আগের মতো হবে না। এমনকি এর কাঠামো অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে পোক্ত হবে। এখানে জনগনের অংশগ্রহনের সুযোগ যেমন থাকবে, অন্যদিকে একই সাথে ইসলামের মূল বিষয়গুলোকে সথে নিয়েই এই শাসন কাঠামো গড়ে উঠবে।
নারী ও উন্নয়ণ প্রশ্নে আগের নীতি থেকে পরির্বতন আসবে। পরির্বতন আসবে রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতীতেও। কিন্তু তালেবান বলছে ইসলামের ঐতিহ্যের বাইরে তারা কিছু করতে চায় না। আবার সারা দুনিয়ার সাথে একটা সম্পর্কও চায়।
ফলে সুন্নি ধারার মধ্যে একটা ইসলামি রাষ্ট্রের নতুন মডেল হয়তো পেতে যাচ্ছে দুনিয়া। ইরানিয়ান বিপ্লব-উত্তর রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে যতই দ্বিমত থাকুক এটা একটা অভিনব মডেল ছিল। যা এর আগে দুনিয়া দেখে নাই। আমার ধারণা যুদ্ধ শেষ হলে আফাগান তালেবান তেমন কিছু না হলেও যে ধরণের রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতী গড়ে তুলবে তা ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার ইতিহাসে নতুন সূচনা হিসেবে আর্বিভূত হতে যাচ্ছে বলেই মনে করি। এটা কেমন হবে তা দেখতে অন্যদের মতো আমিও খুব আগ্রহী।
আফগান জনগনের ত্যাগ ও সংগ্রামের যে তেজ সারা দুনিয়া দেখেছে তাতে এই জাতিকে সমীহ না করে উপায় নাই। শত্রুর সাথে আন্তরিকতা ও কঠোরতার উভয় চর্চাতেই আফগান জনগন সেরা।
আফগানিস্তানের জনগনের বিজয় আবারও এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে যাচ্ছে যে, দুনিয়াতে জালেম যতই ক্ষমতার অধিকারী হোক তার পরাজয় নিশ্চিত। সময় একটু লাগলেও তার ধ্বংস কেউ ঠেকাতে পারবে না।