শান্তনু কায়সার - ইসকন - বাংলাদেশ
শান্তনু কায়সার নামক একটা ছেলে ইউটিউবে ইসকন নিয়ে একটা ভিডিও
১) ইসকন গুরুকে প্রশ্ন করা হয়েছে আপনারা কি সারা বিশ্ব মুসলিমমুক্ত চান ?
এ ধরনের প্রশ্ন আসলে অযৌক্তিক। সে যদি সত্যিই মুসলিমমুক্ত চায়, তবে কি সে তা নিজ মুখে স্বীকার করবে ? এত বোকা তো সে নয়।
বাস্তবতা হলো- কারো কথাকে দলিল হিসেবে ব্যবহার না করে তার কাজকে দলিল মনে করতে হবে।
যেমন- কেউ হয়ত মুখে বললো- “আমি ক্ষমতা চাই না, আমি শান্তি চাই।” আপনি যদি তার মুখের কথা নিয়ে বিশ্বাস করেন, তবে নির্ঘাৎ বোকার রাজ্যে বাস করবেন। বরং তার কার্যক্রম দেখে বুঝতে হবে, আসলেই কি সে ক্ষমতায় চায় না ?
শান্তনুর উচিত ছিলো- চৈতন্যের বক্তব্য অনুসারে চৈতন্যকে নিয়ে আরো রিসার্চ করা। তার কার্যক্রমগুলো প্রকাশ করা। যেহেতু ইসকন চৈতন্যকে ফলো তাই তাদের আচরণে চৈতন্যের প্রভাব পড়বে তা স্বাভাবিক। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন পেইজে গেলে ইসকন রিলেটেড হিন্দুদের স্ট্যাটাস কিংবা কমেন্ট নিয়ে পর্যালোচনা করা, আদৌ কি তারা বাংলাদেশের মুসলমানদের সাথে সম্প্রীতির সাথে থাকতে চাইছে ? নাকি বাংলাদেশকে নিয়ে ভিন্ন কোন প্রত্যাশা করছে, যা “নির্যবন করো আজি সকল ভুবণ”- থিউরীর সাথে মিলে যায়।
সে উত্তরে বলেছে, ভগবত গীতায় এমন নেই।
আর শান্তনু সেটাই প্রচার করে দিলো। কিন্তু সেটা যাচাই করলো না- আসলেই সে সত্য কথা বলছে না মিথ্যা বলেছে।
উল্লেখ্য ভগবত গীতাটা কি ?
ভগবত গীতা হলো – হিন্দু ধর্মযুদ্ধ কুরুক্ষেত্র শুরুর আগে কৃষ্ণ আর অর্জুনের মধ্যে কথপোকথন।
কথা আসতে পারে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধটা কি ?
মূলত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে ভারত বর্ষ ২২০টি রাজ্যে খণ্ডিত ছিলো। এই খণ্ডগুলো জোড়া লাগানো তথা অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার জন্যই হয়েছিলো কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ। কৃষ্ণকে বলাই হয়, তার আবির্ভাব হয়েছে, অখণ্ড ভারতকে এক করার জন্য।
কিন্তু কৃষ্ণের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো সে নিজে অস্ত্র ধারণ করে যুদ্ধ করে না,
সে অন্যকে দিয়ে যুদ্ধ করায় বা প্রক্সি ওয়ার করে।
এই কুরুক্ষেত্র নামক প্রক্সিওয়ার ছিলো মূল কৃতিত্ব ছিলো কৃষ্ণের, যার মাধ্যম দিয়ে ২২০ রাজ্যে খণ্ডিত ভারত অখণ্ড প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে দাবী করা হয়। সেই ঘটনাই হলো মহাভারত মহাকাব্য যার একটি অংশ হলো গীতা।
আর ইসকন মানেই হলো- ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। অর্থাৎ তাদের কাজ হলো কৃষ্ণের জীবন বাস্তবায়ন করা। অথচ পুরো বিষয়টি নিয়ে সুখী সুশীল দাস ডাইরেক্ট মিথ্যা বলে দিলো।
অথচ- চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে প্রসাদ বিতরণের সময় ইসকন সদস্যরা কিন্তু শুধু হরে কৃষ্ণ শ্লোক পাঠ করায়নি, হরে রাম’ও বলেছে, যা সবাই শুনেছে। কিন্তু ইসকন গুরু কিন্তু ডাইরেক্ট সেটা নাকচ করে দিলো। এবং শান্তনু ডাইরেক্ট সেটা নিয়ে কিন্তু কোন প্রশ্নও করেনি।
আসলে ইসকন মন্দিরের ধর্মগুরু ছাড়া অন্য কারো (যারা ইসকন মন্দিরে আসে বা ইসকন মতাদর্শ দ্বারা দিক্ষিত) দায়ভার কিন্তু ইসকন কর্তৃপক্ষ কখনই স্বীকার করবে না, এটাই স্বাভাবিক। এবং গ্রেফতার হওয়ার পরে সেটা প্রশ্ন করাও বোকামি। অমিত সাহা ইসকন সদস্য বা তাদের মতাদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত কি না, এটা জন্য যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়-
ক) অমিত সাহার ফেসবুক লাইক, যার ধর্মীয় পেইজগুলোর লাইকে ইসকনের পেইজের আধিক্য।
খ) অমিতের বাড়ি নেত্রকোণায়, যে এলাকায় বৈষ্ণব হিন্দুদের আধিপত্য, যেখানে বড় ধরনের রাস মেলা হয়।
গ) অমিতের টেবিলে লাগানো কৃষ্ণের স্টিকার,যা ইসকন সদস্যরা বেশি ব্যবহার করে।
ঘ) মিডিয়ায় প্রকাশ, অমিতের গ্রেফতারের মুহুর্তে অমিতের বাবা-মা ভারতের বৃন্দাবনে তীর্থযাত্রা করছে। উল্লেখ্য বৃন্দাবন হলো রাধা-কৃষ্ণ ও গোপীদের লীলাখেলার স্থান, যা ইসকনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।
এ ধরনের প্রশ্ন ইসকনের সুশী সুশীল দাসকে করা হলে সে জিনিসটাকে হাস্যরসে পরিণত করেছে।
আসলে তারাই তো নিরাপরাধ মুসলমানকে জঙ্গী ট্যাগ দেয়, আর নিজেরা হাজারো জঙ্গীপনা করলেও সেটা জঙ্গীবাদ হয় না, এটা তো সবাই জানে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি আনন্দবাজারের খবর প্রকাশ, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ সরকারকে সতর্ক করেছে, বাংলাদেশের ইসকন মন্দিরে জঙ্গী হামলা হতে পারে। এই বক্তব্যের দ্বারা ভারত ইসকনবিরোধী যে কোন বক্তব্য বা কাজকে জঙ্গীবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করলো।
অথচ ২০১৬ সিলেটে ইসকন-মুসল্লি সংঘর্ষের পর সিলেটের হিন্দুরাই কিন্তু স্ট্যাটাস দিয়েছিলো, ইসকন মন্দিরে অস্ত্র মজুদ রাখা হয় বলে (http://goo.gl/7gyHsK)।
মূলতঃ ইসকন যদি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের থেকে আগত কোন সংগঠন হতো, তবে কোন সমস্যা ছিলো না।
সমস্যা হলো, এই সংগঠন যে ব্যক্তি তৈরী করেছে অর্থাৎ প্রভুপাদ শীল, সে একটি খ্রিস্টান মিশনারী থেকে আগত ব্যক্তি। আর বর্তমানেও ইসকনের কেন্দ্রে যে শীর্ষগুরুরা আছে, তারা অধিকাংশই খ্রিস্টান ও ইহুদী ধর্ম থেকে কনভার্ট হওয়া। উল্লেখ্য, সামরিক বাহিনীর সদস্য আবু রুশদের লেখা, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা- বাংলাদেশে ‘র’ বইয়ের পৃষ্ঠা:১৭১ এ লেখা আছে-
“ইসকন নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশে কাজ করছে। এর সদর দফতর নদীয়া জেলার পাশে মায়াপুরে। মূলতঃ এটা ইহুদীদের একটি সংগঠন বলে জানা গেছে। এই সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে উস্কানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি।”. (বাংলাদেশে ‘র’ বইয়ের পৃষ্ঠা:১৭১)
কিন্তু ব্রিটিশরা আসার পর সেই হিন্দুরাই পরিবর্তিত হয়ে গেলো। ব্রিটিশদের সাথে হাত মিলিয়ে এ অঞ্চলকে করলো ২০০ বছরের জন্য পরাধীন। তাই সাধারণ হিন্দু আর সাদা চামড়ারা যখন এক হয়, তখনই এ অঞ্চলের মানুষ ভয় পাওয়া শুরু করে। কারণ তখন হিন্দুদের আচরণের পরিবর্তন ঘটে, তারা কৌশলী হয়, তাদের মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্নভাবে আগ্রাসী আচরণ করতে থাকে, যা ইসকনের সামগ্রিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে স্পষ্টভাবে ধরা পরে।
বিশ্বজুড়ে অমুসলিমদের পলিসি হচ্ছে- তারা সবাই একত্র থাকবে আর মুসলমানরা দলে দলে ভাগ করে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরবে।
ইসকন নিজেও সমস্ত জাত প্রথা দূর করে হিন্দু গোষ্ঠীগুলোকে একটা প্ল্যাটফর্মে আনার জন্য কাজ করছে।
ইসকন নিয়ে যখন বাংলাদেশের সকল মুসলমান দলমত নির্বিশেষে আন্দোলন করছিলো, তখন কিছু কিছু ইসকনের পেইজে আমি তাদের বক্তব্য দেখলাম, তারা বলছে, “তোমাদের মুসলমানদের মধ্যে কত সমস্যা, কত দ্বন্দ্ব সেটা নিয়ে আগে আন্দোলন করো, তারপর আমাদের দিকে দৃষ্টি দিতে এসো।”
অর্থাৎ ইসকন যাচ্ছে, মুসলমানরা যেন নিজেদের মধ্যে মারামারি অব্যাহত রাখে, ইসকনের দিকে দৃষ্টি না দেয়।
আমি অবাক হলাম শান্তনু কায়সার তার ভিডিওটি শেষ করলো সেই ইসকনের বক্তব্যই যেন নিজ মুখে প্রচার করলো।
শেষ অংশে বললো- ইসকনের আগে আমাদের মুসলমানের মধ্যে যাদের সমস্যা আছে, সেগুলো নিয়ে আগে আন্দোলন করতে বললো। এ কথাটা শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। সত্যি বলতে, আমার কাছে শান্তনু'র ভিডিওগুলো ভালোই লাগে, কিন্তু কি কারণে যে এই ভিডিওটাতে হোচট খেলো, তা আমি বুঝলাম না। আমার মনে হয়, তার এ বিষয়টাতে তার আরো ভালো করে স্ট্যাডি করে তারপর ভিডিও বানানো উচিত।