প্রিয় বোন পর্দা কি কেন পর্দা কর না? এবং সালাতে খুশু খুযু দুইটি ইসলামিক বই রিভিউ ও লিংক
Bangla Book Review Pdf Download | প্রিয় বোন পর্দা কি কেন পর্দা কর না? এবং সালাতে খুশু খুযু
১।লেখকঃ শাইখ ড মুহাম্মাদ ইসমাইল, আব্দুল হামীদ আল বেলালী
২।লেখকঃ ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ
বইয়ের নামঃ প্রিয় বোন পর্দা কি কেন পর্দা কর না?
ভাষান্তরঃ এ এস এম এ হাকীম
বইয়ের ধরনঃ পর্দা ও ইসলামী জীবন।
প্রকাশনীঃ খন্দকার প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্যঃ ৭০৳
পৃষ্ঠাঃ ৯৬
বই রিভিউ লেখকঃ মুহাম্মাদ আবু আব্দুল্লাহ
★ বই পরিচিতিঃ নাম থেকেই অনুমেয় বইটি পর্দা নিয়ে।বইটিকে ৬টি অধ্যায়ে ভাগ করা যায়।
প্রথম অধ্যায়ে পর্দা করার উপকারিতা কোরআন হাদীসের আলোকে লেখক তুলে ধরেছেন। এ অধ্যায়ে শারঈ পর্দা করলে যে আল্লাহর আনুগত্য হয়, পবিত্রতার নিকটবর্তী থাকা যায়, তাকওয়া অর্জন হউ, ঈমানের বহিঃপ্রকাশ হয়, পর্দাই যে নারীর আত্মমর্যাদার প্রতীক এসব বিষয়ে সুন্দর ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে।প্রিয় বোন পর্দা কি কেন পর্দা কর না? ২য় অধ্যায়ে
পর্দাহীনতার কুফলগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এটি যে আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্যতা, মারাত্মক গোনাহ, এর কারণে যে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে এসব ব্যাপারে সুন্দর দালিলিক আলোচনা হয়েছে। অশ্লীলতার সামাজিক ও পরকালীন কুফল নিয়েও সংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। এ অধ্যায়ের শেষদিকে লেখক লিখেনঃ
" *অশ্লীলতা দৃষ্টি নিম্নগামী রাখতে সমস্যা সৃষ্টি করে।
*অশ্লীলতায় আল্লাহর তরফ হতে ন্যায়সঙ্গত শাস্তি আরোপ হয়। আল্লাহর শাস্তি আণবিক মারণাস্থ অথবা ভূমিকম্পের চাইতেও অধিক কঠিনতর।"প্রিয় বোন পর্দা কি কেন পর্দা কর না? বই এর ৩য় অধ্যায়ে পর্দা প্রথার বাধ্যতামূলক শর্তসমূহ আলোচিত হয়েছে।
ক) সম্পূর্ণ শরীর আবৃত রাখতে হবে। আগের কোন কোন আলেম হাত ও চেহারা পর্দার অন্তর্ভূক্ত নয় বলে মত প্রকাশ করলেও বর্তমান জমানার অবস্থা বিবেচনায় সকলেই একমত যে হাত ও চেহারাও পর্দার অন্তর্ভুক্ত।
খ) পর্দা প্রদর্শনের বস্তু নয়- পর্দা সংক্রান্ত আয়াত দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন।
গ) পর্দা স্বচ্ছ ও পাতলা হবেনা- হাদিস, আয়াত ও যুক্তির আলোকে বুঝিয়েছেন।
ঘ)পর্দা আটসাট নয়- যুক্তি ও হাদিস দিয়ে বুঝিয়েছেন।
ঙ) পর্দায় সুগন্ধি ব্যাবহার নিষিদ্ধঃ হাদিস ও যুক্তি দিয়ে মেয়েদের ঘরের বাইরের সুগন্ধি ব্যাবহারের পরিণাম লিখেছেন।
তাছাড়াও,
চ) পর্দা পুরুষের পোশাক সদৃশ হবে না,
ছ) পর্দা কাফেরদের পোশাক সদৃশ নয়,
জ) পর্দা যশ খ্যাতির জন্যে নয়,
এসব ব্যাপার আলোচনা করেছেন।
অনেকে লোকচক্ষুর আড়ালে হারাম কাজ করার জন্যে, প্রেম করার জন্যে বা বেশ্যাগিরি করার জন্যে পর্দা নিক্বাব করে বের হয় যাতে কেউ চিনতে না পারে। তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ইসলামসম্মত পর্দা ও আধুনিক কালারফুল হিজাবের পর্দার মধ্যে পার্থক্য দেখিয়ে দিয়েছেন।
৪র্থ অধ্যায়ে পর্দা নিয়ে জাপানের নওমুসলিম বোন খাওলার ঈমান জাগানিয়া কারগুজারি উল্লেখিত হয়েছে।
৫ম অধ্যায়ে লেখক পর্দা নিয়ে সংশয়ের জবাব খুব সুন্দরভাবে সহজবোধ্য উপায়ে দিয়েছেন। যেসব সংশয়ের জবাব দিয়েছেন তা হলঃ
ক) খোলামেলা কাপড় পরলে সমাজের পুরুষদের কাছে যৌনতা স্বাভাবিক থাকবে, না হলে সমাজে যৌন বিস্ফোরণ ঘটবে - এই সমালোচনার জবাব আমেরিকার অপরাধের পরিসংখ্যান, ইসলামের ইতিহাস, পুরুষদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য ও সরল যুক্তির আলোকে অপনোদন করেছেন।
খ) অনেকে বলে পর্দার বিষয়টি বুঝে আসেনা। তাদেরকে আল্লাহুর হুকুম শোনা ও মানার গুরুত্ব বুঝিয়েছেন আর অবাধ্য হওয়ার শাস্তিও লিখেছেন।
গ) বিশ্বাস হল অন্তরের ব্যাপারঃ এ সংশয়ের চমৎকার জবাব দিয়েছেন। বিশ্বাস শুধু আমল ব্যাতীত অন্তরের ব্যাপার হলে আল্লাহ কোরআনের অসংখ্য জায়গায় 'যারা ঈমান এনেছে ও 'সৎকর্ম' করেছে' বলতেন না।ঈমানের প্রকাশ হল আমল। এখানে আরো কিছু গল্প ও যুক্তি দিয়ে সঠিক রাস্তা ও পন্থা চিনিয়েছেন।
এছাড়াও অনেকে বলে পর্দা করলে
ঘ) বিবাহ প্রলম্বিত হওয়ার আশংকা থাকে অথবা ঙ) এখনো বয়স কম। এই সংশয়গুলোও সমাধান করেছেন।
আবার অনেকে বলে চ)রুচিশীল পোশাক পরলেই পর্দা হয়ে যায় ছ) পর্দা সমাজের প্রোডাক্টিভিটি কমিয়ে দেয় জ) পর্দা এ যুগের সভ্যতায় চলে না। তাদেরও উচিত জবাব দিয়েছেন।
শেষ অধ্যায়ে লেখকঃ
ক) ইসলামী পর্দা আর নব্য আবিষ্কৃত আধুনিক বোরকার পার্থক্য করেছেন।
খ) আকস্মিক মৃত্যু ও পরকালের ভয়ংকর সফরের কিছু ঘটনা তুলে ধরার চেস্টা করেছেন।
গ) শায়খ উসাইমিনের (রহ) ফতোয়া যুক্ত করেছেন। শায়খ পর্দা নিয়ে করা বিভিন্ন কমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। যেমনঃ স্বামী বা পিতামাতা পর্দা করতে বাধা দিলে কী করণীয়। হুকুম কী। পিতামাতার প্রতি নসীহতও করেছেন। এছাড়া পরিবারের লোকদের সাথে কীভাবে বিনয়ী থেকে, সবর করে, কীভাবে এপ্রুচ করলে পিতামাতাকে নমনীয় করা যাবে সে ব্যাপারে নসীহত করেছেন।
ঘ) সাম্রাজ্যবাদী কাফেরদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফসলই যে আজকের পর্দাহীন মুসলিম নারী তা বুঝিয়ে বলেছেন গত শতাব্দীর কলোনিয়ালিজমের ইতিহাস থেকে।
★ পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
ভালো দিকঃ
১। বইটি ছোট। লেখা সহজ। নিজের মা-বোনদের পর্দার গুরুত্ব বুঝাতে উপহার দেয়া যেতে পারে। তারা বই পড়ুয়া না হলে নিজেও পড়িয়ে শোনানো যেতে পারে।
২। অনুবাদ ভাল।
৩। দাম কম।
৪। লেখনী খুবই অমায়িক স্নেহের ভাষায়। ধমক দিয়ে নয়, স্নেহের সাথে বুঝানোর চেস্টা করা হয়েছে যেন।
৫। বানান ভুল নেই খুব একটা।
খারাপ দিকঃ
১। প্রচ্ছদ ভালো লাগেনি।
২। পাতার কোয়ালিটি ও বাধাই ভালো না।
৩। নামকরণের কারণে এই বই কিনতে ঝামেলা হবে। একই নামের একাধিক বই বাজারে বিদ্যমান।
৪। কোরআনের আয়াতের রেফারেন্স অনেক জায়গায় দেয়া হয়নি।
Bangla Islamic Book Review And PDF Link বুক রিভিউ
বইয়ের নামঃ খুশু খুযু
লেখকঃ ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ
অনুবাদকঃ মাসউদুর রহমান
প্রকাশনীঃ সমকালীন প্রকাশন
প্রথম প্রকাশঃ জুন ২০১৮
কলেবরঃ ৮৬ পাতা
মুদ্রিত মূল্যঃ ১২৫ টাক
.
ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহর সুন্দর সুন্দর উক্তি-প্রবচন পড়েই উনার ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম সেই ২০১৪ সাল থেকে। নাফস আর ক্বালব নিয়ে অনবদ্য রচনাবলীর জন্য তাকে ডাকা হত শাইখুল ক্বালব ( The Doctor of Heart) নামে। ‘খুশু খুযু’ বইটি মূলত তার লেখা বিখ্যাত রিসালাহ ‘আসারারুস সালাহ’ এর বাংলায়ন।
.
প্রচ্ছদঃ প্রথমেই নজর কাঁড়ে বইয়ের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ। বর্তমানে অনেক বইয়েরই সুন্দর প্রচ্ছদ হচ্ছে, তবে এ প্রচ্ছদটি আমার কাছে একেবারে আলাদা মনে হয়েছে। দেখলেই পড়তে ইচ্ছা হয়- এমন।
.
বইটি যেভাবে পড়া উচিতঃ মূল গ্রন্থের ভূমিকা টানতে গিয়ে অনুবাদকের লেখা শুরুর দিকের কিছু কথা সম্পূর্ণ বই পড়ার সময় অনুভব করেছি। অনুবাদকের মত তাই আমিও বলবোঃ বইটি একবার পড়ে রেখে দেয়ার মত বই নয়। বারবার পড়ে অনুশীলন করে বইয়ের শিক্ষাগুলো আয়ত্ত করতে পারলেই আমরা বইটি থেকে উপকার লাভ করতে পারবো।
.
শুরুর কথা- মূল বইয়ের আগে ইবনুল কাইয়্যিমের পরিচিতি সংক্ষেপে দেয়া হয়েছে। তার ইলমি যোগ্যতা নিয়ে আমি কিছু বলবো না, শুধু এটুকু ছাড়া যে- তিনি ইবনু তাইমিয়্যাহর অন্যতম সেরা ছাত্র ছিলেন। ইবনু তাইমিয়্যাহর অধীনে দীর্ঘ ১৭ বছর অধ্যায়ন করার বিরল সৌভাগ্য লাভ করেন। ইবনুল কাইয়্যিমের ছাত্রদের মধ্যে ইবনু কাসির রাহিমাহুল্লাহ ও ইবনু রজব হাম্বলি রাহিমাহুল্লাহর নাম আপনারা শুনে থাকবেন।
.
তার সম্পর্কে ইবনু কাসির লিখেন, “আমাদের যুগে আমি তার মতো আবিদ গোটা বিশ্বে দ্বিতীয় আর কাউকে দেখিনি। তার সালাত ছিল দেখার মতো। রুকি সিজদা হতো প্রলম্বিত। কখনো সালাত এত দীর্ঘায়িত করতেন যে, সাথিরা অভিযোগ করত। তবুও তিনি তা থেকে ফেরেননি। আমৃত্যু এভাবেই সালাত আদায় করে গেছেন।”
.
আপনার মনে কি প্রশ্ন জাগে না যে কীভাবে তিনি সালাতে এত মধুরতা অনুভব করতেন? আমার জেগেছিল। তার উত্তরই পেয়েছি বক্ষ্যমান এ বইয়ের পরতে পরতে।
সম্পূর্ণ বইটিই অপরুপ সাহিত্যগুণে গুণান্বিত। অনুবাদও হয়েছে চমৎকার। তাই বইটি পড়ে তৃপ্তি বোধ করেছি। লেখক হৃদয় নিঙড়ানো ভালোবাসা আর আবেগ-অনুভূতি ঢেলে দিয়ে সালাতের মধুরতার যে বিবরণ দিয়েছেন তা যেকোন পাঠককেই আকর্ষণ করতে বাধ্য।
.
সালাতের অনিন্দ্যসুন্দর বিবরণীঃ প্রশান্তহৃদয়ের অধিকারী ইবনুল কাইয়্যিম বইয়ের শুরুতেই সালাতকে এত সুন্দর সব জিনিসের সাথে তুলনা করেছেন যে, তার কিছু বিবরণ তুলে দেয়ার লোভ সামলাতে পারছিনা। তিনি সালাতকে এভাবে ভাবতে পেরেছেন বলেই হয়ত তাঁর আলোকিত অন্তর কালামুল্লাহর জ্ঞান লাভে এত প্রশস্ত হতে পেরেছিল।
.
সালাত প্রশান্তির আবাসস্থল, আত্মার তৃপ্তি, বাগান এবং আনন্দের নির্যাস। সালাত পরীক্ষা ও মানদণ্ড। এ সালাত আল্লাহর তরফ থেকে উপহারও বটে। সালাত অনুগ্রহ, রহমত। আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়ার মাধ্যম।
.
সালাতের স্বাদ অমিয়। সালাত দস্তরখান। এ দস্তরখানে ইবাদাতের অমৃত স্বাদ পাওয়া যায়, রোজ, ৫ বার। সালাত নূর, অন্তরের শক্তি। রিযিক প্রশস্ততার কারণ।
.
খরাক্রান্ত আমাদের শুষ্ক অন্তরকে উর্বরা বানাতে সালাতের মুষলধারে বৃষ্টির কোন বিকল্প নেই। অন্তর তো শুকিয়ে যায় যখন- ১। আল্লাহর ভালোবাসা থাকেনা; ২। আল্লাহকে অন্তর চিনে না; ৩। আল্লাহর যিকর করে না; ৪।আল্লাহর কাছে দুয়া করে না; এবং, ৫। যখন অন্তরে তাওহীদ অনুপস্থিত থাকে।
নাফস বাঁধা দেয় আর অন্তর পানিশূন্য তো হয় সালাতে খুশু খুযুর অভাবেই। তাই এর দ্বারাই অন্তরের সঞ্জীবনী শক্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।
.
দেহের অঙ্গসমূহের ব্যাবহারের উপরে ভিত্তি করে মানবজাতি ৩ ভাগে বিভক্ত।
১। প্রথম প্রকার -যারা অঙ্গকে শুধু সে কাজেই লাগায় যে কাজের জন্য তা বানানো হয়েছে। নিঃসন্দেহে সালাত এমন ইবাদাত যার সাহায্যে দেহের প্রতিটি অঙ্গও তার উপর নির্ধারিত ইবাদাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে। এমন লোক আল্লাহর সাথে ব্যবসা করেন। অধিক মুনাফায় স্বীয় জান-মাল বিক্রি করে দেন জান্নাতের বিনিময়ে।
.
২। এরা অঙ্গকে এমন কাজে ব্যবহার করে যে জন্য তা সৃষ্টি হয় নি। এদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত। তারা না পাবে আখিরাতে উত্তম পাথেয়, না হাসিল হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।
.
৩। এরা অলস। এরা তো ২য় প্রকারের চেয়েও হতভাগা। না দ্বীন পায়, না দুনিয়া। মানুষকে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেয়াই হয়েছে কাজ, ইবাদাত, অনুসরণ ও আনুগত্যের জন্য; ফেলে রাখার জন্য নয়। এদেরকে তো আল্লাহ ঘৃণা করেন। যে আখিরাত নষ্ট করে দুনিয়ার লোভে সে তো ক্ষতিগ্রস্থই। কিন্তু যে হতভাগা উভয়টিই নষ্ট করে সে কেমন দুর্ভাগা?
.
এ তিন প্রকারের ব্যাখ্যায় জমিনে সেচ করে ফসল উৎপাদনের অসাধারণ তিনটি উপমা দেয়া হয়েছে যা বাহুল্যের ভয়ে আমি তুলে ধরছিনা।
.
সালাতের মাধ্যমে কথার ইবাদাত, কর্মের ইবাদাত, শোনার ইবাদাত, নাড়াচাড়াই ইবাদাত, চুপ থাকার ইবাদাত – এধরনের বহুমুখী ইবাদাত অর্জিত হয়ে যায়। যারা সালাত পড়েনা তারা কত্ত বঞ্চিত!
.
সালাতের রহস্যঃ রাজাধিরাজ, জগতসমূহের অধিপতি আল্লাহর দিকে মনোযোগী হওয়া। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা, তাঁর সাথে একান্তে কথা বলা; তাঁর ভালোবাসা, দয়া ও ঘনিষ্টতা উপভোগ করাই হচ্ছে সালাতের রহস্য।
.
ওযুর অপ্রকাশ্য দিকঃ ওযু করলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বাহ্যিক নাপাকি থেকে পরিশুদ্ধ হয়। এটি ওযুর প্রকাশ্য দিক। আর অপ্রকাশ্য দিক হল তা অন্তরকে গুনাহ ও অন্যায় কাজসমূহের অপবিত্রতা থেকে তাওবার মাধ্যমে পবিত্র করে। ওযু শেষের দুয়া পড়ার মাধ্যমে আমরা ১। কালিমা দ্বারা শিরক থেকে, এবং ২। তাওবা দ্বারা গুনাহ থেকে মুক্তি পাই। এটি ওযুর গোপন দিক।
.
মাসজিদ সালাতের পূর্ণতাঃ বান্দা সালাতের মধ্যবর্তী সময় গুনাহতে লিপ্ত হয়ে যায়, অবাধ্য হয়ে যায়। বহু শাখাবিশিষ্ট এক ইবাদাত সালাত। তাই আবার যখন সালাতের সময় হয় সে আল্লাহর ঘর মাসজিদে প্রবেশ করে। অবাধ্যতা রূপ নেয় তখন আনুগত্যে। পলাতক ভৃত্য যেন মালিকের কাছে ফিরে আসে। মালিকও তখন দয়া ও করুণা দ্বারা তাকে গ্রহণ করে নেন।
.
যেভাবে সালাতের শুরুতেই মনোযোগ আনবেনঃ বান্দা সালাতে যখন দাঁড়াবে তখন তাঁর দেহ কিবলামুখী আর অন্তর আল্লাহমুখী করে নিবে। আল্লাহর সামনে দয়াপ্রার্থী দাসের মতো বিনয়ী ভাবে দাঁড়াবে- হাত ছেড়ে রাখবে, মাথা ঝুঁকিয়ে রাখবে, অন্তর থেকে অন্য সব চিন্তা ঝেটিয়ে বিদায় করে নিবে।
.
যখন আল্লাহু আকবার বলবে তখন অন্তরে আল্লাহর বড়ত্বের স্বীকৃতি দিবে। যখন সে বুঝতে পারবে সে সালাতে দুনিয়াবি যেসব জিনিস চিন্তা করে সেসব চেয়ে আল্লাহ বড় এবং অধিক মনোযোগের হক্বদার; তখন তার হৃদয় থেকে অহংকার খসে যাবে এবং সে গাইরুল্লাহর প্রতি মনোযোগী হবে না। তার জিহ্বার সাথে অন্তরও তাকবীর আদায় করবে।
.
অতঃপর বান্দা সানা পড়ে আল্লাহর শান অনুযায়ী তাঁর প্রশংসা করে উদাসীনদের দল থেকে বেরিয়ে যাবে। বাদশার দরবারে প্রবেশ করার পর যে সাদর সম্ভাষণ জানাতে হয় তা হল সানা।
.
সালাতের মাধ্যমে বান্দা এমন নূর অর্জন করে যার দ্বারা সে কুরআন গভীরভাবে বুঝতে পারে। শাইতান চায় বান্দাকে এ সাফল্য ও সুধা থেকে দূরে রাখতে। তাই তার অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়, সালাত থেকে ফিরাতে চায়। যদি তা না পারে তো, সালাতের খুশু নষ্ট করতে চায়। অপ্রয়োজনীয় জিনিস মনে করিয়ে দেয়।
.
আ’ঊযুবিল্লাহ পড়ার দ্বারা তাই সালাতের শুরুতেই বান্দা আল্লাহর কাছে শাইতান থেকে আশ্রয় কামনা করবে। আল্লাহ তো শাইতানের কুমন্ত্রণা ও বান্দার অক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। তাইতো তিনি আঊযুবিল্লাহ পড়ে আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যেন বলা হচ্ছে, ‘তোমার শক্তি নেই এই শত্রুর সাথে লড়ার। তুমি আমাকে ডাকো, আমার সহায়তা গ্রহণ করো। আমিই তোমাকে তার নাগপাশ থেকে বাঁচিয়ে রাখবো।
.
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ বলতেন, ‘যখন পালের কোন কুকুর তোমাকে দেখে আক্রমণের চেষ্টায় ঘেউ ঘেউ করে, তখন তার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়োনা; বরং রাখালকে ডাকবে। তিনিই তোমাকে এই কুকুরের আক্রমণ থেকে বাঁচাবেন।’
.
বিচরণ করুন কালামুল্লাহর মনোরম বাগানে- এই মুহূর্তে আপনার মনোযোগ পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর কালাম শুনতে প্রস্তুত। অন্তরকে পরিভ্রমণ করার কালামুল্লাহর বাগানে। কুরআনে বর্ণিত আশ্চর্যময় দৃশ্যগুলো অন্তরের চোখ দিয়ে অবলোকন করুন। যখন তিলাওয়াত করছেন তখন আপনি আল্লাহর সামনে একান্তে কথা বলছেন। আদবের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। এহেন মুহূর্তে গাইরুল্লাহর কথা স্মরণে আনা বেয়াদবী, যা আল্লাহর ক্রোধকে ত্বরান্বিত করে। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন।
.
ফাতিহা- আল্লাহ ও বান্দার কথপোকথনঃ বান্দা যখন ফাতিহা পড়ে আল্লাহ প্রতি আয়াতের জবাব দেন। তাই আপনি থেমে থেমে ফাতিহা পড়বেন এবং অন্তর থেকে প্রতি আয়াতে আল্লাহর উত্তরের দিকে মনোনিবেশ করবেন।
.
সালাতের প্রতিটি ইবাদাতই স্বতন্ত্র, প্রত্যেকটিতেই আলাদা ‘মজা’ রয়েছে। সূরা ফাতিহার প্রত্যেক আয়াতের স্বাদও আলাদা, অনন্য।
.
‘আলহামদুলিল্লাহ
.
সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন, তাঁর প্রশংসা করুন। প্রিয় জিনিস যদি নাও পান তবু বিপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হামদ করুন। যদি ক্ষতির সম্মুখীন হোন তবুও প্রশংসা করুন, কারণ আপনি হয়ত জানেন না কোনটা আপনার জন্য ভাল আর কোনটা খারাপ। আপনার রব হয়ত বিপদের মাধ্যমে আপনার পাপ মোচন করে দিচ্ছেন।
.
‘রাব্বুল আলামীন’ বলে এ ঘোষণা দিবেন যে সকল জগতের একমাত্র রব, রিযিকদাতা, প্রতিপালক, আশ্রয়দাতা ও নিয়ন্ত্রণকারী এক ও একমাত্র আল্লাহ।
.
তেমনিভাবে ‘আর রাহমানুর রাহীম’ বলে রাব্বের রহমত ও করুণা অনুধাবন করবেন। দোয়া, যিকির ও অনুনয় বিনয়ের মাধ্যমে তাঁর কাছে রহমত ও হিদায়াত চাইবেন।
.
আর যখন ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দীন’ বলবেন, তখন নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করবেন। বিচার দিবসের দিন নিজের হীনতা ও বশ্যতার কথা মাথায় রেখে আগেই নিজেকে সঁপে দিবেন রাব্বের করুণার চাদরে, পাপ থেকে বিরত রাখার অঙ্গীকার করবেন।
.
এভাবে ফাতিহার প্রত্যেক আয়াত তিলাওয়াতের পর আল্লাহ জবাব দান করেন। উপরের তিন আয়াতের স্তুতিবাক্যের পর বান্দা যখন বলে ‘ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন’; তখন আদতে সে তাওহীদেরই সাক্ষ্য পুনর্বার প্রদান করে। বাক্যের প্রথম অংশে শুধু আল্লাহর ইবাদাতের কথা বলে, আর শেষ অংশে ইবাদাতের পর আল্লাহর সাহায্য কামনা করে যাতে তিনি তাঁকে সরলপথ প্রদর্শন করেন।
.
‘ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাক্বীম’ বলে বান্দা হেদায়েত চায়। হেদায়েত দরকার- ক) সত্যকে চেনার জন্য খ) সত্য পথে চলার রাস্তা চেনার জন্য গ) সত্য পথে চলার তাউফিকের জন্য ঘ) হকের পথে মানুষকে ডাকার জন্য এবং, ঙ) মৃত্যু পর্যন্ত সত্য পথে অটল থাকার জন্য। এ পাঁচটি বিষয়ের কমতি থাকলে হেদায়েতও ত্রুটিপূর্ণ।
.
দ্বীনের সঠিক বুঝ, পূর্ণাঙ্গ বুঝ পাওয়া; ভ্রান্ত আকীদা থেকে বের হয়ে আসা এবং হিদায়াতের পথে আমল করা ও অবিচল থাকার জন্যেও হেদায়েত দরকার। এ হেদায়েত মরণের আগে পর্যন্ত সবার দরকার। যে হেদায়েতপ্রাপ্ত তারও দরকার যাতে সে এ পথে টিকে থাকতে পারে।
.
হেদায়েত প্রাপ্তির দিক থেকে মানুষ তিন প্রকার। ক) মুনইম- যারা হেদায়েতপ্রাপ্ত খ) দল্লুন যারা সঠিক পথ চেনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করনি বিধায় তাদেরকে হেদায়েতই দেয়া হয় নি গ) মাগদ্বুব – যারা সত্য চিনেও অস্বীকার করায় অভিশপ্ত হয়ে গেছে।
.
রুকু-সিজদাও ইবাদাতঃ রুকু-সিজদার সময় বান্দা নিজের তুচ্ছতা, নগণ্যতা প্রকাশ করবে। রুকুতে তিন ধরনের খুশু রয়েছেঃ ক) অন্তরের খুশু যা আসে মনোযোগের দ্বারা খ) অঙ্গের খুশু যা আসে বিনীতভাবে শরীর ঝুকানোর দ্বারা গ) মুখের খুশু- যা তাসবীহ ও যিকির দ্বারা আসে। রুকুতে যে যত বেশি তাসবীহ পাঠ করবে, সে তত বিনয়ী হবে, আল্লাহর ভয় ততই জাগ্রত হবে।
.
কিয়ামের সময় বান্দা আবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়। রাব্বের প্রশংসা করে। এটি স্বতন্ত্র ইবাদাত, এর আলাদা স্বাদ রয়েছে।
.
অন্তরও সিজদাহ করে। এই সিজদায় অন্তরের অহমিকা মিটে যায়। বিনয় প্রকাশ পায়। সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর ও ধ্যান অন্তরে জারি থাকে। বান্দা যদি এভাবে খুশু খুযুর সাথে সিজদাহ করতো, তবে এক সিজদাহই যথেষ্ট হত। সে সিজদাহর মজা পেত, কিয়ামত পর্যন্ত মাথাই তুলতে চাইতো না।
.
সালাতের সর্বোত্তম রুকন সিজদা আর শ্রেষ্ঠ যিকির তিলাওয়াত। তিলাওয়াত দিয়ে শুরু, সিজদাহ দিয়ে শেষ। এই তো সালাত।
.
সালাতের জন্য সিজদা তেমনই, হাজ্জের জন্য তাওয়াফ যেমন। দ্বিতীয় সিজদা আত্মার খোরাক। একবার সিজদাহ দিয়ে হয়ত মন ভরল না, আছে দ্বিতীয় সিজদাহর সুযোগ। ঠিক যেমন এক লোকমা খাবার বা এক ঢোক পানি খাওয়ার পর আরেক দফা খাওয়া হলে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় আত্মতৃপ্তি মিলে। এটি অনেকটা কাপড় ধোয়ার মতো। এক ধোয়ার পর আবার ধুলে কাপড় যেমন পরিষ্কার হয়, সিজদায়ও তেমন অন্তর পরিচ্ছন্ন হয়।
.
জলসাঃ দুই সিজদাহর মাঝে জলসায় বসে ক্ষমা, হিদায়াত, রিযিক ও নিরাপত্তা চাইবে। জলসায় বসার আদব হল দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর মত হাঁটু গেড়ে বসবে, অনুনয় বিনয় করবে যেন বাদশাহ মাফ করে দেন। এর মধ্যে যে দুয়া পড়া হয় তাতে ৫টি জিনিস চাওয়া হয়। এ পাঁচটি জিনিসে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রভূত কল্যাণ ঢেলে দেয়া হয়েছে।
.
ক) রিযিকঃ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ বয়ে আনে। শরীর, অন্তর ও আত্মার রিযিক আছে যা আল্লাহই যোগান।
খ) আফিয়াত বা নিরাপত্তা;
গ) হিদায়াত বা সঠিক পথের দিশা;
ঘ) মাগফিরাত বা পাপ মার্জনা;
ঙ) রাহমাত- উপরের চারটি জিনিসই এতে শামিল হয়ে যায়।
.
তাশাহহুদ- তাশাহহুদে বান্দা সকল পবিত্রতা ও ইবাদাত আল্লাহর দিকেই ন্যস্ত করে। সকল নবী, ফেরেশতা, সাহাবা, সালাফ ও নেককারদের সালাম জানায়। এবং কালিমায়ে শাহাদাতাইনের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে সালাত সমাপ্ত করে। কত সুন্দর এক ইবাদাত!
.
আত্তাহিয়্যাতুতে
.
আযানের সুন্নত- বইটি পড়ে নতুন যেসব জিনিস শিখেছি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল আযানের সুন্নত। আযান শুনলে ক)আযানের জবাব দেয়া খ) আযান শেষের দোয়ার ব্যাপারে আগেই জানতাম। নতুন জানলাম যে, আরো রয়েছে গ) দরুদ পড়া ঘ) ‘রদ্বীতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনান ওয়া বিমুহাম্মাদাই নাবিয়্যান’ –দুয়া পড়া। এবং, ঙ) শেষে দুয়া করা।
.
মনোযোগ বাড়ানোর উপায়ঃ দ্বিতীয় অধ্যায়ে লেখক প্রথম অধ্যায়ের সার নির্যাস থেকে সালাতে মনোযোগ কীভাবে বাড়ানো যায় সেব্যাপারে রেখাপাত করেছেন। সালাতের প্রতিটি কর্মে মনোযোগ বাড়ানোর উপায় বাতলে দিয়েছেন। সালাতের সর্বক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যে আল্লাহর সাথেই কথা বলছেন, রাব্বে কারীমের স্মরণ, মুহাব্বাত ও দয়ার সাগরে সাঁতার কাটছেন। এমন স্বাদ পেলে সালাত শেষ হয়ে গেলে বান্দা মর্মবেদনা অনুভব করবে। একারণেই পাপাচারে নিমজ্জিত ব্যাক্তি তার মৃত আত্মা দ্বারা সালাতের মজা অনুভব করতে পারেনা।
.
সালাতের উপকারিতাঃ প্রত্যেক আমলের লক্ষ্য থাকে। যাকাতের উপকারিতা হলো সম্পদের পরিশুদ্ধি। সিয়ামের উপকারিতা হলো নাফসের তাযকিয়া। হাজ্জ্বের উপকারিতা হলো ক্ষমা ও পাপ মার্জনা লাভ। জিহাদের উপকারিতা হলো জীবনের বিনিময়ে জান্নাত লাভ। আর সালাত? সালাতের উপকারিতা হলো আল্লাহর দিকে মনোযোগী হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর মনোযোগ লাভে সচেস্ট হওয়া।
.
এজন্যই নাবী ﷺ বলেছেন, সালাতের মধ্যে তাঁর চোখের শীতলতা অর্জিত হয়। তিনি ‘ফী’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন যা সালাতে থাকা অবস্থায় বুঝায়, সালাতের দ্বারা বুঝায় না। এভাবে ক্লান্তির পর সালাতের দ্বারা নবীজি শান্তি পেতেন। সালাতের দ্বারা তিনি দুনিয়াবি কষ্ট ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতেন।
.
খুশু খুযুবিহীন সালাত হলো শাস্তি। প্রবৃত্তির খাহেশাত, পাপের উত্তেজনা, আল্লাহর অবাধ্যতা আর নাফসের অলসতা হল এমন সব পর্দা যা বান্দাকে খুশু খুযুর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে বাঁধা প্রদান করে। সে চক্ষুলজ্জার ভয়ে সালাত তো আদায় করে, কিন্তু সালাতে প্রাণ থাকেনা। যেন সর্বদা সালাতে সে ছটফট করতে থাকে।
.
পক্ষান্তরে, খুশু খুযুওয়ালা সালাত হলো অন্তরের প্রশান্তি। নাফস ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সুখ সালাতেই নিহিত। বান্দা মনিবের ঘরে প্রবেশ করে ও সাক্ষাৎ লাভে অন্তর সিক্ত করে। আর মনিবও তাঁকে এত উপঢৌকন প্রদান করেন যে সে তৃপ্ত হয়। সে ঐ বাড়ি থেকে বের হতে চায় না, সালাত প্রলম্বিত করে। সালাত শেষ করতে তার কষ্ট হয়।
.
সালাত ও মিউজিকঃ শেষের অধ্যায়গুলোতে সালাতের সাথে মিউজিকের পার্থক্য নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। কীভাবে একটির প্রতি ভালোবাসা যত তীব্র হবে অপরটির প্রতি ভালোবাসা তত মিইয়ে যাবে তারই স্বরুপ তুলে ধরা হয়েছে। গান শুনলে সালাতের স্বাদ ও কুরআনের মজা উপলব্ধি করা যায় না। আল্লাহর কসম, গানের প্রতি অনুরাগ আর কুরআনের প্রতি ভালোবাসা এক অন্তরে থাকতে পারে না। সাহাবীগণ কুরআনের মাঝেই ঈমানের মিষ্টতা পেতেন, ইসলামি গানে নয়।
.
লেখক তো আল্লাহর প্রশংসা সম্বলিত গান শোনারও নিন্দা করেছেন। সব গানেরই সূক্ষ্ম দিক রয়েছে। তা হল গান শেষ হলে অন্তরে শূন্যতা অনুভব হয়, অস্থিরতা আসে। লেখক ইসলামী গানবাজনাকে খারাপ পাত্রে মধু খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। যদি পবিত্র পাত্রে অমিয় সুধা পান করতে চান তো শুধু কুরআন পড়ুন ও শুনুন।
.
অন্তর তো তিন প্রকার। ১। সুস্থ ২। অসুস্থ ৩। পাক-নাপাক মিশ্রিত। তাই আমরা যেন এমন কাজ থেকেও বেঁচে থাকি যা হারাম নয়, কিন্তু হারামের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। আর আল্লাহই হেদায়েতের মালিক।
.
উপসংহারঃ এই ছিল সম্পূর্ণ বইয়ের মুতালাআ। আমি নিজের ভাষায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে লিখেছি, সংক্ষেপ করেছি। তাই ভুল কিছু উঠে আসলে সে দায়ভার আমার। আপনারা মূল বই পড়বেন। অনুবাদ খুবই সুন্দর, বানান বিভ্রম নেই বললেই চলে। দামও খুব একটা বেশি নয়। পৃষ্ঠাসজ্জা ও কোয়ালিটি উন্নতমানের। সম্পাদনা ভালো হয়েছে। বিশেষ করে ইখতিলাফি মাসয়ালার ক্ষেত্রে ফুটনোটে শহীহ আব্দুল্লাহ আজ্জামের তাফসীরে সূরা তাওবা থেকে ইমাম আহমাদের উক্তির রেফারেন্স দেয়ায় ভালো লেগেছে। আপনারা বইটি পড়বেন এবং অনুশীলন করবেন। রিভিউ পড়ে উপকৃত হলে আমার জন্য দুয়া করবেন। আমীন।
.